তদন্তে দিল্লি পুলিশ জানতে পারে, লিভ-ইন সঙ্গীকে খুনের পর ঠান্ডা মাথায় প্রমাণ লোপাট করেছিলেন আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। কীভাবে দেহ হাপিস করা যাবে? সেই ছক কষেছিল আমেরিকার ক্রাইম শো 'ডেক্সটার' দেখে। আমেরিকার এই জনপ্রিয় সিরিজ ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত চলেছিল। সিরিজের নায়ক ডেক্সটার মর্গান পুলিশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ছিল, 'দ্বৈত' জীবনযাপন করত! অবসর সময়ে তার কাজ ছিল খুন করে বেড়ানো।
advertisement
তদন্তে উঠে আসে, আফতাব একজন প্রশীক্ষণপ্রাপ্ত শেফ! কীভাবে ছুড়ি চালিয়ে হাড়-মাংস কাটতে হয়, সে বিষয়ে দক্ষ। খুব সহজেই শ্রদ্ধার শরীরটা ৩৫টি টুকরোয় কেটে ফেলে আফতাব। যদিও সেও ছুড়িটি এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এখানেই শেষ নয়! শ্রদ্ধার দেহের টুকরো রাখার জন খুনের আগামিদিন একটি নতুন ফ্রিজ কেনে আফতাব। ফ্রিজটি সবথেকে বড় স্টোরেজ ক্যাপাসিটির। তারমধ্যেই থরে থরে সাজিয়ে রাখে প্রেমিকার দেহের কাটা অংশ। পরের ১৮ দিন ধরে রাতের অন্ধকারে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেহের টুকরো ফেলে আসতেন আফতাব। যাতে কেউ দেখতে না পায়, তাই Newরোজ রাত দুটোয় একটি পলিথিনের প্লাস্টিকে করে দেহাংশ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হত আফতাব। সূত্রের খবর, রোজ রাতে ফ্রিজ খুলে প্রেমিকার কাটা মাথা দেখত সে।
দিল্লি পুলিশ শনিবার গ্রেফতার করেছে আফতাবকে, তার বিরুদ্ধে রুজু হয়েছে খুনের মামলা। পুলিশি জেরায় আফতাব জানিয়েছে, শ্রদ্ধা এবং সে মুম্বইয়ে একই কল-সেন্টারে কাজ করত। কর্মক্ষেত্রেই তাদের ভাললাগার শুরু। সেখান থেকে প্রেম এবং একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিধর্মী প্রেম মেনে নিতে চায়নি শ্রদ্ধার পরিবার। তাই তারা পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দিল্লির মেহেরৌলিতে একসঙ্গে থাকতে শুরু করে।
আফতাবের জানিয়েছে ,লিভ-ইন শুরু করার পর থেকেই শ্রদ্ধা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করে। এই নিয়ে তাদের দু-জনের মধ্যে মাঝেমধ্যেই তুমুল অশান্তি হত। তেমনই বিয়ে করা নিয়ে ১৮ মে দু'জনের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয় এবং তা হাতাহাতিতে গড়ায়। সেই সময়েই রাগের বশে শ্রদ্ধাকে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে আফতাব। দিল্লি পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এবং কার্যত টোপ পেলে আফতাবকে গ্রেফতার করে। জেরায় আফতাব খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।
সেপ্টেম্বরে শ্রদ্ধার এক বন্ধু তাঁর পরিবারকে জানান যে, আগের আড়াই মাস ধরে কোনও খোঁজ মেলেনি তরুণীর। এমনকি তাঁর মোবাইলও সুইচড অফ। এর পরেই শ্রদ্ধার পরিবার সমাজমাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখেন। দেখা যায়, আগের আড়াই মাস কোনও পোস্ট দেননি তিনি। নভেম্বরে শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ মদন ওয়ালকার মুম্বই পুলিশের দ্বারস্থ হন। আফতাবের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের কথাও জানান। এর পরেই মুম্বই পুলিশ শ্রদ্ধার ফোনের তথ্য খতিয়ে জানতে পারেন, দিল্লিতে গিয়েছিলেন তিনি। তদন্তভার হাতে নেয় দিল্লি পুলিশ। শনিবার ধরা পড়েন আফতাব।