২১ ডিসেম্বর ২০১২! যন্তরমন্তরের সামনে কাতারে কাতারে মানুষ এসে ভিড় করেছিলেন সেদিন। নির্ভয়ার হয়ে প্রতিবাদ করতে। দেশের মেয়েদের হয়ে গর্জে উঠতে। সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল নির্ভয়াকে সুবিচার পাইয়ে দেওয়া ও দেশে নারী নিরাপত্তাকে জোরদার করার আরও তীব্র এক লড়াই। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সেদিন জড়িয়ে পড়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ।
এরপর ২৪ ডিসেম্বর। তারিখটি সবারই মনে থাকবে। কারণ সেদিন রাইসিনা হিলসের উদ্দেশ্যে বিশাল মিছিল পাড়ি দিয়েছিল। সেই প্রতিবাদের আগুন ছিল তীব্র। সেদিন নব্য ভারতীয় নারী আন্দোলনের মুখ প্রথমবারের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল দেশের সামনে। মানুষ দেখেছিল, কীভাবে দিনের পর দিন মুখ বুজে থাকা মহিলারা সরব হচ্ছেন। সেই আন্দোলনের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে রাষ্ট্রপতি ভবনের নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল সবকটি রাস্তা। বন্ধ করা হয়েছিল মেট্রো স্টেশন, ইন্ডিয়া গেটের রাজপথ। সেদিন পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল জনতা। লাঠি চলেছিল, টিয়ার গ্যাসের শেল ফেটেছিল। সব মিলিয়ে এমন তীব্র আন্দোলন, যা দিল্লি সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। সবার একটাই দাবি ছিল, মেয়েদের নিরাপত্তার এমন বেহার দশা কেন হবে? কেন নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসি দিতে দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে না। ওদিকে তখনও বেঁচে আছেন আমাদের মেয়ে নির্ভয়া।
advertisement
তারপরই কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে নির্ভয়ার চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। তারপর আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে কাশ্মীর থেকে কণ্যাকুমারী। আবারও মানুষ সরব হন নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে। শুধু রাজধানী দিল্লিতে নয়, আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে মুম্বই, চেন্নাই, কলকাতাতে। দেশের বাইরেও নারী নিরাপত্তার দাবিতে পথে নামে নানা সংগঠন। নেপাল, বাংলাদেশ সর্বত্র মানুষ পথে নামেন। প্যারিসে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে মিছিল করে যান প্রবাসী ভারতীয়রা। সেখানেও ওঠে নির্ভয়ার জন্য ন্যায় বিচারের দাবি।
এরপর একাধিক ধর্ষণের আইন বদল হয়। নারী অধিকারে আরও নানা সংগঠন একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করে। এককথায় নারী অধিকারের লড়াইকে এক অন্যমাত্রা দিয়েছিল দিল্লির নির্ভয়া আন্দোলন।