NTPCR-এর রিপোর্ট বলছে, সুপ্রিম কোর্টে জুনের ৫ তারিখ পর্যন্ত যা এফিডেভিট হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে দেশে ৩৫০০ বাচ্চা তাদের বাবা-মা উভয়কেই হারিয়েছে এই মারণ ভাইরাসে। আর অন্তত ২৬,০০০ বাচ্চা তাদের বাবা বা মায়ের মধ্যে একজনকে হারিয়েছে। এমন অনেক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে বাচ্চাটি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে কোনও উপায় না পেয়ে, আবার দেখা গিয়েছে, একটি সাত বছরের নাবালিকা তার ভাইয়ের দায়িত্বভার নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই এই বাচ্চাদের দত্তক নিতে চাইছেন বা নেওয়ার কথা ভাবছেন। তাই তাঁদের জন্য রইল গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য...
advertisement
#আইনত দত্তক নেওয়া:
ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (NCPCR)-এর চেয়ার পার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো জানাচ্ছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই করোনায় মা-বাবাকে হারানো বাচ্চাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য প্রদানেরও চেষ্টা করছে। জেলা ভিত্তিতে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি যেখানে চিকিৎসক, সমাজসেবী, মনোস্তাত্বিকরা রয়েছেন, তাতা এই বাচ্চাদের ভালো থাকার বিষয়টিও দেখছে। এ ছাড়াও প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কেয়ার প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। যাতে তারা পরবর্তীকালে যদি কোনও বাবা-মা পায় (দত্তক নেওয়ার পর) তা হলে তাঁরা কীভাবে এদের লালনপালন করবেন তা দেখানোর জন্য। তবে, এক্ষেত্রে বাচ্চাদের আত্মীয়রা অন্য পরিবারে পাঠাবে কি না বা কোনও প্রতিষ্ঠানে দেবে কি না সেটা আগে জেনে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই করোনার পরে এই কমিটিগুলির উপর আরও কিছু বাড়তি কাজ পড়েছে। এই কমিটিগুলি বাচ্চাদের ভালো থাকার বিষয়ে সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি একটি করে রিপোর্ট তৈরি করছে, যাতে তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তি, ব্যাঙ্কের তথ্য, পেনশন ও লোন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে উল্লেখ করা থাকছে এবং এর সঙ্গেই তা কী ভাবে বাচ্চাদের হস্তান্তর করা যায়, তারও উল্লেখ করা থাকছে।
কানুনগো বলেন, NCPCR রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ট্রান্সফার করার জন্য তারা যেন একটি নির্দেশিকা জারি করে। NCPCR IRDAI (ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি অফ ইন্ডিয়া)-কেও চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারা যেন বাচ্চাগুলির জন্য ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করে। এছাড়াও তিনি জানান, তাদের অনুরোধের পর EPFO বাচ্চাগুলিকে তাদের বাবা-মায়ের পেনশন দেওয়া শুরু করছে।
#অভিভাবক হিসেবে কী করা যেতে পারে:
কোনও হোমে পাঠানো বা কোনও অসরকারি সংগঠনের কাছে বাচ্চাগুলিকে দেওয়া হচ্ছে যদি আর কোনও উপায় না থাকে তো! কিন্তু সাধারণ পরিবারের সদস্যদের বা আত্মীদেরই বাচ্চাগুলির দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে চাইল্ডলাইন নামের এক অসরকারি সংগঠন (মহিলা ও শিশু মন্ত্রালয়, ভারত সরকারের নোডাল এজেন্সি)-এর আধিকারিক বলেন, যদি কেউ না থাকে বাচ্চাগুলির দায়িত্ব নেওয়ার তখন আমরা তাদের CWC-র সামনে আনছি ও পরবর্তী পদক্ষেপ করছি। আমরা প্রথমে বাচ্চাদের দাদু-ঠাকুমা বা অন্যান্য আত্মীদের কাছেই অনুরোধ জানাচ্ছি বাচ্চাগুলির দেখাশোনা করার।
এ বিষয়ে সিরিল অমরচাঁদ মঙ্গলদাসের পার্টনার ঋষভ শ্রভ জানান, এই বাচ্চাদের আইনগতভাবে কেউ যদি বাবা-মা হতে চান, তা হলে তাঁকে বেশ কয়েকটি দিক মাথায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি বাচ্চার বয়স ১৮-র নিচে হয়, তা হলে তাদের আর্থিক ভারও বহন করতে হয়। অনেক সময় বাচ্চাদের বাবা-মায়ের মৃত্যু হলে বা টেস্টামেনটারি গার্ডিয়ান (যাকে উইলে গার্ডিয়ান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে শেষ গার্ডিয়ানের পরে)-এর অনুপস্থিতিতে একজনকে অভিভাবক হিসেবে আদালত নিয়োগ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাচ্চাটির ধর্ম দেখা হবে।
বাড়ির বাবা-মায়েরা কোথায় কী বিনিয়োগ করেছে সে বিষয়ে বেশিরভাগ সময়ই বাচ্চারা কিছু জানে না। ফলে এই সমস্ত বাচ্চাদের দায়িত্ব নেওয়া ও তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তি তাদের নামে করা সে বিষয়ে তথ্য জোগাড় করা অনেকটা সময় সাপেক্ষ। মানি প্ল্যান্ট কনসালটেন্সির প্রতিষ্ঠাতা ঋষভ পারেখ এ বিষয়ে বলেন, আগে নিকট আত্মীয়দের থেকে জানতে হবে, কী ধরনের বিনিয়োগ তাদের অভিভাবক করেছে। তার পর সেগুলির তথ্য জোগার করতে হবে।
আরেক বিনিয়োগকারী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, বিনিয়োগের পাশাপাশি বাচ্চাদের বাবা-মায়ের কী কী লোন আছে, সেটাও জানতে হবে। এমনভাবে কাজ করতে হবে এক্ষেত্রে যাতে বাচ্চাদের ভবিষ্যতে কোনও সমস্যার মুখে পড়তে না হয়!