অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই তাঁরা বাথরুমে চলে যান। এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের পেট পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু অন্য দিকে আর এক শ্রেণির ক্ষেত্রে দেখা দেয়, যাঁরা সারা দিনে বেশ কয়েকবার বাথরুমে ঢোকেন পেট পরিষ্কারের জন্য। কিন্তু তাতেও তাঁদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা থেকেই যায়। এমনকী অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে কমোডের উপর বসে থাকলেও মল ত্যাগ হচ্ছে না। বিভিন্ন কারণের জন্য এই সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম বিষয় হল, হজমের সমস্যা। হজমের সমস্যা দেখা দিলে পেটের একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
advertisement
একাধিক মানুষের ক্ষেত্রে এটা নিত্যদিনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে, অনেকের ক্ষেত্রে সাময়িক সমস্যা তৈরি করে। তবে সে যাই হোক না কেন এই সমস্যায় যাঁরা ভোগেন তাঁদের বেশ কিছু সময় অসম্ভব কষ্ট অনুভূত হয়। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ একটি বিষয়। সঠিক খাবার গ্রহণ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় ফাইবার জাতীয় খাবার যেমন রাখা দরকার তেমনই তরল খাবারও রাখা প্রয়োজন। তাহলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এবং প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করা দরকার।
জেনে নেওয়া যাক কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়?
যেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য সিংহভাগ দায়ী হজম প্রক্রিয়া, সেহেতু সঠিক ভাবে হজম না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এদিকে হজমের জন্য প্রয়োজন হয় একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতার। আমরা যখন খাবার খাই, সেই খাবার একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্য দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছয়। সেখানে একাধিক পাচক রসের সংমিশ্রমে খাবার হজম হয় এবং সেখান থেকে পুষ্টিগুণ গ্রহণ করে শরীর এবং বাকি পদার্থ মল হিসেবে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে মল বেরিয়ে যাওয়ার আগে তা কোলনে জমা থাকে।
মূলত শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেলে মল শক্ত হয়ে যায়। কারণ জল ছাড়া মল শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে সেটি শক্ত হয়। এবং কোলন থেকে পায়ুদ্বারের মধ্য দিয়ে মল বের হতে সমস্যা দেখা দেয়। মল বের হতে না পারলে তা কোলনে জমে যায় এবং একাধিক সমস্যা তৈরি করে। গ্যাস, পেটব্যথা সহ একাধিক সমস্যা দেখা দেয়।
কোন সময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?
কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে খুব সাধারণ এবং ঘরোয়া কিছু পদ্ধতিতে তা সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন অতিরিক্ত পরিমাণ জল পান করলে, ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সেরে ওঠা সম্ভব। কিন্তু অনেক সময় পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করে। সেই সময় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভীষণ দরকার। কারণ সাধারণ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও মারাত্মক কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন- LAC: ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের মধ্যেই চিন নতুন সীমান্ত আইন আনল কেন?
কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
পেটে ব্যথা হতে পারে- যেহেতু কোলনে মল শক্ত হয়ে আটকে যায় তাই এর ফলে পেটে ব্যথা হতে পারে। এমনকী মল অতিরিক্ত পরিমাণে কঠিন বা শুষ্ক হয়ে গেলে তা থেকে ইনফেকশন হতে পারে। যা থেকে বড় রোগের সম্ভাবনা থাকে। তাই দীর্ঘ দিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব কোনও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
আর কোন সময় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার?
অনেক সময় দেখা যায় মলের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসছে, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কারণ এই সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে হতে পারে, কিন্তু পাশাপাশি ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজের (IBD) কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, ক্যানসারও হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় মলের সঙ্গে রক্ত বের হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
যদি এক সপ্তাহ ধরে মলত্যাগ না হয়-
কোষ্ঠকাঠিন্য মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছলে অনেক সময় দেখা যায় প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে মলত্যাগ করতে পারছেন না কোনও ব্যক্তি। সেক্ষেত্রে প্রবল সমস্যায় ভোগেন সেই ব্যক্তি। এই সব ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উচিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা। কারণ একাধিক ওষুধের দ্বারা কঠিন মল ভেঙে দেওয়া সম্ভব। তাই সেই সব ক্ষেত্রে মল ভেঙে নরম করে দিয়ে তা পায়ুদ্বার দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে দেন বিশেষজ্ঞরা।
কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা রোগী কখন বুঝবেন যে তাঁর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে?
বেশ কয়েকটি উপসর্গ দেখলে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত রোগীর উচিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। ওই উপসর্গগুলি হল-
শ্বাসকষ্ট অনুভূত হলে
প্রবল জ্বর হলে
হার্টবিট আচমকা বেড়ে গেলে
বমি ভাব দেখা দিলে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় এই সমস্যাগুলি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ এগুলি কোনও বড় রোগের উপসর্গ হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় কী কী খাবার খাওয়া যেতে পারে?
কষ্ঠোকাঠিন্য হলে খাবারের দিকে অতিরিক্ত নজর রাখা দরকার। সুষম আহার করা দরকার। সঠিক খাদ্য গ্রহণ করলে এবং সঠিক মাত্রায় খাবার খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।
এই সময় কী কী খাবার খাওয়া উচিত?
যে সব খাবারে তুলনামূলক বেশি ফাইবার রয়েছে সেই খাবার খাওয়া উচিত। যেমন আটার রুটি,পাস্তা, সয়াবিন, ব্রোকোলি, সবুজ সবজি, বিনস, গাজর, বাদাম, আমন্ড, খেজুর ইত্যাদি খাবার খাওয়া যেতে পারে।
প্রচুর জল পান করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি দিন কমপক্ষে ৩ লিটার জল পান করা উচিত। এতে শরীরে জলের মাত্রায় ঘাটতি দেখা দেয় না।
কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত নয়-
চিপস, ভাজাভুজি, রাস্তার খাবার খাওয়া উচিত নয়। মদ্যপান সম্পূর্ণ বন্ধ করা উচিত।