ওড়িশা: স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে ছাত্রছাত্রীরা কলেজে যায় পড়াশোনা করতে৷ অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা হন তাঁদের পথপ্রদর্শক৷ গুরুজন৷ সেই অধ্যাপকের হাতেই যখন লাঞ্ছনার শিকার হন ছাত্রী, তখন তাঁর মনের কী অবস্থা হয়! আবার এখানেই শেষ হয়নি ঘটনা৷ যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে সে যখন প্রতিবাদ জানাতে যায়, লাভ হয় না সেখানেও৷ নিজের অভিযোগের ওজন বোঝাতে শেষমেষ কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সে, অকালে মরে যায়….এত কিছুর পরে অবশেষে প্রতিবাদের আগুনে জ্বলে ওঠে গোটা রাজ্যে৷ এখন ঠিক যেমনটা ঘটছে ওড়িশায়৷ বালাসোরের ফকির মোহন (অটোনোমাস) কলেজের প্রফেসরের বিরুদ্ধে মাসের পর মাস ধরে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল এক ছাত্রীকে৷ যে ছাত্রীর মৃত্যুতে এখন জ্বলছে ওড়িশা৷
advertisement
বালাসোরে ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় একের পর এক সামনে আসছে ভয়ঙ্কর সব তথ্য৷ জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত প্রফেসর সমীরা কুমার সাহু ‘ফেভার’ চেয়েছিল ওই ছাত্রীর কাছ থেকে৷ বলেছিল, ‘‘বাচ্চা তো নও৷ নিশ্চই বুঝতে পারছ কী চাইছি৷’’
ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটির এক সদস্য মিনতি শেঠি জানিয়েছেন, গত ১ জুলাই সেই কলেজের ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটির কাছে জমা দেওয়া ওই ছাত্রীর অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছিলেন, তাঁর কাছে যৌন সুবিধা দাবি করেছিলেন তাঁর বিভাগের প্রধান শিক্ষক এবং তিনি তা দেননি বলে, ক্রমাগত তাঁকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকেন৷ গত ৩০ জুন ওই ছাত্রীকে সেমেস্টার পরীক্ষায় বসতে দেননি ওই প্রফেসর৷ সেটাই ছিল ওই ছাত্রীর কাছে কফিনে শেষ পেরেক৷
বালাসোরের ইন্টিগ্রেটেড বি.এড কলেজে ২০ বছর বয়সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তাঁর কলেজের প্রিন্সিপালের ঘরের কাছেই নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন৷ তাঁকে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি৷ ওই ছাত্রী তাঁর ডিপার্টমেন্টের প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে৷ কিন্তু, অভিযোগ, তা নিয়ে পক্ষপাতিত্বমূলক রিপোর্ট তৈরি করে ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটি৷
গোটা ঘটনায় এই ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটির সদস্যদের গ্রেফতারি দাবি করেছেন মৃত ছাত্রীর বাবা৷ তাঁর দাবি, ‘‘আমার মেয়ে মুখ খুলেছিল বলে আজ ওকে চলে যেতে হয়েছে৷ ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটির সদস্যেরা যদি ঠিকঠাক কাজ করত, তাহলে আজ আমার মেয়েটা বেঁচে থাকত৷’’
গত ৩০ জুন দাদাকে সঙ্গে নিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ জমা দিতে গিয়েছিলেন ওই ছাত্রী৷ তখনই নাকি ছাত্রবিক্ষোভের নাম করে পুলিশে খবর দিয়েছিলেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ৷ পরে প্রিন্সিপাল সরকারি ভাবে ওই ছাত্রীর অভিযোগপত্র গ্রহণ করে৷ ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটি সব কিছু দেখে অনাঙ্ক্ষিত আচরণ জন্য বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় অভিযুক্ত প্রফেসরকে৷
অভিযোগ এরপরেও ছাত্রীর উপরে চাপ আসছিল৷ চাপ আসছিল সহপাঠীদের দিক থেকেও৷ গত ১২ জুলাই কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওই ছাত্রী এবং অন্যান্যরা কলেজ গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল৷ হঠাৎ করে তিনি প্রিন্সিপালের রুমের সামনে ছুটে এসে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন৷ ৯০ শতাংশেরও বেশি পুড়ে যাওয়া অবস্থায় তাঁকে ভুবনেশ্বরের এইমস হাসপাতালে ভর্তি করানোহয়। মঙ্গলবার তিনি মারা যান।
ঘটনায় ওই কলেজের প্রিন্সিপাল ও অভিযুক্ত প্রফেসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তবে তা নিয়ে অগ্নিগর্ভ ওড়িশার পরিস্থিতি৷ বুধবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায় নবীন পট্টনায়েকের দল বিজু জনতা দল (বিজেডি)র কর্মীরা৷ বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেসও৷