গাজিয়াবাদ: সকলের চোখে ধুলো দিয়ে দিনের পর দিন ধরে চলছিল ভুয়ো দূতাবাস। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে এক ভাড়া করা বাংলোতে এই দূতাবাস চলছিল বলে খোঁজ পায় উত্তরপ্রদেশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। এরপরই অভিযান চালিয়ে ‘ওয়েস্টার্কটিকা’ নামে আন্টার্কটিকা মহাদেশের এক ক্ষুদ্র দেশের ভুয়ো দূতাবাস চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত হর্ষবর্ধন জৈনকে।
advertisement
আর সেই ঘটনার তদন্তে পুলিশ জানতে পারল, প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রতারণার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে এই ভুয়ো দূতাবাস কাণ্ডের। ১০ বছরে ১৬২টি বিদেশ ভ্রমণ এবং একাধিক বিদেশী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট মিলেছে হর্ষবর্ধনের। গাজিয়াবাদে আট বছর ধরে একটি ভুয়ো দূতাবাস চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া হর্ষবর্ধন জৈনের বিরুদ্ধে তদন্তে চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
জৈনকে গত সপ্তাহে গাজিয়াবাদের ভাড়া করা দুই তলা বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যা তিনি দূতাবাস বলে দাবি করেছিলেন। উত্তর প্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) এর তদন্তে জানা গিয়েছে, জৈন একটি চাকরি প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং হাওয়ালা রুটের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।
পুলিশ আধিকারিকদের সূত্রে খবর, গাজিয়াবাদের কবিনগর এলাকায় একটি বাংলো ভাড়া নিয়ে সেটিকে ওয়েস্টার্কটিকার দূতাবাসে রূপান্তরিত করেছিলেন হর্ষবর্ধন। এমনকি তিনি সাবোরগা, পুলভিয়া, লোডোনিয়ার মতো অন্যান্য স্বঘোষিত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের কূটনীতিক বলে মিথ্যা দাবিও করেছিলেন। নিজের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভুয়ো পরিচয়কে বৈধতা দেওয়ার জন্য জাল কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট লাগানো বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করতেন। সেই বিলাসবহুল গাড়িগুলি ওই ভুয়ো দূতাবাসের বাইরেই রাখা থাকত।
এরপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই অভিযান চালিয়ে হর্ষবর্ধনকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তল্লাশি চলাকালীন কূটনৈতিক নম্বরপ্লেটযুক্ত চারটি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১২টি কূটনৈতিক পাসপোর্ট, বিদেশ মন্ত্রকের স্ট্যাম্প সহ জাল নথি, দু’টি জাল প্যানকার্ড, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার ৩৪টি জাল রবার স্ট্যাম্প, দুটি জাল প্রেস কার্ড, নগদ ৪৪.৭ লক্ষ টাকা, একাধিক দেশের বৈদেশিক মুদ্রা এবং আরও ১৮টি জাল কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি মূলত বিদেশে ব্যবসায়িক চুক্তি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতারণা করতেন। তিনি ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে একটি হাওয়ালা নেটওয়ার্কও পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, অতীতে বিতর্কিত স্বঘোষিত ধর্মগুরু চন্দ্রস্বামী এবং আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির সঙ্গেও সন্দেহভাজন যোগ ছিল তাঁর।