তিনি তিরুপতির মঠের পেড্ডা জিয়ানগর মঠে কাজ করতেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল প্রতিদিন মন্দিরে জমা পড়া দানবাক্সের টাকার হিসাব রাখা ও গণনা করা। ১৯৯০-এর দশকে তিনি এই মঠে চাকরি শুরু করেন। প্রতিদিন এই মন্দিরে গড়ে চার থেকে ছয় কোটি টাকা পর্যন্ত দান জমা পড়ে, যার হিসাব রাখার দায়িত্বে ছিলেন রবি কুমার ও তাঁর সহকর্মীরা। প্রথমদিকে তাঁর কাজে কোনও অসঙ্গতি চোখে পড়েনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সন্দেহ বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালে এক নিরাপত্তারক্ষী সিসিটিভি ফুটেজে তাঁর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করেন।
advertisement
উৎসবের রাত আতসবাজি, সেলফিতে মজে…ট্রেনের হর্ন শুনতে পেল না কেউ! পিষে গেল ৬১ প্রাণ!
তিরুপতি মন্দিরে বড় চুরি, দানবাক্স থেকে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেন কেরানি
এরপর ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে আটক করেন এবং তল্লাশির সময় তাঁর শরীরে লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায় ন’টি ১০০ ডলারের নোট। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় বিস্তারিত তদন্ত। তদন্তে প্রকাশ পায়, তিনি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মন্দিরের দানবাক্স থেকে সামান্য সামান্য অর্থ সরিয়ে রাখতেন এবং পরে সেই অর্থ নিজের কাছে রেখে দিতেন। প্রাথমিকভাবে কেউ বুঝতে পারেনি, কারণ তিনি প্রতিদিন অল্প পরিমাণে টাকা সরিয়ে রাখতেন যাতে বড় অঙ্কের ঘাটতি চোখে না পড়ে।
ধীরে ধীরে সেই টাকার অঙ্ক বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে তিনি সেই অর্থ দিয়ে জমি, ফ্ল্যাট, ও অন্যান্য সম্পত্তি কেনা শুরু করেন। তদন্তে উঠে এসেছে, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ বর্তমানে ১০০ কোটিরও বেশি। পুলিশ জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন শহরে একাধিক ফ্ল্যাট, ব্যবসা এবং বিনিয়োগ করেছেন। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই মন্দির কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন হতবাক হয়ে যায়, কারণ একজন সাধারণ কেরানির পক্ষে এত বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা কার্যত অকল্পনীয় বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্দিরের এক সাধারণ কেরানি তিনি, নাম সি. ভি. রবি কুমার। পুলিশ ইতিমধ্যেই রবি কুমারকে গ্রেফতার করেছে এবং তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি ও আর্থিক লেনদেনের সমস্ত নথি জব্দ করেছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। তিরুপতি তিরুমলা দেবস্থানম (TTD) কর্তৃপক্ষ এক জরুরি বৈঠকে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নজরদারি আরও জোরদার করা হবে।
মন্দিরের এক আধিকারিক বলেছেন, “আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে চলেছি। ভক্তদের অনুরোধ করব, এই ঘটনায় যেন কেউ নিরুৎসাহিত না হন। মন্দিরের অনুদান ভবিষ্যতেও সঠিকভাবে ব্যয় করা হবে।”
এই ঘটনার ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে থাকা দুর্নীতির বিষয়টি আবারও সামনে এল। একজন সাধারণ কর্মচারী কীভাবে দশকের পর দশক ধরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতার ওপর।
এই ঘটনা শুধু মন্দিরের সুনামকেই আঘাত করেনি, বরং ভক্তদের মনেও গভীর আঘাত দিয়েছে। বহু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দাবি তুলেছেন, দেশের ধর্মীয় স্থানগুলিতে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।