শান্ত, নিরিবিলি পাহাড়ি গ্রাম। যেখানে রয়েছে অপার শান্তি। আর নানা নাম না জানা পাখির কলতান। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত...শুধুই কাঞ্চনজঙ্ঘা আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। দার্জিলিংয়ের কাছে হিমালয়ের কোলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মোড়া পাহাড়ি গ্রাম দাওয়াইপানি (Dawaipani)। বর্তমানে মাত্র কয়েক'শো পাহাড়ি পরিবারের বাস ছবির মতো ছোট্ট এই গ্রামে।
advertisement
দাওয়াইপানির ১৮০ ডিগ্রি জুড়ে অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ। বাঁ পাশের পাহাড়টা দার্জিলিং। সামনের পাহাড়ে সিকিমের নামচি। ডানদিকে লামাহাটার ঘন পাইন-ধূপির জঙ্গল। আর সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘার পুরো রেঞ্জ। দার্জিলিংয়ের কাছে হলেও শহরের কোলাহলের ছোঁয়া নেই দাওয়াইপানিতে। তবে দাওয়াইপানির গ্রামের গা ঘেঁসে শুরু Senchal Wildlife Sanctuary-র ঘন জঙ্গল। দাওয়াইপানি থেকে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে পারেন তাকদা, তিনচুলে, লামাহাটা, ছোটা মাঙ্গোয়া, বড় মাঙ্গোয়া। অন্যদিকে, ঘুরে আসতে পারেন ঘুম-সোনাদা হয়ে দার্জিলিংয়েও। গাড়ি ভাড়া ২৫০০-৩৫০০ টাকা পড়বে জায়গা অনুযায়ী।
দাওয়াইপানি উচ্চতা ৬৫০০ ফুট। দাওয়াইপানির এমন অবস্থান যেখানে প্রতিটি বাড়ি থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তবে এত সুন্দর এই গ্রাম বহু পর্যটকদের কাছেই এখনও অজানা। বছর পাঁচেক আগে থেকে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। দাওয়াইপানিতে থাকার জন্য রয়েছে হাতে গোনা ১০-১২টি হোমস্টে। তার মধ্যে রয়েছে দাওয়াইপানির ওপরের অংশ অর্থাৎ দাওয়াইপানি ভুটিয়া বস্তি এলাকায় রয়েছে 'রাই হোমস্টে', 'Rover Eco Stay', 'আড্ডাহাট', 'Kabiraj Rai হোমস্টে', 'করুণা হোমস্টে', 'khennenim Homestay'-সহ আরও বেশ কয়েকটি হোমস্টে।
দাওয়াইপানি গ্রাম লেবং পর্যন্ত বিস্তৃত। মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে পাহাড়ি নদী 'লুংডুং', যা গিয়ে তিস্তায় গিয়ে মিশেছে। গ্রামে যে ক'টি হোমস্টে আছে, প্রায় সবগুলিই ব্যবস্থাপনা প্রায় কম-বেশি সমমানের। খাওয়াদাওয়াও প্রায় একই। খরচ প্রতিদিন খাওয়া-দাওয়া এবং থাকা নিয়ে জনপ্রতি ১২০০ থেকে ১৪৫০ টাকা।
শিলিগুড়ি থেকে দাওয়াইপানির দূরত্ব ৭৭ কিমি। গাড়িতে সময় লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। ভাড়া ২৫০০-৩০০০ টাকা। শেয়ার গাড়িতে গেলে জোড়বাংলোতে নেমে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন দাওয়াইপানি। ছোট্ট এই গ্রাম দার্জিলিং এত কাছে মনে হলেও সড়ক পথে ২০ কিমি। বলা ভাল দাওয়াইপানির ঠিক উল্টোদিকের পাহাড়টাই দার্জিলিং। ফলে আকাশ পরিষ্কার থাকলে রাতের দিকে দার্জিলিং শহর তা জোনাকির মতো জ্বলজ্বল করে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দাওয়াইপানি সেবক রোড এবং রোহিনী দু-দিক দিয়েই যাওয়া যায়। সেবক-মংপু হয়ে গেলে রাস্তা প্রায় ১৭ কিলোমিটার কম। জোড়বাংলো হয়ে গেলে সময় লাগে খানিকটা বেশি।
কেন নাম হল 'দাওয়াইপানি'?
'দাওয়াইপানি' নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন এক গল্প। স্থানীয়রা বলেন, গ্রামের ঝোড়ার জলে ওষুধ আছে। জানা যায়, বহু বছর আগে এক ইংরেজ সাহেবকে জঙ্গলের দেখভালের জন্য ইজারাদার বা Forest Ranger হিসবে দার্জিলিং এবং সংলগ্ন এলাক্য পাঠানো হয়েছিল। তিনি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি সারা জায়গায় ঘুরতেন এবং পাহাড়ি ঝোড়ার জল খেতেন। সেই জল তাঁর পায়েও লাগত। এ ভাবেই দিনের পর দিন পায়ে জল লাগতে লাগতে, তাঁর পায়ের ক্ষত সেরে ওঠে। তখন ব্রিটিশরা সেখানকার জল নিয়ে পরীক্ষা শুরু করে। দেখা যায়, সেই জল মিনারেলে ভর্তি। সেই থেকেই ঝোড়া তথা গ্রামের নাম হয় ‘মিনারেল স্প্রিং ভিলেজ’ (Mineral Spring Village)।
লেবংয়ের নীচের অংশটি এখনও গুগল ম্যাপে ওই নামের পরিচিত। ‘দাওয়াই-পানি’ নাম হয়েছে স্বাধীনতার পরে। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পরে নাম হয় দাওইয়াইপানি। আপনি যদি সেই ঔষধি ঝোড়া দেখতে চান তবে আপনাকে ধুপি গাছের ঘন জঙ্গলের মধ্যে ১ ঘন্টার বেশি ট্রেক করে পৌঁছতে হবে। তাহলে আর দেরি কিসের? আজই টিকিট কেটে ফেলুন ক্যালেন্ডার মিলিয়ে, আর ঘুরে আসুন দাওয়াইপানি...
শুভাগতা দে