শাড়ির প্রচলন:
শাড়ির যাত্রা শুরু হয়েছিল তুলো বা কটনের হাত ধরে। খ্রিস্ট পূর্ব পঞ্চম সহস্রাব্দের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম তুলোর চাষ শুরু হয়। তার পর থেকেই সুতো বুনে শাড়ি তৈরি শুরু হয়। সেই সঙ্গে বুননশিল্পীরা সুতোর উপর নানা ধরনের রঞ্জকের প্রলেপ দিয়ে রঙিন শাড়ি তৈরি করতে শুরু করেন।
advertisement
নামের উৎপত্তি:
শাড়ির নাম এসেছে জনপ্রিয় শব্দ ‘সাত্তিকা’ থেকে। এর অর্থ হল – মহিলাদের পরিধেয় বস্ত্র। প্রথম দিককার জৈন এবং বৌদ্ধ লিপিতে এর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। সাত্তিকা হল থ্রি-পিস পোশাক। অর্থাৎ এর তিনটি অংশ থাকত। যার মধ্যে অন্যতম হল – অন্তর্য, উত্তরীয় এবং স্তনপাট্টা। ‘অন্তর্য’ হল কাপড়ের নীচের দিকের অংশ, ‘উত্তরীয় হল’ ঘোমটা এবং ‘স্তনপাট্টা’ হল বুকের দিকের কাপড়ের অংশ। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সংস্কৃত সাহিত্য এবং বৌদ্ধ পালি সাহিত্যেও এর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। এই থ্রি-পিস সেটকে ‘পোশাক’ বলা হয়।
মহিলারা সাধারণত একাধিক ধরনের আঞ্চলিক হ্যান্ডলুম শাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম হল – সিল্ক, কটন, ইক্কত, ব্লক প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি এবং টাই-ডাই টেক্সটাইল। আবার জনপ্রিয় সিল্কগুলি হল – ব্রোকেড সিল্ক, বেনারসি, কাঞ্চিপুরম, গাদোয়াল, পৈঠানি, মহীশূর সিল্ক, উপ্পাড়া, ভাগলপুরি, বালুচরী, মহেশ্বরী, চান্দেরি, মেখলা, ঘিচা, নারায়ণপেট, এরি ইত্যাদি।
বিবর্তন:
ধীরে ধীরে বিদেশিদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ধনী ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে দামি পাথর, সোনার সুতো ব্যবহার করে তৈরি শাড়ির চাহিদা তৈরি হতে থাকে। আসলে শাড়িতে এই ধরনের জিনিস ব্যবহার করলে সেটা তাঁদের সাজে অনন্যতা এনে দিতে পারে বলেই তাঁদের বিশ্বাস ছিল। তবে শাড়ির সৌন্দর্য কিংবা নিরপেক্ষতা আজও বজায় রয়েছে।
শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশরা ভারতে প্রবেশ করেন আর তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে সিন্থেটিক রঙেরও প্রচলন ঘটে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দেশ থেকে কেমিক্যাল রং আমদানি করতে থাকেন। সেই সঙ্গে প্রচলন ঘটল ডায়িং এবং প্রিন্টিংয়ের অজানা টেকনিকেরও। যার ফলে ভারতীয় শাড়িতে এসে গেল অকল্পনীয় বৈচিত্র্য। ভারতে টেক্সটাইলের উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাড়ির নকশাতেও তার প্রতিফলন ঘটতে শুরু করে। শিল্পীরা শাড়িতে ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন ফিগার, মোটিফ এবং ফুলের নকশা। আর বিদেশি প্রভাবের কারণে শাড়িই হয়ে উঠল প্রথম ভারতীয় আন্তর্জাতিক পোশাক।