ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজি (ডব্লিউআইএইচজি)-র ডিরেক্টর ড. কালাচাঁদ সাইন বলেন, বিগত ৪৭ বছরে ভিলাঙ্গনা হ্রদটি ০.৩৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, ভাগীরথী ক্যাচমেন্ট এলাকায় অবস্থিত এই হিমবাহ হ্রদটি দ্রুত হারে প্রসারিত হয়েই চলেছে। আর বিশ্বের ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার জেরে এটা হ্রদের নিম্ন অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনছে।
advertisement
ড. সাইন নিউজ18-এর কাছে বলেন যে, “এই হ্রদটি অনেক উঁচুতে অবস্থিত। আর নীচের দিকে এর ঢাল অত্যন্ত বড় – ২৫ ডিগ্রিরও বেশি। আমরা বিষয়টার উপর নজর রেখে চলেছি। এমনকী হ্রদ সম্প্রসারণের বিষয়টা আমরা উত্তরাখণ্ড রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। ২০১৩ সালে কেদারনাথ বিপর্যয়ের সময় যে চোরাবাড়ি গ্লেসিয়ার লেক ফেটে যাওয়ার মতো ঘটনা যদি ঘটেও যায়, তাহলে আমরা নীচের অংশে বসবাসকারী মানুষদের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হব।”
হিমবাহের বিশাল চাদর গলে গিয়ে যখন সেই জল জমতে শুরু করে, তখনই তৈরি হতে থাকে হিমবাহী হ্রদ। আসলে সারা বিশ্বের তাপমাত্রাই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাও গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। যার ফলস্বরূপ বহু হিমবাহই দ্রুত হারে গলতে শুরু করছে। আর এর ফলে এই ধরনের একাধিক হিমবাহ তৈরি হচ্ছে। তা স্থিতিশীলতার পর্যায়ে না থাকলে বিশাল জলরাশির ধারা বইতে শুরু করবে, সেই সঙ্গে বিধ্বংসী বন্যার কবলে চলে যাবে।
বৃষ্টিপাত এবং তুষারপাতের ধরন বদলে যাচ্ছে, ফলে এই ধরনের হ্রদগুলিও আয়তনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, উত্তরাখণ্ড হিমালয়ে এই ধরনের হাজার হাজার হিমবাহ হ্রদ তৈরি হয়েছে। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট দ্বারা আয়োজিত অনিল আগরওয়াল ডায়লগ ২০২৪-এর অনুষ্ঠানে ড. সাইন সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন যে, “উত্তরাখণ্ডে আমরা এই ধরনের ১৩টি হিমবাহ হ্রদ শনাক্ত করেছি। যেগুলি মূলত মোরাইন-বাঁধে থাকা হ্রদ। এর মধ্যে ১০টি হিমবাহের উপর ক্রমাগত নজরদারি করা হচ্ছে। যা নিম্নধারার বাসিন্দাদের জন্য বিপদ বয়ে আনছে। ঠিক একই রকম ঘটনা আমরা দেখেছি ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয়ে কিংবা ২০২১ সালে ঋষিগঙ্গা-ধৌলিগঙ্গা হিমবাহী তুষারঝড়ের সময়। এমনকী খুব সাম্প্রতিক অতীতে সিকিমের দক্ষিণ লোনক হ্রদের ঘটনাও দেখেছি।”
দেরাদুনের প্রতিষ্ঠানের একদল গ্লেসিওলজিস্ট হিমালয়ের হিমবাহগুলির পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন। যা শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত করছে না, এর পাশাপাশি ভবিষ্যতের বিপদেরও আভাস দিচ্ছে। ইন্ডিয়ান হিমালয়ান রিজিয়ন (আইএইচআর)-এ রয়েছে প্রায় ৯৫৭৫টি হিমবাহ। তবে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই) তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে শুধুমাত্র ৯৮০টি হিমবাহ অবস্থান করছে উত্তরাখণ্ড রাজ্যেই। এর মধ্যে সবথেকে সংবেদনশীল হিমবাহগুলির উপরেও রাখা হয়েছে নজর।