কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী Arun Jaitley যিনি নিজেও একজন আইনজীবী ৷ নিজের ব্লগে বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু মামলা নিয়ে মুখ খুললেন এবার ৷ তিনি লেখেন-
গতকাল আমি বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বিচারপতিদের তরফে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের লেখা ১১৪ পাতার রায়ের রিপোর্ট পড়ে দেখি ৷ রায়ের রিপোর্ট পড়লেই স্পষ্ট বোঝা সম্ভব এর পিছনে কতটা চক্রান্ত ছিল ৷ শুধুমাত্র ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে তা জনসাধারণের কাছে প্রচার করা হয়েছে এখানে ৷
advertisement
কিছু জাতীয় রাজনৈতিক দল, অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন বিচারপতি এবং কিছু সিনিয়র আইনজীবীরা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন ৷ এই মামলায় বিভিন্ন তথ্য এবং বেশ কিছু দলের ভূমিকাগুলি খতিয়ে দেখা উচিৎ ৷ কারণ আমার সন্দেহ, এমন ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে ৷
সোহরাবুদ্দিন মামলায় অমিত শাহের অভিযুক্ত ভূমিকা
সোহরাবুদ্দিন মামলায় কোনও ভূমিকাই নেই অমিত শাহের ৷ রাজ্য পুলিশের সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি একটি এনকাউন্টার করেছিল বলে অভিযোগ ৷ আমি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩-য় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং-কে এই ঘটনার তথ্য দিতে গিয়ে একটি বিস্তারিত চিঠি লিখেছিলাম ৷ এই ঘটনার সঙ্গে অমিত শাহকে যুক্ত করার পিছনে যে দু’জনের প্রধান ভূমিকা ছিল ৷ সেই রামনভাই প্যাটেল এবং দশরথভাই প্যাটেল দু’জনেই জমি দখলকারী হিসেবে পরিচিত ৷ তারাই অমিত শাহের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ দেয় ৷ ওরা দু’জনেই দাবি করে যে ওরা অমিত শাহের অফিসে গিয়েছিল প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন অর্ডার বা PASA আইনে গ্রেফতারের আদেশ যাতে রদ করা যায়, সেই আর্জি নিয়েই ৷ সেসসময় নাকি তাদের কাছ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা চান অমিত শাহ ৷ যে টাকা অজয় প্যাটেল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমেই বিশেষ ভাবে বেশ কয়েকটি কিস্তিতে দেওয়া হয়েছিল ৷ ওই মিটিংয়েই নাকি অমিত শাহ তাদের জানিয়েছিলেন যে সোহরাবুদ্দিনকে মারা কেন প্রয়োজন ৷
‘দ্য ক্যারাভান’ ম্যাগাজিনের ভুয়ো খবর
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী নাগপুরের রবি ভবনে ২০১৪-র ১ ডিসেম্বর বিচারপতি লোয়ার বুকে ব্যাথা ওঠে ৷ ওই সময় দু’জন জেলা বিচারক তাঁর সঙ্গে ছিলেন ৷ তাঁরাই তাঁদের আরও দু’জন সহকর্মীকে ফোন করে ডাকেন ৷ এরপর তাঁরা চার জন মিলেই বিচারপতি লোয়াকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ হাসপাতালে লোয়ার ইসিজি-র পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয় ৷ এরপর ওই হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিচারপতি লোয়াকে কার্ডিওলজি স্পেশ্যালাইজড হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার সময়েই সম্ভবত বিচারপতির লোয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় ৷ এবং তিনি মারা যান ৷ ডাক্তাররা বিচারপতিকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করলেও শেষপর্যন্ত তাঁরা ব্যর্থ হয় ৷
ওঁর কার্ডিয়াক অ্যাটাকের সময় চার বিচারক, দুই হাসপাতালের ডাক্তার এবং মেডিক্যাল স্টাফরাই শুধুমাত্র তাঁর কাছে ছিলেন ৷ হাইকোর্টের চার বিচারক এরপর আরেকটি হাসপাতালে পৌঁছন যেখানে দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও বিচারপতি লোয়ার মত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই হয়েছিল বলে উল্লেখ ছিল ৷ বিচারপতি লোয়ার দেহ এরপর তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷ পরিবারের সদস্যরাও তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন ৷
এই মামলায় জড়িত সমস্ত কিছু বিচার করার পর সুপ্রিম কোর্টও বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু স্বাভাবিক বলেই রায় দিয়েছে ৷ কারণ মৃত্যুর পিছনে কোনও সন্দেহজননক ঘটনা তদন্তে পাওয়া যায়নি ৷ ‘দ্য ক্যারাভান’ ম্যাগাজিন এসংক্রান্ত যে তদন্ত এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তা ‘ফেক নিউজ’-রই উদাহরণ ৷ এই ঘটনার পিছনে কোনও রহস্য নেই ৷ তা সত্ত্বেও জোর করেই বিচারপতি লোয়ার মৃত্যুতে ভুয়ো তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল ৷ যা বড়সড় বিতর্ক তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ছিল ৷
দেশের বেশিরভাগ আদালতে এমন অনেক আইনজীবী রয়েছেন, যারা জনস্বার্থে জড়িত বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা কোর্টে তোলেন এবং তার পিছনেই পড়ে যান ৷ এমনটা করাটাও অবশ্য স্বাভাবিক ৷ কারণ গত কয়েকবছর ধরে জনস্বার্থ মামলার নাম করে অনেক ‘ইনস্টিটিউশন ডিসরাপটার্স’-রা এসেছেন ৷ যারা সংস্থার আখেরে ক্ষতিই করছেন ৷ অনেক সময়েই পুরোপুরি মিথ্যা মামলাও তারা কোর্টে তুলছেন এবং মামলা লড়ছেন ৷ প্রতিপক্ষকে ধমকে রাখা এবং বিচারপতিকে অস্বস্তিতে ফেলাই এদের কাজ ৷ এই কাজে তাদের দু’জন সঙ্গী রয়েছে ৷ এক তো মিডিয়া, যারা তাদের ভরপুর প্রচার দিচ্ছে ৷ এভাবে কিন্তু কংগ্রেসকেও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে কিনারায় সরে যেতে দেখেছি আমি ৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের আইনজীবী বা অন্য কারোর সহায়তায় এমন ‘ইনস্টিটিউশন ডিসরাপ্টর্স’দের সঙ্গে জুড়ে যায় ৷ এভাবে আদালতে ভয় দেখানো, ধমকানোর মামলা-মোকদ্দমা চলতে থাকে ৷ অনেক সময়েই এতে সমস্যায় পড়ে আদালত ৷ এই মামলাতেও এভাবে মিথ্যের আশ্রয়ই নেওয়া হয়েছে ৷
ইমপিচমেন্টকেই হাতিয়ার
সু্প্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তখনই আনা যায়, যখন তিনি নিজের পদে অনুপযুক্ত বা তাঁর আচরণ খারাপ প্রমাণিত হয়েছে ৷ কংগ্রেস এবং তার সহযোগীরা ইমপিচমেন্টকে এখন রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ৷
ইমপিচমেন্টের ব্যবহার কোনও প্রমাণ হয়ে যাওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধেই করা যেতে পারে ৷ এর কমে যে কোনও মামলায় ইমপিচমেন্টের ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর ৷ রাজ্যসভায় ৫০ সদস্যের স্বাক্ষর বা লোকসভায় ১০০ সদস্যের স্বাক্ষর পাওয়া কোনও কঠিন কাজ নয় ৷ এমনটা যে কোনও ছোটখাটো মামলাতেও জোগাড় করা সম্ভব ৷ শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য এর ব্যবহার ভয়ানক ৷ বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু মামলাতেও আদালতের রায়ের পর কংগ্রেসের তরফে পিটিশন দাখিল করা বদলা নেওয়ারই সমতূল্য ৷ এটা একটা বিচাপতিকে ভয় দেখানোর মামলা ৷ আর বাকি বিচারপতিদের জন্য বার্তা, যে আপনি যদি আমাদের সঙ্গে একমত নন, তাহলে বদলার মামলার জন্য ৫০ জন সাংসদই যথেষ্ট ৷ অভিযোগগুলি আগেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও জোর করে কিছু বিষয় টেনে আনা হচ্ছে এই মামলায় ৷