আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়ে সম্পর্ক কি হয় তা জানতে পারে হয় সিনেমা দেখে, নয়তো নিজের পরিবারের কাজ থেকে। কারণ আমাদের দেশের মেয়েদের এখনও পুরুষদের সঙ্গে স্বাভাবিক ছন্দে মিশতে দেওয়া হয় না। তাই পড়াশুনো শেষ করতেই যখন তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তারা বুঝতেই পারে না যে তাদের পুরুষটির কাছ থেকে ঠিক কি চাওয়া উচিত। বা তাদের পাওনা কতটা। কীর্তনার ক্ষেত্রেও তাই হয়। সে সারাদিন বাড়িতেই থাকত। রান্না করত। সে অন্য কিছু করার কথা ভাবেওনি। কীর্তনা জানায়, " আমি আমার বাড়িতে মাকে এভাবে দেখেই বড় হয়েছি। তাই আমার স্বামী যখন আমার প্রতি কোনও ভালবাসা দেখায় না। সেটাকেও আমার খুব স্বাভাবিক মনে হয়েছে।"
advertisement
কারণ বেশিরভাগ মানুষই জানে না সম্পর্ক থেকে কি চাওয়া উচিত। ছেলেরা কাজ করবে মেয়েরা ঘর সামলাবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে এই নিয়ম আজ অনেকটাই বদলেছে। আজ অনেক মেয়েরাই সফল সিইও, আর ছেলেরা সফল শেফস বা রাঁধুনি। তাই পুরনো পুরুষতন্ত্রের শাসন মেনে নেওয়ার আজ আর কোনো মানে নেই। মেয়েদেরকে তৈরি করতে হবে তাদের সঠিক ব্যক্তিত্ব। মেয়েদেরকে জানতে হবে তার নিজের আকাঙ্খা, শক্তি এবং নিজের মতকে প্রাধান্য দেওয়া শিখতে হবে।
কীর্তনাও চেষ্টা করেছিল সংসারে সব মেনে নিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হল না। সে বাড়িতে থাকতে থাকতে হাফিয়ে উঠেছিল। নিজের ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রিকে কোনও কাজে লাগাতে পারছিল না। সে নিজেকে বুঝতে শুরু করে। এবং ডিভোর্স দেয় তার স্বামীকে। একটা ভাল চাকরিতে কাজ শুরু করে। সে বাঁচতে শুরু করে। এতদিন সে মরে বেঁচে ছিল। প্রথমটায় তাঁর সিদ্ধান্তে কীর্তনার পরিবার আঘাত পেলেও তারাও মেনে নিতে বাধ্য হন। কীর্তনা বলে, " মেয়েদের এটা জানতে হবে যে নিজের রোজগার করাটা কতটা জরুরি। বিয়ের আগেও মেয়েদের রোজগেরে হওয়া দরকার।" আজ কীর্তনা নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করেছে। সে একটি কোম্পানির সিইও। তাঁর একটি ফুটফুটে মেয়েও আছে। তাঁর স্বামীই মেয়েকে দেখে আর পার্টটাইম কাজ করে।
কীর্তনা জানায়, " আমি আমার স্বামীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলি। ভাল আছি।" আমাদের দেশের মেয়েদের এখনও সব কিছু নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার অধিকার নেই। এই ধারণা বদলাতে হবে। মেয়েরা সমান মর্যাদা ডিমান্ড করে এটা বুঝতে হবে। তবে মেয়েদের প্রথমেই যা করতে হবে তা হল, চুপ করে সহ্য করা নয়। নিজের পছন্দ অপছন্দকে মর্যাদা দিতে হবে। এবং তা নিয়ে খোলাখোলি কথা বলতে হবে। সম্পর্কে কোনও রকম বোঝাপড়া নয়। মেনে নেওয়া নয়। নিজের অধিকার পরিবার থেকেই নিজেকে বুঝে নিতে হবে। আর তারজন্য সচেতন হতে হবে সবার আগে। আর ছেলে বা মেয়েদের জন্য আলাদা কিছু নয়। সব কিছুতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার আছে। বাচ্চা সামলানো শুধু মেয়েদের কাজ নয়। পুরুষকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে।