২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দিননাথ ভট্টাচার্য, দক্ষিণ কলকাতার নব্বই বছরের এক প্রৌঢ়, হসপিটালে আসেন অনেক সর্দি কাশি, বমির সাথে রক্ত এবং উচ্চ অক্সিজেনের প্রয়োজন নিয়ে। প্রথমে বুকের এক্সরে করতে গিয়ে দেখা যায় যে লোবার নিউমোনিয়া (lobar pneumonia) হয়েছে। তবে আরো কিছু টেস্ট করতে গিয়ে অ্যানারিজম (aneurysm) ধরা পড়ে। অ্যানারিজম হল একটি বিশেষ মেডিক্যাল অবস্থা যখন আওরটা (aorta), যা শরীরের সবচেয়ে বড় রক্তনালী, যা দুর্বল হয় এবং বাইরের দিকে বেলুনের মত ফুলে ওঠে। বুকে অস্বাভাবিক ভাবে রক্তনালী ফুলে থাকে যাকে বেবী হার্ট (baby heart) বলা হয় এবং বাম দিকের ফুসফুসের উপর চাপ সৃষ্টি করে ফলে জটিল সমস্যা তৈরি হয়। ডঃ অর্ণব বেরা, কনসালটেন্ট, রেসপিরেটরি মেডিসিন, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, তৎক্ষণাৎ এই কেসটি ডঃ অরিন্দম পান্ডের কাছে রেফার করেন।
advertisement
এই জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতে, মেডিক্যাল টিম থোরাসিক এন্ডোভাস্কুলার আওরটিক রিপেয়ার (TEVAR) পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। এই পদ্ধতি বোঝাতে গিয়ে ডঃ অরিন্দম পান্ডে বলেন,”এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় ১২০/৩০ মিলিমিটার স্টেন্ট গ্রাফট করে। এরপর মানটা (manta) ডিভাইস ব্যবহার করে ২০এফ (৬.৬ মিলিমিটার) বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ডিভাইসে একটি বিশেষ মেডিক্যাল টুল ব্যবহার করে হয়ে থাকে ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির ক্ষেত্রে। ক্যাথিটার ভিত্তিক পদ্ধতিতে অনেক বড় আর্টারিয়াল পাংচার করা হয়। এই ডিভাইস হিমোস্টাসিস (hemostasis) এর ক্ষেত্রে অনেক দ্রুততা ও কৌশলের সাথে, রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে। রোগীর হেমোপটিসিস (hemoptysis) বন্ধ হয়ে যায় পরের দিন সকালেই। তারপর হিমোডাইনামিকালি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকেন পুরো সময়ই। এই পুরো পদ্ধতি সম্ভব হয়েছে ক্যাথ ল্যাব টিম, রেডিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্টাফ এবং প্রশাসনিক স্টাফের সরাসরি সহযোগিতায়।
দীননাথ ভট্টাচার্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, তার পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেন,” যখন আমি মেডিকাতে আসি, তখন আমার শ্বাসকষ্টের খুব সমস্যা ছিল। আমার পরিবার আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। ডঃ অর্ণব বেরা আমাকে ডঃ অরিন্দম পান্ডের কাছে রেফার করেন। তার পরামর্শ নেওয়ার পর আমার পরিবার অনেকটা আশ্বস্ত হয়। ৭ই ডিসেম্বর ডঃ পান্ডে তেভার (TEVAR) পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। আমাকে কয়েকদিন পরেই ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে আমি একদম স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি, কোন রকম শ্বাসকষ্ট ছাড়াই। অদ্ভুত হলেও সত্যি, আমি ওই পদ্ধতি প্রয়োগের পর কোন ব্যাথা অনুভব করিনি। আমি এবং আমার পরিবার মেডিকার অসাধারণ টিমের কাছে খুব কৃতজ্ঞ অসাধারণ চিকিৎসা ও খেয়াল রাখার জন্য।”
ডঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার, মনিপাল হসপিটাল (পূর্ব), জানান,” আমরা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব সময় বেঞ্চমার্ক তৈরি করে এসেছি। আমরা সর্ব প্রথম মানটা (manta) ডিভাইস ব্যবহার করেছি ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিতে। মনিপাল হসপিটালের টিম সাধুবাদ জানায় ডঃ অরিন্দম পান্ডে এবং তার টিমকে। রোগীদের সেরা চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে একইরকম এবং কীভাবে আরো নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং চিকিৎসা করা যায়, সেই প্রয়াসে আমরা নিয়োজিত রয়েছি।”