বুধবার ওয়ানাডের ভূমিধসের বিষয়টি নিয়ে সংসদ অধিবেশনে সরব হন কংগ্রেস সহ অন্য বিরোধীরা৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এ বিষয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেন৷ বিবৃতিতে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে অকারণ রাজনৈতিক দলাদলি না করার আর্জি জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
রাজ্যসভায় বিবৃতি দেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, গত সপ্তাহেই প্রবল বৃষ্টিতে ওয়ানাডে সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে কেরল রাজ্য সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে৷ পাঠানো হয়েছিল ৯ দল কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও৷
advertisement
আরও পড়ুন: মৃত বেড়ে ১৪৬, ওয়ানাডে মাটির নীচে চাপা আর কত দেহ? টানা বৃষ্টিতে নতুন বিপদের আশঙ্কা
রাজ্যসভার বক্তৃতায় অমিত শাহ দাবি করেন, কেরলের পিনারাই বিজয়নের সরকারকে সপ্তাহ খানেক আগেই সে রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে ধস নামার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু, তাঁরা সেই সতর্কবার্তায় কর্ণপাত করেননি৷ এমনকি, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পৌঁছনোর পরেও তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ শাহের৷
ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি এদিন সমবেদনা প্রকাশ করেন অমিত শাহ৷ পাশাপাশি, ওয়ানাডের ঘটনা নিয়ে বিরোধীদের অকারণ রাজনীতি করার তীব্র নিন্দা করতে দেখা যায় তাঁকে৷
অমিত শাহ বলেন, ‘‘মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা৷ আমি দেশের মানুষের জন্য কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই…ওঁরা (বিরোধীরা) ক্রমাগত আগাম সতর্কবার্তা নিয়ে কথা বলছেন৷ আমি জানিয়ে দিতে চাই, গত ২৩ জুলাই, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কেরল সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল, ঘটনার ৭ দিন আগে৷ তারপর ২৪ এবং ২৫ জুলাই ফের তাদের সতর্ক করা হয়৷ গত ২৬ জুলাই, ওদের জানানো হয়, সে রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ২০ সেমি মতো ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং তার ফলে ধসের সম্ভাবনাও থাকবে৷ ধস বা কাদাজলের ধসের জেরে প্রাণহানিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের আগাম সতর্কবার্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এখানে৷ ২০১৪ সাল থেকে এই কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা এই আগাম সতর্কবার্তা পাঠানোর সিস্টেমের উপরে খরচ করছে৷’’
আরও পড়ুন: মমতার হস্তক্ষেপে কাটল স্টুডিওপাড়ার জট! বুধবার থেকেই শুরু শ্যুটিং, রাজি সবপক্ষ
তিনি কেরল সরকারের কাছে প্রশ্ন তোলেন, আগাম সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা কী কী পদক্ষেপ করেছিল?
অমিত শাহ বলেন, ‘‘গত ২৩ জুলাইয়ের সতর্কবার্তা পাওয়ার পরে, ভূমিধসের আশঙ্কা করে, আমার নির্দেশে কেরলে ৯ দল এনডিআরএফ পাঠানো হয়েছিল৷ কেরল সরকার কী করেছিল? মানুষকে কি ধসপ্রবণ এলাকা থেকে সরানো হয়েছিল? আর যদি বা তা করা হয়েও থাকে, তাহলে এতগুলো মানুষ প্রাণ হারালেন কী ভাবে? ২০১৬ সাল থেকেই আগাম সতর্কতা পাঠানোর সিস্টেম কাজ করা শুরু হয়ে গিয়েছে৷ ২০২৩ সাল থেকেই ভারতের কাছে সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে৷ একমাত্র ৪টে দেশই ৭ দিন আগে থেকে আগাম দুর্যোগের সতর্কবার্তা দিতে পারে৷ আর ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম৷’’
তিনি জানান, বর্তমানে ওয়ানাডের পরিস্থিতির উপরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জর্জ ক্যুরিয়েন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নজরে রাখছেন৷
বুধবারই ওয়ানাড যাওয়ার কথা ছিল রাহুল গান্ধি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধির৷ কিন্তু ওয়ানাডের মেপাল্লির যে পার্বত্য এলাকায় এই ধস নেমেছে, সেখানে এই মুহূর্তে আবহাওয়ার কারণেই হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারবে না৷ সেই কারণেই প্রশাসনের অনুরোধে এদিনের সফর বাতিল করেছেন রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা৷
ওয়ানাডে উদ্ধারকাজে গতি আনতে ভারতীয় বায়ুসেনার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানকে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে ভারতীয় বায়ুসেনার হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে তৈরি রাখা হয়েছে৷ মূলত ওয়ানাডের ধস কবলিত এলাকায় অস্থায়ী ভাবে সেতু, যাতায়াতের পথ তৈরি করার মতো সামগ্রী নিয়ে আজই কেরল পৌঁছনোর কথা বায়ুসেনার ওই বিমানের৷