বর্তমানে তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের বাসিন্দা। আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় তাঁর। এর পর জন্ম নেয় এক ফুটফুটে পুত্রসন্তান। তবে তারপরেই হয় ছন্দোপতন। আচমকাই প্রতিকূল হয়ে ওঠে তাঁর পরিস্থিতি।একদিন হঠাৎই তাঁকে ও তার ছোট্ট ছেলেটাকে রেখে চলে যান তাঁর স্বামী। রেখে যান পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা। সেই সময় কয়েক মুহূর্তের জন্য কী করবেন ভেবে উঠতে পারেন না জয়া। কিন্তু পরবর্তীতে ছেলের কথা ভেবে এবং আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার তাগিদে ঘুরে দাঁড়ান তিনি।
advertisement
জয়া পাল বলেন, ২০০৯ সালে তাঁর স্বামী অনেক টাকা ঋণ করে তাঁকে এবং তাঁর সন্তানকে ফেলে রেখে চলে যান । সেই সময় ভয়াবহ পরিস্থিতি নেমে এসেছিল তাঁর জীবনে । তবে তাঁর প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার । সেই সময় তিনি কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না । তখন তিনি একদিন পেপারে দেখতে পান একজন ব্যক্তির তাঁর স্ত্রীর জন্য কিডনির প্রয়োজন । তখন তিনি তাঁর স্বামীর করা সমস্ত ঋণ পরিশোধ করার বিনিময়ে ওই ব্যক্তিকে তাঁর কিডনি দেওয়ার চুক্তি করেন । সেইমতো তিনি কিডনি দান করেন এবং শোধ হয় স্বামীর করা সব ঋণ।
আরও পড়ুন : মুখে দুর্গন্ধ? ওজন কমছে না? সব সময় বদহজম? ভাতডালের পাতে রাখুন এই পাতা
পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় তিনি কাজ করেন এবং তারও পড়ে যুক্ত হন বিমা সংস্থার সঙ্গে । এলআইসি করেই এখন ভাল অবস্থা তাঁর । যা হয়েছে সবটাই এলআইসি এর জন্যই । যে সময় জয়ার খারাপ পরিস্থিতি ছিল তখন তাঁকে বহু জনের কাছে বিভিন্ন কটূক্তি শুনতে হয়েছে। তবে আজ কাটোয়ার জয়া পাল খুবই পরিচিত একটা মুখ। নিজের অসময়ে জয়া কাউকে পাশে না পেলেও , আজ অন্যের কষ্টের কথা শুনলেই তিনি ছুটে যান ।
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমভাবে তিনি বহু মানুষকে সাহায্য করেন । অসহায় বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে , দুঃস্থ পরিবারের সংসার খরচ দেওয়ার মত অজস্র কাজ তিনি করেছেন এবং এখনও করেন । বর্তমানে বহু মানুষের অনুপ্রেরণা পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার জয়া পাল । একজন মহিলা হয়েও জয়া থেমে থাকেননি। অদম্য জেদ, ইচ্ছাশক্তি, আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জেদের কারণে আজ তিনি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন । মহিলা হয়ে তিনি যা করে দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সমাজের অন্যান্য মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন , ‘‘কষ্ট মহিলাদের জীবনের একটা অংশ । জীবনে প্রচুর সমস্যা এলেও মাথা ঠান্ডা রেখে এগিয়ে যেতে হবে । পলায়নের পথ বেছে নিলে চলবে না । মাথা ঠান্ডা রেখে সৎ পথে এগোতে হবে । সৎ পথে থাকলে ঈশ্বর তাঁদের সঙ্গ দেবেন ।’’
বর্তমানে জয়ার পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছল। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি । তবে জয়ার শরীরের অবস্থা এখন খুব একটা ভাল নেই। তবে জয়া জানিয়েছেন, তিনি যতদিন বাঁচবেন ততদিন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন। একসময় যে অন্যের কাছে সাহায্য পাননি, এখন সেই মহিলা সাহায্য করেন বহু মানুষকে। নারীশক্তির এক অন্যতম উদাহরণ হলেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার জয়া পাল ।