কিন্তু কী এই রোগ, প্রতিরোধের ব্যবস্থাই বা কী, জেনে নেওয়া যাক অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রবীণ পরামর্শদাতা চিকিৎসক অনূপ পি-র কাছ থেকে—
হিমোফিলিয়া কী?
হিমোফিলিয়া একটি বিরল রক্তের সমস্যা। এর ফলে ঠিকমতো রক্ততঞ্চন বা রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। রক্তকণিকার মধ্যে রক্তজমাট বাঁধার উপাদান বা অনুচক্রিকা কম থাকায় এই সমস্যা যাঁদের রয়েছে তাঁদের দীর্ঘক্ষণ ধরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
advertisement
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হিমোফিলিয়ার তরফে জানা গিয়েছে, প্রতি ১০০০ জনের মধ্যে একজনের এই সমস্যা থাকতে পারে। এটি জিনগত সমস্যা হতে পারে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।
যে বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন—
১. হিমোফিলিয়া একটি বংশগত সমস্যা। এর ফলে মম্তিষ্ক-সহ কোনও অঙ্গে রক্তক্ষরণের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যা প্রাণঘাতীয় হতে পারে।
২. প্রায় প্রতি ৫০০০ জন পুরুষে একজন হিমোফিলিয়া নিয়েই জন্মান।
৩. তিন ধরনের হিমোফিলিয়া হয়—
হিমোফিলিয়া এ— অনুচক্রিকা ৮-এর অভাবে এই সমস্যা তৈরি হয়। এটিই সব থেকে সাধারণ।
হিমোফিলিয়া বি—রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা কতটা রয়েছে তার উপর নির্ভর করে এই ভাগ।
হিমোফিলিয়া সি— এটি অপেক্ষাকৃত কম সমস্যা তৈরি করে। এক্ষেত্রে অনুচক্রিকা ১১ কম থাকে রক্তে।
৪. হাড়ের জোড়ে রক্তক্ষরণ হওয়া খুবই বড় বিষয় এই ক্ষেত্রে। কারণ এতে হাড়ের জোড়ের ক্ষতি হতে পারে।
উপসর্গ—
যদিও এক একজনের ক্ষেত্রে এক এক রকম উপসর্গ দেখা যায়। তবু কিছু সাধারণ সমস্যা তৈরি হয়। যেমন,
১. মাড়ি থেকে রক্তপাত
২. মহিলাদের অতিদীর্ঘ মাসিকচক্র
৩. ত্বকে কালশিটে
৪. ছোটখাটো কাটা থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত
৫. নাক থেকে মাঝে মাঝেই রক্তক্ষরণ, যা বন্ধ হতে অনেক সময় লাগে
৬. হাড়ের জোড়ে ব্যথা এবং শক্ত অনুভূতি
৭. মল-মূত্রের সঙ্গে রক্তপাত
কোনও ব্যক্তির যদি খুলির ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, তবে নিম্নোক্ত উপসর্গ দেখা দিতে পারে—
আরও পড়ুন- হাঁপানি রোগীরা সাবধান! অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা ডেকে আনছে চরম বিপদ,সতর্ক হোন এখনই
১. প্রচণ্ড মাথা ব্যথা
২. বমি
৩. ঘাড়ে ব্যথা
৪. দুর্বলতা
৫. ঝাপসা দৃষ্টি, এক জিনিস দু’টি দেখা
৬. ভারসাম্যহীনতা
৭. অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব
৮. খিঁচুনি
চিকিৎসা পদ্ধতি—
সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই হিমোফিলিয়া ধরা পড়ে।
এই মুহূর্তে এই সমস্যার কোনও সমাধান নেই। তবে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রক্তে অনুপস্থিত অনুচক্রিকা বৃদ্ধি করে রক্তক্ষরণ রোধ করা যায়।
যাঁরা হিমোফিলিয়ায় ভুগছেন, তাঁরা একটু সচেতন থাকতে পারেন, যাতে কোনও আঘাত না লাগে। নিয়মিত ওষুধ খেলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব।