সন্ধে ছ’টা কিংবা সাড়ে ছ’টা৷ হঠাৎ একটা বীভৎস শব্দ শুনেছিল আশেপাশের মানুষ৷ কী হয়েছে? কী হতে পারে? ভাবতে ভাবতেই ছুটে এসেছিল তারা৷ ততক্ষণে লক্ষ-কোটি গল্পে ঠাসা, কত নতুন আশার আলোয় ভরা একটা বিরাট ট্রেন দুমড়ে মুচড়ে পড়ে রয়েছে দেশলাইবাক্সের মতো৷ দুর্ঘটনাস্থলে চাপ চাপ রক্ত৷ ছড়িয়ে রয়েছে খাবার, খেলনা৷ যাদের খাবার তাদের পেট ভরেছিল তখন? কিংবা খেলছিল যেই শিশুটি, সে কোথায়? সাদা কাপড়ে মোড়া মৃতদেহগুলোর পাশে বেজে চলেছে পরিজনদের ফোন৷ আশেপাশে শুধু দীর্ঘনিশ্বাস৷ অন্ধকারের বুক চিরে শুধুই কান্না, বুকফাটা চিৎকার৷ তারই মাঝে একটি কবিতার খাতা। নষ্ট হয়নি৷ এ কবিতা কার? তিনি কোথায়? জীবিত, মৃত, আহত? কিছুই জানে না কেউ৷ নাম নেই, শুধু একগুচ্ছ অনুভূতি আছে৷ লেখা আছে ‘কী করে তোকে ভুলবে এই মন, তুই যে আমার জীবন…’ অথছ তাঁর জীবনদীপ এখনও জ্বলছে কিনা, কেউ জানে না৷
advertisement
আরও পড়ুন: করমণ্ডলের ভয়াবহ দুর্ঘটনার জেরে বাতিল কোন কোন ট্রেন ? দেখে নিন
ভেঙে যাওয়া খেলনা গাড়ির মতো ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে ছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরা। ট্রেনের চালকের ভুল নাকি রেল লাইন, পয়েন্ট বা সিগন্যালের ত্রুটির জেরে এই দুর্ঘটনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷
কোনও যাত্রীর হাত-পা, দেহের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়েছিল সেই কবিতার খাতা। লাশের মাঝে দেখা যাচ্ছিল কয়েকটা অক্ষর৷ আর যারা দেখেছিল, তারা চেয়েছিল রক্তের মাঝে অক্ষত থাকা কবিতার খাতার মতো বেঁচে যাক একটা জীবন৷ আমাদের জানা নেই কোনও অচ্ছেদ্য টান বা ‘যেতে নাহি দিব’-র মতো কোনও আকুল ক্রন্দনের ক্ষমতা আছে কিনা একটা প্রাণকে বাঁচিয়ে দেওয়ার৷ তবু চাওয়া এটুকুই, ‘মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক’৷
তথ্য- রঞ্জন চন্দ