এই মর্মে সবার প্রথমে সামাজিক সাম্যের দিকেও তাকাতে হবে বলে মনে করছে বিদেশমন্ত্রক। বিশ্বায়নের সুবিধা সব সময়েই একটি অসাম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলে। কিন্তু সর্বত্র পরিস্থিতি একরকমের নয়, বিশ্বের নানা অংশের মতো দেশেও রয়েছে সমাজের নানা অংশে ভেদাভেদ। সেগুলোকে মেটাতে পারলে তবেই একটি নজিরবিহীন সমাজ গঠন করা যাবে। এই দিক থেকে দেশের কূটনীতি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। কেন না, অতিমারী আমাদের অস্তিত্বের শিকড়ে টান দিয়েছে। আমরা বুঝতে পেরেছি যে কত ভঙ্গুর এবং অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের জীবন! ফলে, সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা তখনই একমাত্র সহজ হবে, যখন আমরা একটি রোগমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারব!
advertisement
যদি রোগমুক্ত সমাজ গড়ার দিকেই তাকাতে হয়, তাহলে বলতে হবে যে এই লক্ষ্যে দেশ অনেকটাই এগিয়ে যেতে পেরেছে। এই দিক থেকে বিশ্বদরবারেও নজির গড়তে পেরেছে ভারত। এই দেশ শুধুই পৃথিবীর বৃহত্তম করোনা টিকাকরণ সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত করেনি, পাশাপাশি অন্য দেশের রোগমুক্তির কবচ হিসেবেও কাজ করতে পেরেছে। ভুটান, মলদ্বীপ, বাংলাদেশ, নেপাল, মরিশাস, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলিতেও পাঠানো হয়েছে মেড ইন ইন্ডিয়া ভ্যাকসিন। যা এই দেশগুলির সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করেছে। এটাই প্রমাণ করে দেয় যে কোভিডোত্তর পর্বে এই দিক থেকেই দেশের কূটনীতি নিয়ে কাজ করতে হবে।
এছাড়া যদি বিশ্বের অন্য সমস্যাগুলোর দিকে তাকানো যায়, তাহলেও দেখা যাবে যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে সমর্থ হয়েছে ভারত। প্যারিস চুক্তির কেন্দ্রীয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে এই দেশ জলবায়ু সমস্যা নিয়েও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে। দেশের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিশিল্পে জোর দেওয়া হয়েছে, জোর দেওয়া হয়েছে জলের সুসংহত ব্যবহারে। এক দিকে যেমন দেশের বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছে দেশের জীববৈচিত্র্য। সৌরশক্তির ব্যবহারের দিক থেকেও দেশের পরিকাঠামোগত ক্ষেত্র মজবুত করে তোলা হয়েছে।
এর ঠিক পরেই উঠে আসে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলার কথা। এই দিক থেকেও ভারত কড়া হাতে সীমান্ত রক্ষা করতে সক্ষম। তবে সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে এবং FATF, G20-র মতো ফোরামে যোগদানকারী দেশ হিসেবে এই দিকে সুরক্ষা যত মজবুত করতে পারবে ভারত, ততই তার কূটনৈতিক অবস্থান বিশ্বদরবারে সুদৃঢ় হয়ে উঠবে। আবার ডিজিটাল ক্ষেত্রের দিকে যদি তাকানো যায়, তাহলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম হোক বা স্টাডি ফ্রম হোম, দেশ কিন্তু বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি মসৃণভাবে এগিয়ে যেতে পেরেছে। পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে যে ২০২০ সালে অনেক বেশি ভারতীয় দেশে ফিরে এসেছেন। এই জনশক্তি দেশকে নিঃসন্দেহে এক জোরালো কূটনৈতিক অবস্থান দেবে বিশ্বে।
তাই প্রাক-কোভিড পর্যায়ে ফিরে আসতে হলে এই সব দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নজর দিতে হবে নিরাপদ ভ্রমণশিল্পে, স্বাস্থ্যখাতে, অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যে এবং অবশ্যই ডিজিটাল পরিষেবায়। সারা বিশ্ব এখন এই পথেই হাঁটছে। সেই দিক থেকে দেখলে এগিয়ে রয়েছে ভারত, শুধু যথাযথ বিন্যাসেই কোভিডোত্তর পর্যায়ে দেশ বিশ্বে গর্ব করার মতো কূটনৈতিক অবস্থান গড়তে পারবে।
(মতামত দেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে এস জয়শঙ্করের)