তবে ঠাকুর-ঘরের অবস্থান এবং বাস্তুশাস্ত্র কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। তাই বাড়িতে যাতে শান্ত-নির্মল পরিবেশ বিরাজ করে, তার জন্য এই বিষয় দু’টি মেনে চলতে হবে। আর নিজের রুচি অনুযায়ী ঠাকুর-ঘর ছিমছামও রাখা যায়, আবার অনেক আসবাব দিয়ে সাজিয়েও নেওয়া যায়। ঠাকুর-ঘর কী ভাবে সাজাতে হবে, সেই সংক্রান্ত বিষয়ে আজ কয়েকটি জরুরি কথা আলোচনা করব।
advertisement
ঠাকুর-ঘরের রঙ:
পুজোর জায়গার রঙ এমন হতে হবে, যেটা স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। আর রঙটা যেন ছিমছাম হয়। পুজোর জায়গায় খুব জমকালো রঙ একেবারেই করানো উচিত নয়। এমনিতেই পুজোর ঘর বেশ ছোটই হয়। আজকাল আবার ফ্ল্যাটে থাকার চল বেশি। তাই একফালি জায়গাতেই ঠাকুর-ঘর বানাতে হয়। ফলে ঠাকুর-ঘরের জন্য একটু হালকা রঙের শেডই বাছতে হবে। তাতে ঘরটা আকারে বড় এবং বেশ খোলামেলা দেখাবে। তাই ঠাকুর-ঘরে উজ্জ্বল কোনও রঙ, হলুদ অথবা কমলার হালকা শেড ব্যবহার করা যায়।
নজরকাড়া প্রবেশদ্বার:
ঠাকুর-ঘরে ঢোকার মূল দরজা পছন্দ করাও কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার! বাড়ির অন্যান্য ঘরের দরজার থেকে আলাদা হতে হবে পুজোর ঘরের প্রবেশদ্বার। খোদাই করে নকশা বানানো কাঠের দরজা, কাঠের দরজার উপর হালকা সূক্ষ্ম কাজ - এই সাবেকি ধরনগুলো কখনওই পুরনো হয় না। তবে গোটা বাড়িতে যদি আধুনিকতার ছোঁওয়া থাকে, তা হলে ঠাকুর-ঘরের দরজাতেও সেই আধুনিকতার রেশ ধরে রাখতে হবে। আজকাল আধুনিক ডিজাইনের কিছু দরজা জনপ্রিয় হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম- কাচের দরজার উপর কোনও এক ধরনের মোটিফ। স্বচ্ছ এই দরজা বেশ দেখতে লাগে এবং বাড়িতে অতিথি এলে তাঁরা বাইরে থেকে অনায়াসেই ঠাকুর-ঘরের ভিতরের সব কিছু দেখতে পারবেন।
ঠাকুর-ঘরের আলোকসজ্জা:
পুজোর জায়গার আলোর সাজও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে ঠাকুরের সিংহাসনের জন্য লাইট বেছে নিতে হবে। আর তার জন্য ব্যবহার করা যায় ছোট ছোট জোনাকির মতো লাইট অর্থাৎ টুনি লাইট। এখন অনেক ব্যাটারি-চালিত ছোট ছোট লাইট বেরিয়ে গিয়েছে। সেগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে। আর পুজো ঘরের প্রবেশদ্বারের ওপরেও আলো দিলে ভালো। এখন যেমন লেড-লাইট পাওয়া যায়, এক-ছড়া সেই লেড-লাইট ব্যবহার করা যায়। তবে ঠাকুর-ঘরের সিলিংয়ের ঠিক মাঝে একটি হালকা নকশার ঝাড়বাতি লাগালে ঠাকুর ঘরের প্রতিটি কোণায় নরম আলো পৌঁছে যাবে।
মেঝের সজ্জা:
আমরা সাধারণত ঠাকুরের আসনের ঠিক সামনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলপনা দিয়ে রাখি। দেওয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে রঙ দিয়ে স্থায়ী আল্পনা এঁকে রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া, ছোট্ট একটা কার্পেট বা রাগ্ পেতে রাখা যায়। তার উপর ছোট্ট ছোট্ট কুশন রাখলে দেখতে সুন্দর লাগে। আর ঠাকুর ঘরের মেঝেতে বড় আকারের ফুলদানিও রাখা যেতে পারে। তাতে রোজকার তাজা ফুল ভরে রাখা যায়।
কাপড়ে স্নিগ্ধতার ছোঁওয়া:
ঠাকুর-ঘরের বসার জায়গা এমনিতে নিচু হয়। তাই মেঝেতে পাতা গদি অথবা কুশনের জন্য এমন ধরনের কাপড় ব্যবহার করতে হবে, যা এক দিকে স্নিগ্ধতা ছড়াবে। আবার অন্য দিকে, ঘরের সাজসজ্জাকে প্রাণবন্তও করে তুলবে। আর তার সঙ্গে ম্যাচ করে পর্দাও ঝোলানো যেতে পারে।
আনুষঙ্গিক সাজসজ্জা:
ঠাকুর-ঘরের প্রবেশদ্বারে তাজা অথবা কৃত্রিম ফুলের মালা ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকী ঠাকুরের সিংহাসনের আশপাশও ফুলের সাজে সাজানো যায়। যেমন- বেদির চারপাশে হালকা করে কোনও ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিলেও দেখতে ভাল লাগবে। এ ছাড়া, পিতলের প্রদীপ, ধূপদানি, ঘণ্টা- এ সবও ঠাকুর-ঘরের সৌন্দর্য অনেকাংশেই বাড়িয়ে দিতে পারে।