সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন এলাকার ৩০টি নতুন নামকরণ করে চতুর্থ তালিকা প্রকাশ করেছে চিন। এরপরেই তীব্র নিন্দায় মুখর হন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী। এমনিতে চিনের এই নামকরণ সংক্রান্ত দাবি বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছে ভারত। জানানো হয়েছে যে, ওই রাজ্য এই দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই কোনওরকম নামকরণ করা হলেও এই বাস্তব কখনওই বদলে যাবে না।
advertisement
আরও পড়ুনঃ বড় খবর! এবার জিআই ট্যাগ মাতাবাড়ির প্যাঁড়া! রাজ্যের স্বীকৃতি অর্জন খুশি মুখ্যমন্ত্রী
সাউথ গুজরাত চেম্বার অফ কমার্স-এ জয়শঙ্কর বলেন, “আজ যদি আমি আপনার বাড়ির নাম বদলে দিই, তাহলে কি সেই বাড়িটা আমার হয়ে যাবে? ঠিক সেরকম ভাবেই অরুণাচল প্রদেশ আগেও ভারতের রাজ্য ছিল, এখনও রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সেটাই থাকবে। নাম পরিবর্তন করেও কোনও কিছু হবে না।” এরপর ভারতীয় অঞ্চলগুলির নতুন করে নামকরণ করছে চিন, এই সংক্রান্ত প্রশ্নও করা হয়েছিল জয়শঙ্করকে। তার জবাবে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান যে, “আমাদের সেনাবাহিনী সেখানে (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা) নিযুক্ত রয়েছে।”
গত সপ্তাহে চাইনিজ মিনিস্ট্রি অফ সিভিল অ্যাফেয়ার্স-এর তরফে জাঙ্গান-এর স্ট্যান্ডার্ডাইজড ভৌগলিক নামের চতুর্থ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। আসলে অরুণাচল প্রদেশকে ‘জাঙ্গান’ নাম দিয়েছে চিন। মূলত এই জাঙ্গানকে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ হিসেবে দাবি করে আসছে বেজিং। চিন পরিচালিত গ্লোবাল টাইমস-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ওই এলাকার আরও ৩০টি নাম দিয়েছে চিনা সরকার।
চিনা সিভিল অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রি ২০১৭ সালে জাঙ্গানের ৬টি জায়গার স্ট্যান্ডার্ডাইজড নামের প্রথম তালিকা প্রকাশ্যে এনেছিল। এরপর ২০২১ সালে ১৫টি জায়গার দ্বিতীয় নামের তালিকা সামনে আনা হয়েছিল। তারপর ২০২৩ সালে আবার ১১টি জায়গার আর একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল চিনা মন্ত্রক।
অরুণাচল প্রদেশ সফরে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সময় থেকে কূটনৈতিক প্রতিবাদ শুরু করে বেজিং। এর পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশের উপর দাবি পুনরুদ্ধার করার জন্য চিন সম্প্রতি বিবৃতিও জারি করেছে। আর সেই দাবির উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য একের পর এক বিবৃতি জারি করেছে চিনা সরকার। গত ২৩ মার্চ অরুণাচল প্রদেশের উপর চিনার বারংবার দাবি খারিজ করে দিয়েছেন জয়শঙ্কর। এমনকী বিষয়টাকে হাস্যকর বলে দাবি করে তিনি জানান যে, এই রাজ্য স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের অংশ।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর (এনইউএস)-এর ইনস্টিটিউট অফ সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (আইএসএএস)-এ নিজের বক্তব্য রাখছিলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। সেই সময় তাঁকে অরুণাচল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন বিদেশমন্ত্রী বলেন, “এটা কোনও নতুন বিষয় নয়। অর্থাৎ চিন বরাবরই এই দাবি করে আসছে। এখন তা আরও বেড়েছে। তবে সেই দাবি শুরু থেকেই হাস্যকর ছিল আর আজও সেটাই রয়েছে।” তিনি আরও বলেন যে, “সুতরাং, আমি মনে করি আমরা এই বিষয়ে খুব স্পষ্ট, খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলাম। আর আমার মনে হয়, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, এই বিষয়টা সীমান্ত সংক্রান্ত আলোচনার অংশ। যা বর্তমানে চলছে।”
আবার অরুণাচল প্রদেশকে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মার্কিন বিবৃতিতে বিরক্ত হয়েছিল বেজিং। গত ৯ মার্চ স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছিলেন যে, “অরুণাচল প্রদেশকে ভারতীয় অঞ্চলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে সামরিক বা বেসামরিক ভাবে অনুপ্রবেশ বা দখলদারিত্বের মাধ্যমে আঞ্চলিক দাবিকে এগিয়ে নেওয়ার যে কোনও একতরফা প্রচেষ্টার আমরা দৃঢ় বিরোধিতা করি।”