এই আচরণবিধি কার্যত একটি নিয়মবিধি, যা নির্বাচনের সময় সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীকে মেনে চলতেই হবে। এর লক্ষ্য হল ভোট প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখা।
বিহারে নির্বাচনের ঘোষণা হয়েছে ৬ অক্টোবর, অর্থাৎ এই দিন থেকেই রাজ্যে আচরণবিধি (code of conduct) কার্যকর হয়েছে এবং তা নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে — আনুমানিক প্রায় ৪০ দিন।
advertisement
ডেলিভারি বয়ের অশালীন আচরণ ক্যামেরাবন্দি! তরুণীর শরীর স্পর্শের অভিযোগ! ভাইরাল ভিডিওয় চাঞ্চল্য
নির্বাচনী আচরণবিধিতে কী কী নিষিদ্ধ করা হয়েছে
নির্বাচন চলাকালীন এমন কোনও কাজ করা যাবে না যা ভোটারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে—
কোনও রকম উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা নিষিদ্ধ।
নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া যাবে না।
সরকারি কৃতিত্বের প্রচার করা হোর্ডিং বা ব্যানার লাগানো যাবে না।
মন্ত্রী বা সরকারি আধিকারিকদের সরকারি সফর নির্বাচনী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
সরকারি গাড়িতে সাইরেন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
সরকারি ভবন বা সম্পত্তিতে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতাদের ছবি প্রদর্শন করা যাবে না।
সরকারের সাফল্য তুলে ধরা বিজ্ঞাপন ছাপা বা সম্প্রচার করা যাবে না (প্রিন্ট, টিভি বা ডিজিটাল মিডিয়ায়)।
কোনও প্রকার ঘুষ, উপঢৌকন বা প্রলোভন দেওয়া বা নেওয়া যাবে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার সময় বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে — একটি পোস্টও আইন লঙ্ঘনের আওতায় আসতে পারে।
সাধারণ নাগরিকরাও এই নিয়মের আওতায়
শুধু রাজনৈতিক নেতা বা প্রার্থী নন, সাধারণ নাগরিকও আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন।
যদি কেউ কোনও রাজনৈতিক নেতার হয়ে প্রচার চালানোর সময় এই নিয়ম ভঙ্গ করেন, নির্বাচন কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁকে আটকও করা হতে পারে।
জনপ্রিয়তাবর্ধক ঘোষণা নয়
নির্বাচনের ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধিরা কোনও নতুন ঘোষণা, প্রকল্প উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবেন না।
সরকারি যানবাহন, ভবন বা সম্পদ নির্বাচনী কাজে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এছাড়াও, সরকারি অর্থে কোনও অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না, যা কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের উপকারে আসে।
পর্যবেক্ষণ ও অনুমতি প্রক্রিয়া
নির্বাচনের সময়ে প্রতিটি এলাকায় নির্বাচন কমিশন বিশেষ পর্যবেক্ষক (observer) নিয়োগ করে। তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেন যে, কোনও দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কি না।
র্যালি, মিছিল বা সভা করতে হলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হয়। পাশাপাশি নিকটবর্তী থানাকে আগেভাগে জানাতে হয় সভার স্থান, সময় ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে।
⚠️ কী কী লঙ্ঘন করলে শাস্তি হতে পারে
জাতি, ধর্ম বা ভাষাভিত্তিক বিভেদ উস্কে দেওয়া বা ঘৃণা ছড়ানো যাবে না।
ভোটারদের ঘুষ বা ভয় দেখিয়ে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত মন্তব্য বা চরিত্রহননমূলক বক্তব্য দিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেয়াল লিখন, ব্যানার বা পোস্টার দেওয়ার আগে সম্পত্তির মালিকের অনুমতি নিতে হবে।
ভোটের আগের দিন কোনও জনসভা করা নিষিদ্ধ এবং ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্র থেকে ১০০ মিটার ব্যাসার্ধে প্রচার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে।
পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন কোনও সরকারি নিয়োগ বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যাবে না।
নির্বাচনের সময় ভোটারদের মধ্যে মদ বিতরণ বা অন্য প্রলোভন দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বিহারে নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি। এই বিধি লঙ্ঘন করলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে পারেন প্রার্থী, দল এমনকি সাধারণ নাগরিকও। নির্বাচন কমিশনের মূল বার্তা একটাই —
“স্বচ্ছ, ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা।”