এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সন্ধিপুজোয় বন্দুকের গর্জন। বন্দুকের গর্জনেই গ্রামবাসী বুঝতে পারেন সন্ধিপুজো শুরু হয়েছে। জমিদারি আমলের সেই রীতি আজও অবিকল বজায় আছে। তাছাড়া অষ্টমীর দিন ১০৮ প্রদীপ জ্বালানো এই পরিবারের প্রথা, যা বংশধরদের হাতেই সম্পন্ন হয়। গাইন জমিদারদের এক সময় অবিভক্ত বাংলার সাতক্ষীরায় ছিল বিপুল সম্পত্তি। সেখানে সোনালি পাট চাষ হত, যা ইংরেজদের মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করা হত। এর ফলেই জমিদার মহেন্দ্রচন্দ্র গাইন পান ইংরেজদের দেওয়া জুট লর্ড খেতাব। ব্যবসায়িক সম্পর্কের সূত্র ধরে ইংরেজরাও একসময় এই পুজোর আনন্দে অংশ নিতেন।
advertisement
এখানকার আরও একটি পুরনো রীতি হল বংশানুক্রমে নির্দিষ্ট মৃৎশিল্পীরাই দেবী প্রতিমা তৈরি করেন এবং ঢাক বাজানোও চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। দশমীর দিন সিঁদুর খেলা এখানে বিশেষভাবে পালন করা হয়। শুধু বংশধররাই নয়, গ্রামের মানুষও মিলিতভাবে আনন্দ ভাগ করে নেন। যদিও সারা বছর এই বাড়িতে তেমন কেউ থাকেন না, দুর্গাপুজোর কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হন। শুধু তাই নয়, রাজ্যের নানা জেলা থেকে দর্শনার্থীরা যেমন আসেন, তেমনই বিদেশ থেকেও বহু মানুষ এই জমিদার বাড়ির পুজো উপভোগ করতে আসেন। কলকাতার বিভিন্ন ট্রাভেল সংস্থার পুজো পরিক্রমার তালিকায় এই বাড়ির নাম উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন : নবমীতে পুজোর ভোগে পোলাও-ইলিশমাছ! দশমীতে পান্তাভাত-কচুরশাক! এই সাবেক পুজোর ভোগ নজরকাড়া
বছরের পর বছর বহু বাংলা সিনেমা ও ধারাবাহিক নাটকের শুটিংও হয়েছে এই গাইন জমিদার বাড়িতে। ফলে এর আকর্ষণ আরও বহুগুণ বেড়েছে। একসময় অবিভক্ত বাংলার ওপার থেকেও ভিড় জমত এখানে, তবে দেশভাগের পর কাঁটাতারের কারণে সেই সুযোগ আর নেই। আগে কাহার সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিমা কাঁধে তুলে নিয়ে যেতেন বিসর্জনের জন্য, কিন্তু সময়ের চাপে সেই রীতি পরিবর্তিত হয়েছে। তবে এই ছাড়া অন্য কোনো রেওয়াজের পরিবর্তন ঘটেনি এখনও পর্যন্ত। ধান্যকুড়িয়ার গাইন জমিদার বাড়ির দুর্গোৎসব আজও সমানভাবে ধরে রেখেছে জমিদারি ঐতিহ্য, রীতি-নীতি আর ইতিহাসের গৌরব।