TRENDING:

জগন্নাথের মাসি কে ? কেনই বা রথের দিন তাঁর বাড়িতে যান ভগবান ?

Last Updated:

শাস্ত্রে রয়েছে, ‘রথস্থ বাম নং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’ ৷ অর্থাৎ রথের উপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথকে দর্শন করলে তাঁর পুনর্জন্ম হয় না ৷ তাই রথের দড়ি টানাকেও পুন্যের কাজ হিসাবে গণ্য করেন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা ৷ আগামী শনিবার রথযাত্রা ৷

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: শাস্ত্রে রয়েছে, ‘রথস্থ বাম নং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’ ৷ অর্থাৎ রথের উপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথকে দর্শন করলে তাঁর পুনর্জন্ম হয় না ৷ তাই রথের দড়ি টানাকেও পুণ্যের কাজ হিসাবে গণ্য করেন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা ৷
advertisement

আগামী শনিবার রথযাত্রা ৷ আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি ৷ রথে চেপে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ, সঙ্গে যাবেন বলরাম আর সুভদ্রা ৷ কিন্তু হঠাৎ মাসির বাড়িই কেন এত পছন্দ ? সেই মাসির নামই বা কি ? কোথায় তাঁর বাড়ি ? জানেন এ সব ?

ঘটনা শুরু করা যাক গোড়া থেকে ৷ বিষ্ণুর পরম ভক্ত ছিলেন কলিঙ্গের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ৷ তিনি গড়ে তুললেন একটি মন্দির, নাম শ্রীক্ষেত্রে। এখন

advertisement

আমরা তাকে চিনি জগন্নাথধাম হিসাবে। কিন্তু মন্দিরে তো বিগ্রহ নেই! রাজসভায় একদিন কেউ একজন বলল নীলমাধবের কথা। ইনি নাকি

বিষ্ণুরই এক রূপ। নীলমাধবকে খুঁজতে লোকলস্কর পাঠালেন রাজা ৷ কিন্তু নীলমাধবকে পাওয়া কী অতই সহজ ? খুঁজে পেলেন না কেউ ৷ সকলেই ফিলে এলেন ৷ শুধু ফিরলেন না বিদ্যাপতি ৷ জঙ্গলে পথ হারালেন তিনি ৷

advertisement

আরও পড়ুন: সোনার কুয়ো থেকে তোলা ১০৮ ঘটি জলে স্নানযাত্রা শুরু পুরীর জগন্নাথদেবের

পুরীর জগন্নাথ মন্দির ৷

তাঁকে উদ্ধার করলেন শবরকন্যা ললিতা ৷ এই ললিতার সঙ্গেই প্রেম হয় ব্রহ্মণতনয় বিদ্যাপতির ৷ ললিতা আবার শবররাজ বিশ্ববসুর কন্যা ৷ ললিতার সঙ্গে বিয়ে হল বিদ্যাপতির ৷ ওই জঙ্গলেই সুখে বাস করতে লাগলেন তাঁরা ৷ হঠাৎই একদিন বিদ্যাপতি লক্ষ্য করলেন শবররাজ প্রতিদিনই সকালে স্নানের পর কোথাও একটা উধাও হয়ে যান ৷ ললিতাকে জিজ্ঞাসা করে তিনি জানতে পারলেন, জঙ্গলের গোপনে নীলমাধবের মূর্তি রয়েছে, সেখানেই যান বিশ্ববসু ৷ নীলমাধবের সন্ধান পেয়ে তো দারুন খুশি হয়ে গেলেন বিদ্যাপতি ৷ শ্বশুরের কাছে গিয়ে নীলমাধবকে দর্শনের আবদার করে বসলেন বিদ্যাপতি ৷ কিন্তু কিছুতেই রাজি হতে চান না শবররাজ ৷ শেষ পর্যন্ত জামাইকে চোখ বেঁধে নিয়ে যেতে রাজি হলেন তিনি ৷ এদিকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন বিদ্যাপতিও ৷ হাতে সরষে নিয়ে সারা রাস্তা ছড়াতে ছড়াতে গেলেন তিনি ৷ নীলমাধবকে দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলেন না বিদ্যাপতি ৷ ভক্তি ভরে পুজো দিলেন নীলমাধবের ৷ আর তখনই আকাশ থেকে দৈববাণী হল, ‘এতদিন আমি দীন-দুঃখীর পূজো নিয়েছি, এবার আমি মহা-উপাচারে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পূজো নিতে চাই।’

advertisement

কিন্তু জামাইয়ের এই আচরণে তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হলেন শবররাজ ৷ নীলমাধবকে হারানোর ভয়ে বন্দী করলেন বিদ্যাপতিকে ৷ পরে অবশ্য ললিতার কান্নায় গলে গেলেন তিনি ৷ বিদ্যাপতিকে মুক্ত করতেই তিনি খবর পাঠিয়ে দিলেন ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে ৷ রাজাও মহানন্দে জঙ্গলে এলেন নীলমাধবকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৷ কিন্তু নীলমাধবকে পাওয়া গেল না ৷

advertisement

আরও পড়ুন:স্নানের পর কম্প দিয়ে জ্বর আসে মায়াপুরের জগন্নাথদেবের !

তখনই দৈববাণী হল, সমুদ্রের জলে ভেসে আসবে যে কাঠ সেই কাষ্ঠখণ্ড থেকেই তৈরি হবে বিগ্রহ ৷ সমুদ্রের জলে কাঠ পাওয়া গেল ৷ কিন্তু হাজার

হাজার হাজার হাতি, ঘোড়া, সেপাইশান্ত্রী, লোকলস্কর দিয়েও সমুদ্র থেকে তোলা গেল না সেই কাঠ। শেষে কাঠের একদিক ধরলেন শবররাজ আর একদিক ব্রাহ্মণপুত্র বিদ্যাপতি। তবে সমুদ্র থেকে উঠে এল সেই কাষ্ঠখণ্ড ৷ এবার শুরু হল মূর্তি গড়ার কাজ ৷

সেখানেও আর এক গল্প ৷ সে কাঠ এমনই শক্ত যে কেউ মূর্তি গড়া তো দূরের কথা কেউ ছেনি-হাতুড়ি ফোটাতেই পারল না সেই কাঠে ৷ তাহলে মূর্তি গড়বে কে ? আবার মাথায় হাত মহারাজের ৷ ইন্দ্রদ্যুম্নের সেই অসহায়তা দেখে দুঃখ হল ভগবানের ৷ শিল্পীর রূপ ধরে স্বয়ং জগন্নাথ এসে দাঁড়ালেন রাজপ্রাসাদের দরজায় ৷ তবে তাঁর একটাই শর্ত ৷ ২১ দিনের আগে কেউ যেন তাঁর কাজ না দেখে ৷

চলছে জগন্নাথের স্নানযাত্রা ৷

কাজ শুরু হল ৷ ইন্দ্রদ্যুম্নের রানি গুন্ডিচা রোজই রুদ্ধ দুয়ারে কান পেতে শোনেন কাঠ কাটার ঠক্ ঠক্ শব্দ। ১৪ দিন পর হঠাৎ একদিন রানি এসে দেখেন দুয়ার বন্ধ ৷ কিন্তু ভিতরে কোনও আওয়াজ নেই ৷ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনও শব্দ না পেয়ে বাধ্য হয়েই দরজা খোলেন তিনি ৷ দেখা যায় বৃদ্ধ কারিগর উধাও ৷ পড়ে আছে তিনটি অসমাপ্ত মূর্তি। তাদের হাত, পা কিছুই গড়া হয় নি। অনুশোচনায় আর দুঃখে ভেঙে পড়েন রাজা-রানি ৷ তখনই স্বপ্ন দিলেন জগন্নাথ ৷ বলেন, এমনটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল ৷ তিনি এই রূপেই পূজিত হতে চান ৷ এরপর থেকে এইভাবেই ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেন জগন্নাথদেব ৷

আরও পড়ুন: ৬২২ বছর পেরিয়ে আজও এই দিনে ২৮ ঘড়া গঙ্গাজল আর দুধে স্নান করেন মাহেশের জগন্নাথ

এবার আসা যাক রথের কথায় ৷ জগন্নাথদেবের প্রধান অনুষ্ঠানই হল রথযাত্রা ৷ এই দিন দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথ ৷ মাসির বাড়ি অর্থাৎ ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুন্ডিচার বাড়ি ৷ সেখান থেকে আবার সাতদিন পর মন্দিরে ফিরে আসেন জগন্নাথ ৷ এটাকেই মাসির বাড়ি যাওয়া হলে ৷ পরপর তিনটি সুসজ্জিত রথে চেপে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে যান জগন্নাথ ৷ এই যাওয়াকে সোজা রথ আর ফিরে আসাকে উল্টো রথ বলে ৷ মনে করা হয়, পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা থেকেই বাংলায় রথযাত্রার সূচনা ৷ চৈতন্য মহাপ্রভু নীলাচল থেকে এই ধারাটি বাংলায় নিয়ে আসেন ৷ চৈতন্যভক্ত বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরীর অনুকরণে রথযাত্রার প্রচলন করেন। এখন বাংলার বহু জায়গাতেই এই রথযাত্রা অত্যন্ত জনপ্রিয় ৷ বাঙালিদের কাছে এখন রথযাত্রার দিনটি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় ৷ অনেক শুভ অনুষ্ঠান হয় এই দিন ৷ এমনকী খুঁটিপুজোর মাধ্যমে দুর্গাপুজোর সূচনাও হয় এই দিনেই ৷

(ছবি: ট্যুইটারের সৌজন্যে)

বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
জগন্নাথের মাসি কে ? কেনই বা রথের দিন তাঁর বাড়িতে যান ভগবান ?