এই বয়ঃসন্ধিকালটা তাদের জীবনে দারুন পরিবর্তনের সময়। শিশুদের মধ্যে এই বয়সে স্বাবলম্বী হওয়ার একটা গভীর আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয় কারণ এই সময় তাদের শারীরিক, মানসিক, জ্ঞানগতভাবে অনেক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনগুলি সাথে তাদের ভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় যেমন ইমোশনাল বা বিহেভিওরাল ডিজঅর্ডার , ইটিং ডিজঅর্ডার এবং ঝুঁকি নেওয়ার আচরণ।
“শিশুদের বেড়ে ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বাবা মা হিসাবে, আমাদের তাদের মানসিক চাহিদা এবং আচরণের পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং সংবেদনশীল হয়ে তাদের সামগ্রিক বিকাশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। চেষ্টা করবেন যে কোনও বড় চ্যালেঞ্জ এবং লড়াইয়ে তাদের পশে থাকতে এবং তাদের আশাবাদী হতে বলতে ,” বলেছেন প্রকৃতি পোদ্দার, গ্লোবাল হেড, মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং, রাউন্ডগ্লাস, গ্লোবাল হোলিস্টিক ওয়েলবিয়িং কোম্পানি।
advertisement
একটি শিশুর মানসিক সুস্থতা তাদের শারীরিক সুস্থতার মতো একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিছু জিনিস মেনে চললে আপনার শিশুকে আপনি মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে পারবেন। আপনার সঙ্গে আপনার সন্তানের সম্পর্ক , তার প্রতি আপনার ভালবাসা ,পাশে থাকা সবকিছুই তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আপনার সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে,” বলেছেন ডঃ হিমাংশু নির্বান, এমবিবিএস, এমডি (সাইকিয়াট্রি), নয়ডা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এনআইআইএমএস)।
বাচ্চাদের প্রতি আপনার ভালবাসা, স্নেহ এবং যত্ন এমনভাবে প্রকাশ করুন, যেভাবে আপনার সন্তান উপভোগ করতে চায় । যেমন আপনার সন্তান আলিঙ্গন, হাসি, পিঠ চাপড়ানো বা আপনার সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে পছন্দ করে । তাকে বুঝতে দিন যে তাদের কাজে আপনারাও আগ্রহী। আপনার সন্তানের প্রচেষ্টা , সাধন , দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তাভাবনাকে সম্মান করুন,” ডঃ নির্ভান আরও যোগ করেন।
সামগ্রিক সুস্থতার জন্য তাদের কিছু সুঅভ্যাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন - মননশীলতা, চলাফেরা করা , স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সহানুভূতি দেখানো - যেগুলো তাদের চলার পথে স্ট্রেস মোকাবিলায় সাহায্য করবে। পোদ্দার কিছু সহজ উপায় শেয়ার করেছেন যাতে বাবা-মা এবং অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্করা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য মেনে চলতে পারেন।
তাদের কমুনিকেট করতে উত্সাহিত করুন: সন্তানের মঙ্গলের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সমস্ত রকমের সমস্যা এবং সংগ্রামে সর্বদা তাদের পাশে থাকুন ।
তাদের নিজস্ব জায়গা দিন: টিন এজার্সদের স্বাবলম্বী হতে চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তাদের নিজস্ব একটা স্পেস দিন এবং পারলে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজুন।
সৎ হন: সন্তানদের প্রতি সৎ হন এবং তাদের বুঝিয়ে দিন যে আপনিও তাদের মঙ্গল নিয়ে ভাবেন।
মেডিটেশন এবং মননশীলতার সাথে পরিচয় ঘটান : প্রতিদিনের অনুশীলন তাদের স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে এবং তাদের আরও আত্ম-সচেতন এবং আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে অনুপ্রাণিত করুন: খাবার এবং সুস্থতার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই তাদের সম্পূর্ণ পুষ্টির জন্য প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর শাকসবজি এবং ফল খেতে উত্সাহিত করুন।
চিন্তাশীল হতে শেখান : তাদের দায়িত্বশীল হতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে শেখান । তাদের আশ্বস্ত করুন যে তারা জীবনের যে কোন চ্যালেঞ্জের সাথে মোকাবেলা করতে পারে।
তাদের চলাফেরা করতে অনুপ্রাণিত করুন: সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার প্রায়ই কিশোর-কিশোরীদের শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে তোলে। মানসিক সুস্থতা অর্জনের জন্য তাদের প্রতিদিন ব্যায়াম করতে বা সক্রিয় জীবনধারা অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করুন।
একইভাবে বাবা মায়েদেরও তাদের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার যত্ন নেওয়া ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। মেডিটেশন করুন, বাইরে হাঁটুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান বা বই পড়ুন। আপনার নিজের জন্য সময় বের করুন এবং এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয় এবং সুখী করে আরও সচেতন ব্যক্তি এবং ভালো বাবা মা বানিয়ে তোলে।
পরিবার এবং সন্তানদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটান , তাদের নিজেদের অনুভূতিগুলো আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে বলুন এবং তাদের বুঝিয়ে দিন যে জীবনে কঠিন লড়াইয়ে তারা এক নয়। যে কোনও সমস্যার সমাধানে আপনারা তাদের পাশে আছেন। নিজের দুঃখ , কষ্ট, উদ্বেগ আপনজন,বিশ্বস্ত বন্ধুবান্ধব এবং টিচারদের সাথে শেয়ার করতে শেখান এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সাহায্য নিন।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)