তবে, নির্দিষ্ট সময় পর নিজে থেকেই এই রোগগুলি চলে যায়। আমাদের আশপাশে অনেকেই ফ্লু-তে (Flu) আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যে-ই কোভিড সম্পর্কে একটু কম চিন্তিত হতে শুরু করেছি, ঠিক সেই সময় ফ্লু-র বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। জ্বর, সর্দিকে ভুগছে অনেকেই। সাধারণ জ্বরকে (Viral Fever) অনেকেই করোনা জ্বরের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন। বাড়ছে মানসিক চিন্তা। আসলে উদ্বেগ বাড়ারই কথা। কারণ, এই সময় ফ্লু অনেক বেশি গুরুতর এবং স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। তবে এটাও ঠিক বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাবা-মায়েরা এখন তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য নিয়ে খুবই চিন্তিত। যে সমস্ত বাবা-মা সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা মনে মাথায় উচিত সব সময়।
advertisement
কোভিড আবহেই ফ্লু-তে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে:
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর আগে জানিয়েছিল যে গত বছর টানা করোনাবিধি মেনে চলার কারণে অন্য রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। কমেছিল ফ্লু-তে আক্রান্তের সংখ্যাও। মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা শ্বাসযন্ত্রের অন্য রোগের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করেছে। যাই হোক, টিকাকরণ ও করোনাভাইরাস মামলার সংখ্যা হ্রাসের কারণে মানুষ কম সতর্কতা অবলম্বন করেছে, যার ফলে ফ্লুতে আক্রান্তের সংখ্যাও হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে।
এ ছাডা়ও আরেকটি বিষয় আবশ্যই গুরুত্ব দিতি হবে যে মরসুমি ফ্লু-র উপসর্গের সঙ্গে কোভিডের (Covid-19) উপসর্গের অনকগুলি মিল রয়েছে, যার অর্থ-সংক্রমণ সম্পর্কে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আর বিভ্রান্ত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কিছু ক্ষেত্রে, বিভ্রান্তি দেরিতে বা ভুল রোগ নির্ণয়ের দিকেও নিয়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জ্বর হলে চিন্তা না বাড়িয়ে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। মরসুমি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ার কারণে এমনও জল্পনা ছড়িয়েছে যে ভারতে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ শুরু হতে দেরি নেই।
শিশুরা কেন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে:
বাচ্চারা খুব অল্পতেই সর্দি-কাশিতে ভোগে। এখন এমনিতেই ফ্লুয়ের আবহাওয়া। এই বৃষ্টি পড়ছে, তো এই রোদ। এখন ভাইরাল ফ্লু (Viral Flu) যেমন হচ্ছে তেমন ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়াও (Bacterial Pneumonia) হচ্ছে। তবে, ভাইরাল ফ্লুতে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। এক বা দুই বছরের বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় ভেন্টিলেশনেও (Ventilation) পাঠাতে হচ্ছে শিশুদের, অক্সিজেন দিতে হচ্ছে বা নেবুলাইজেশন লাগছে। তবে সেটা অবশ্যই তাদের অসুস্থতার মাত্রার উপর নির্ভর করছে।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলেছে যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের, বিশেষ করে ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ফ্লু-সংক্রান্ত গুরুতর জটিলতার ঝুঁকি বেশি। সাধারণ সর্দি-কাশির তুলনায়, ফ্লু সংক্রমণ শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ছোট বাচ্চারা ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দুই-তিন দিন খুব কষ্ট পায়। যার কারণে বাবা-মায়েরাও খুব চিন্তায় পড়ে যায়। তাই নিজেদের ও সন্তানদের ফ্লুর বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া সুরক্ষিত থাকার সর্বোত্তম উপায়।
শিশুদের মধ্যে ফ্লুর সাধারণ উপসর্গ:
জ্বর বা সর্দি, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, কাশি, গলা ব্যথা, সর্দি বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গায়ে ব্যথা, ডায়রিয়া এবং বমি বমি ভাব ইত্যাদি।
যে যে জরুরি লক্ষণগুলিতে খেয়াল রাখতে হবে:
যদিও হালকা সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেলে বাড়িতেই সেরে যায়, অল্প সময়ের মধ্যে নিরাময় করা যায়, তবে এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে যা গুরুতর জটিলতার ইঙ্গিত দিতে পারে। যেটা ভীষণভাবে নজরে রাখতে হবে, সেটা হল দু’দিনের বেশি, অতিরিক্ত জ্বর (১০২-১০৩ ডিগ্রি) উঠছে কি না? বাচ্চা স্বাভাবিক নিয়মে খেতে পারছে কি না? খাওয়ার পরিমাণ অর্ধেকের কম হয়েছে কি না? প্রস্রাবের মাত্রা কমেছে কি না? সঙ্গে শ্বাসকষ্ট রয়েছে কি না? এগুলো যদি থাকে, তাহলে বাচ্চাকে বাড়িতে না রেখে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই হবে।
কী কী নজরে রাখতে হবে:
জ্বর এবং সর্দি, জলশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট, সায়ানোসিস-ত্বকে নীল বর্ণ, নিউমোনিয়া বা গুরুতর ফুসফুসের সংক্রমণ
প্রাথমিক চিকিৎসা:
এই সময়, বাচ্চা অসুস্থ হলে প্রাথমিকভাবে তাকে আরামে রাখাটাই লক্ষ্য৷ এই সময়টা চেষ্টা করতে হবে যাতে শিশু কিছুটা শারীরিক ভাবে আরামে থাকে৷ জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে৷ এতে হাঁচি-কাশিতে একটু আরাম হতে পারে৷ ছোট শিশুদের (বিশেষ করে ৬ মাসের কম বয়সী, যারা মায়ের দুধ খায়) নাক বন্ধ হয়ে গেলে খেতে অসুবিধা হয়, খুবই কষ্ট পায়৷ তাদের স্যালাইন ড্রপ দেওয়া যেতে পারে৷ স্যালাইন ড্রপ বড়দেরও দেওয়া হয়৷ এতে নিঃশ্বাসের সমস্যা দূর হয়৷ যারা একটু বড়, গার্গল করতে পারে, বা ভেপার নিতে সক্ষম, তারা এগুলো করলে কিছুটা কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে৷ এর সঙ্গে অবশ্যই নজরে রাখতে হবে যে শিশুরা হাঁপিয়ে যাচ্ছে কি না৷ বা অন্য কোনও উপসর্গ শরীরে দেখা দিচ্ছে কি না৷ অ্যান্টি-অ্যালার্জি জাতীয় কিছু ওষুধ দেওয়া যেতে পারে৷
কী ভাবে সন্তানকে সুস্থ রাখা যাবে?
সন্তানকে সুস্থ রাখতে গেলে তাদের মাস্ক পরাতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে শেখাত হবে, হাতের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করাতে হবে। এছাড়াও শিশুকে ফ্লু-র টিকা দেওয়া যেতে পারে। কোভিডের ক্ষেত্রে যে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, এক্ষেত্রেও তাই করতে হবে৷
চিকিৎসা কী?
যদি ভাইরাল ফ্লু হয়, তাহলে একরকমের চিকিৎসা করতে হবে। যদি ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হয়, তাহলে অন্য রকমের চিকিৎসা। এক বছরের কম বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভাইরাল ফ্লু হলে কতটা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে সেটা দেখে শুধু স্যালাইন ড্রপ দিলেও হয়। আবার কখনও নেবুলাইজ করতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী সিরাপও দেওয়া হয়। পুরোটাই উপসর্গের উপরে নির্ভর করছে। অন্য দিকে, ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের ভেন্টিলেশনেও রাখতে হতে পারে পরিস্থিতি বুঝে।