স্বভাবতই মন খারাপ পুজোর উদ্যোক্তাদের।উদ্যোক্তা সোমপ্রকাশ মিত্র জানাচ্ছেন, "১৯১০ সালে দিল্লির রোশনপুরা কালী মন্দিরে প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। এর কয়েক বছরেই ক্রমে পুজোর বহর বাড়তে থাকায় এই পুজো উঠে যায় ফতেপুরী মসজিদ সংলগ্ন একটি ধর্মশালায়। সুসময়ে উত্তর ভারত জুড়ে দাঙ্গার জেরে ১৯৪৮ সালে আবারও স্থানান্তরিত হতে হয় দিল্লি দুর্গাপূজা সমিতিকে। পুজো শুরু হয় কাশ্মীরি গেট সংলগ্ন দিল্লি পলিটেকনিকে।১৯৫৭ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত পুজো হয়েছে উইমেন্স পলিটেকনিকে।" ১৯৬৮ সালে এই পুজো স্থানান্তরিত হয় সিভিল লাইন্সে শ্যামনাথ মার্গের বেঙ্গলি সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল ময়দানে। পুজোর কমিটির নাম বদলে হয় "দিল্লি দুর্গাপূজা চ্যারিটেবল এন্ড কালচারাল সমিতি।"
advertisement
এই ১১২ বছরে যমুনা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। পুজোর মূল উদ্যোক্তাদের তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রজন্মের হাতে পুজোর ভার।প্রবীন উদ্যোক্তা অরুণ রায়ের কথায়, "এই পুজোর কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। নিয়ম মেনে নিষ্ঠাভরে পুজো হয় এখানে। প্রতিমা বিসর্জন হয় মহিষে টানা গাড়িতে। এই পুজোর ভোগ খেতে হাজির হন কমপক্ষে ৪ হাজার মানুষ। বিশাল মন্ডপের পরিবর্তে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগমে এই পুজোর মূল লক্ষ্য ছিল। পুজোর কটা দিন দিল্লির বুকে প্রবাসী বাঙালিরা মেতে উঠতেন মাতৃ আরাধনায়। যার অন্যতম অঙ্গ ছিল নিষ্ঠা ভরে, নির্ঘণ্ট ও মেনে দেবীর আরাধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রকমারি বাঙালি খাবারের স্টল। কিন্তু, এবার সেসব কিছুই হচ্ছে না।গত বছর থেকে সে সব কেড়ে নিয়েছে করোনা মহামারী।"
পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবিন ঘোষ বলছিলেন, "অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার গতবছর নমো নমো করে পুজোর অনুমোদন দিয়েছিল। এবারও পুজোর অনুমোদন মিলেছে। কিন্তু, একেবারে পুজোর মুখে এসে অনুমোদন মেলায় মূর্তি গড়া, মন্ডপ তৈরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, খাবার-দাবারের সম্ভার, কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। অগত্যা ঘটপুজো করেই নিয়ম রক্ষা করতে হচ্ছে দিল্লির এই প্রাচীন পুজোয়।"
সাধারণত দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিপর্ব নিতে হয় কমপক্ষে দেড় মাস আগে। সেইমতো পুজোর আয়োজকরা সরকারি নির্দেশ কার অপেক্ষায় ছিলেন। ১০ অক্টোবর মহাপঞ্চমী। দিল্লি বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ করণা বিধি মেনে, বেশ কিছু নিয়ম পুজোর অনুমোদন দিয়েছে গত ৩০ সেপ্টেম্বর।
সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে - যে জায়গায় পুজো করা হবে, সেখানে দূরত্ব বিধি মেনে আসন সংখ্যার নিরিখে দর্শকের সংখ্যা আগে থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। কোনও রকম খাবারের আয়োজন করা চলবে না। দেবী দর্শনে মন্ডপের প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ আলাদা হতে হবে। একশো মাস্কের ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। এই নির্দেশিকা ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কিনা নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভিডিও ফুটেজ পাঠাতে হবে কর্তৃপক্ষের কাছে। সরকারি প্রতিনিধিরা নজরদারি চালাবেন।
শেষ মুহূর্তে এসে এত কড়াকড়ি মেনে পুজো করা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। তাই মন খারাপ নিয়ে নমো নমো করে ঘটপুজো।
RAJIB CHAKRABORTY