চিত্তরঞ্জন পার্কের বাসিন্দা অর্পিতা কর জানাচ্ছিলেন, "ছেলেমেয়েরা দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করতে মরিয়া ওরা। তাই স্বভাবতই স্কুল খোলার খবরে ওরা খুশি। কিন্তু আমাদের মনে চিন্তা রয়েছে। তবে, আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবো। কোভিড বিধি ভালো করে শিখিয়ে তারপরে স্কুলে পাঠাবো।" অর্পিতার মেয়ে ইরা মাদার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। চোখেমুখে খুশি নিয়ে ইরা বলছে, "স্কুলে অবশ্যই যাবো। অতি মারি নিয়ে সাবধান থাকবো। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করব। যত্রতত্র হাত দেব না।"
advertisement
এতদিন পরে আবার স্কুলের ঘন্টা বাজার খবরে খুদে পড়ুয়াদের কেউ বেজায় খুশি। কেউ আবার খানিক সতর্ক। অভিবাবকদের অনেকেই পড়েছেন দোটানায়। মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ। যেন খাঁচায় বন্দী ছেলে মেয়েগুলো এবার একটু মুক্তি পাবে। কিন্তু, ওই যে করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ ! যদি সংক্রমণ পাশাপাশি ওদের শরীরে!
এখনও যে প্রতিষেধক পায়নি শিশুরা। কালকাজি এলাকার বাসিন্দা মনিকা গুপ্তার দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে খুশি এবং ছেলে কুশ স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। ওদের মা-বাবাও মনে মনে আতঙ্কিত। নিউজ এইট্টিন বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনিকা বলেছেন, "স্কুল যখন খুলছে বাচ্চাদের পাঠাতেই হবে। কিন্তু আমাদের ভয় হচ্ছে। কারণ, বাচ্চাদের প্রতিষেধক এখনও আসেনি। করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে।"
আরও পড়ুন-রোজি পিকচার দেখে ভুল করেছিলাম, আর কেউ করবেন না, তৃণমূলে যোগ দিয়েই নয়া অবতারে রাজীব
যদিও এদেশে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ কোভিড প্রতিষেধক নেওয়ার পর এখনই স্কুল খোলার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শ্বাসরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পার্থপ্রতিম বোস নিউজ এইট্টিন বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, "বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বলা যেতে পারে, ভারতবর্ষে বেশিরভাগ মানুষের শরীরে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ। অনলাইনে পড়াশোনা চললেও স্কুলের পরিবেশ না পেয়ে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ছে। গত কয়েক মাস ধরে যত রোগী দেখেছি তাদের কারোরই অবস্থা ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছয়নি। বাড়িতে চিকিৎসা করি তারা সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাই স্কুল খুলার এটাই সময়। আর দেরি নয়।"
এদিকে, স্কুল খোলার আগে দিল্লি ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি প্রিন্সিপাল, শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে।সাধারণ কোভিড-বিধি অর্থাৎ মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা রাখা ছাড়া আর কী কী আছে সরকারি সেই নির্দেশিকায়?
বলা হয়েছে-
১) স্কুলের প্রিন্সিপাল এবং শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হবে যে, অভিভাবকদের অনুমতি নিয়েই ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসবে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে পাঠাতে কোনও অভিভাবককে জোর করা চলবে না। হাইব্রিড মরে চলবে শিক্ষাব্যবস্থা অর্থাৎ অফলাইন পড়াশোনার পাশাপাশি চলবে অনলাইন ক্লাসও।
২) এক দিনে ৫০ শতাংশের বেশি ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে ডাকা চলবে না।
৩) ক্লাসরুম এবং ল্যাবরেটরিতে কত জন পড়ুয়াকে একসঙ্গে ডাকা যাবে সেই অনুযায়ী টাইম টেবিল তৈরি করতে হবে।
৪) যে সমস্ত স্কুল এবং কলেজের ডাবল সিফ্টের বন্দোবস্ত হয়েছে সেখানে প্রাত্যহিক ক্লাসের ছুটি এবং সান্ধ্য ক্লাসের শুরুর মধ্যে ন্যূনতম এক ঘন্টা ব্যবধান রাখতে হবে।
আরও পড়ুন-ত্রিপুরা ভোটের রণভেরী অভিষেকের গলায়, মমতার যাত্রার দিনক্ষণ স্থির হয়ে গেল আজই
৫) কন্টেইনমেন্ট জোনে বসবাস করছেন এমন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে পারবেন না।
৬) স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সমস্ত শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীরা করোনা প্রতিষেধক এর দুটি ডোজ নিয়েছেন।৭) স্কুলের ভেতরে ছাত্র-ছাত্রীরা একে অপরের সঙ্গে খাবার অথবা বইপত্র দেওয়া-নেওয়া করতে পারবে না।
৮) যে সমস্ত স্কুলে প্রতিষেধক কেন্দ্র/ রেশন বিতরণ/ কোভিড নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্র চলছে জেলা প্রশাসনকে সেই এলাকাগুলি আলাদা করে ঘিরে দিতে হবে যাতে ছাত্রছাত্রীরা কোনভাবেই বহিরাগতদের সংস্পর্শে না আসে।
৯) স্কুল চলাকালীন কোন শিক্ষক অথবা পড়ুয়ার করোনা উপসর্গ দেখা দিলে কোয়ারেন্টাইন কক্ষে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য প্রতিটি স্কুলে একটি কোয়ারেন্টাইন কক্ষ তৈরি রাখতে হবে।
১০) শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়মিত কর্তব্য হবে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো-মন্দ খোঁজ নেওয়া। পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার জন্য পড়ুয়াদের মানসিক সাহস যোগাতে হবে।