এমনই ভাগলপুর জেলার এক যুবক প্রায় ২৭ বছর আগে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য পঞ্জাবে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরিবার তখনও জানত না যে তাদের ছেলে আর কোনোদিন ফিরবে না। সেই যুবকের বৃদ্ধ মা আজও ছেলের ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন, কিন্তু ছেলে আর ফেরেনি। সে বেঁচে আছে কি না, সেটাও জানেন না কেউ…
advertisement
আরও পড়ুন: চরম মর্মান্তিক ঘটনা, পিটিয়ে মারা হল বাঘ! কেটে নেওয়া হল তার চামড়া, কান, দাঁত, মাংস, কোথায় জানুন…
ঘটনাটি ভাগলপুর জেলার কাহলগাঁও ব্লকের মাদারগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা সীতারাম ঝার। তিনি একটি দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছিলেন। ১৯৯৭ সালের দিকে তিনি একটি অটোরিকশা কিনেছিলেন এবং তা চালিয়েই নিজের পরিবারের ভরণপোষণ করতেন। কিন্তু অটোর কিস্তি দিতে না পারায় সেটি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন বেশ খারাপভাবেই কাটে তাঁর।
১৯৯৮ সালের শেষের দিকে তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য পঞ্জাবে চলে যান। সেখান থেকে ১৯৯৯ সালে কোনওভাবে পাকিস্তান সীমান্তে পৌঁছে যান এবং সেখানকার সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইসলামাবাদের একটি জেলে পাঠায়। পরিবার কিছুই জানত না, তারা ধরে নিয়েছিল ছেলে একদিন না একদিন নিশ্চয় ফিরবে।
তিন বছর পর, ২০০২ সালে প্রশাসনিক পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের জন্য যখন বাড়িতে একটি চিঠি আসে, তখনই বিষয়টি পরিবারের সামনে আসে। কিন্তু তারা চাইলেও কিছু করতে পারেননি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর উদ্যোগে পাকিস্তানের জেলে বন্দি ভারতীয়দের মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০৪ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের বন্দিদের অদলবদল হয়, যাতে সীতারাম ঝার নামও ছিল। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের নথিতে তাঁর আঙুলের ছাপও মেলে। কিন্তু তবুও তিনি আর ফিরে আসেননি। গেল কোথায় সীতারাম? আজও সে এক প্রশ্ন।
২০০৮ সালে তাঁর আত্মীয় মুকেশ ঝা বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি লেখেন। এমনকি ইসলামাবাদেও চিঠি পাঠানো হয়। তাঁর মুক্তির রেকর্ড পাওয়া গেলেও, তিনি কোথায় গেলেন বা তাঁর কী হল – তা আজও অজানা।
বৃদ্ধা মা উখা দেবী এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে বারবার চোখে জল চলে আসছিল। তিনি বলেন, “এই বৃদ্ধ বয়সে আমার আর কোনও ভরসা নেই। আমার তিনটা নাতি-নাতনি ছিল, এখন তাদেরও কোনও খোঁজ নেই। আমার পুত্রবধূ দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়েছে। এখন আমি সরকার থেকে যে সামান্য সাহায্য পাই, তাতেই কোনও মতে জীবন চালাই। যদি আমার ছেলে ফিরে আসে, তবে সেটাই হবে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।”