তাই বাড়ির সাজেও আসুক পুজো-পুজো ছোঁয়া। ঘরে ভরে উঠুক পুজোর গন্ধে। এমনিতেই তো বছরের এই সময়টায় বাড়িতে বহু অতিথি সমাগম ঘটে। আরও সেই কারণেও ঘর সাজিয়ে তোলার তাগিদটা থাকে। কিন্তু পুরো বাড়ি সাজাতে গেলে তো আবার পকেটের উপর চাপ পড়বে! চিন্তা নেই। কম খরচে বাড়ির সাজ এবং ভোল বদলে দেওয়ার কিছু আইডিয়া দেব আমরা! দেখে নেওয়া যাক, পুজোর দিনে কম খরচে বাড়ি সাজানোর কিছু কায়দা।
advertisement
সেজে উঠুক দোর এবং প্রাঙ্গণ:
ঘরে প্রবেশ করার মূল দরজা খানিকটা পুজো প্যান্ডেলের মতো সাজিয়ে তুললে ঘরের মধ্যেও পুজোর একটা আবহ তৈরি হবে। দরজার উপরের অংশ থেকে ঝোলানো যেতে পারে লাল-হলুদ গাঁদার মালা। প্রবেশের মুখেই দুই পাশের দেওয়ালে বড় দু’টো চাঁদমালাও টাঙানো যায়। আর দোরের দুদিকের মুখে রাখা যায় বড় দু’টি মাটির কলস। আর কলসের গায়ে সাদা খড়িমাটি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে ফুল-পাতা-কল্কা। আর ঠিক ঘরের দরজার সামনে মাঝ বরাবর সুন্দর করে আলপনা এঁকে নিলে তো কথাই নেই! আলপনার মাঝখানে প্রদীপ রাখা যেতে পারে। তা-ছাড়া একটা বড় কলস রেখে তার উপর মাটির পাত্রে কিছুটা শিউলি বা কিছু গাঁদা ফুলও রাখা যায়।
আরও পড়ুন - মহালয়ার আগেই সাফ করুন ঘর, কাপড়ের ক্ষতি না করে কীভাবে কাচবেন পর্দা, জানুন
নানা রঙে, উপাচারে সেজে উঠবে ঠাকুর ঘর:
ফুলের মালা দিয়ে সাজিয়ে তুলতে হবে বাড়ির ঠাকুর ঘর। আর ঠিক সামনেই দিতে হবে বড় করে আলপনা। ঠাকুরের সামনে একটা বড় পিতলের কলসে সাজিয়ে দেওয়া যায় কয়েকটা পদ্মফুলও। এর পাশাপাশি পিতলের বড় বড় প্রদীপ থাকলে তো কথাই নেই! পুজোর জায়গার দুপাশে সাজিয়ে দেওয়া যায় সেই বিশালাকার প্রদীপ। না-থাকলেও অবশ্য তেমন সমস্যা নেই! কিছু মাটির প্রদীপ এবং ধুনুচি দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে। প্রদীপ দিয়ে সাজাতে না-চাইলে দুই পাশে মঙ্গল ঘটের উপর আমপাতা এবং ডাব রেখেও সাজানো যাবে পুজোর ঘরের দোর। সে-ক্ষেত্রে উপর থেকে ঝোলানো যেতে পারে হ্যাঙ্গিং প্রদীপ। আর কিছু ধূপকাঠি, সুগন্ধী জ্বেলে দিলেই ঘরে ভরে উঠবে পুজোর গন্ধে।
হল জুড়ে শুধু বাঙালিয়ানায় মোড়া পুজোর বিশেষ সাজ:
পুজো মানেই ভোগ কিংবা লুচি তরকারি এবং নারকেল নাড়ু, রসগোল্লা-সহ নানা ধরনের মিষ্টি। তাই ডাইনিং কিংবা বসার জায়গাতেও দুর্গাপুজোর আবেশ তৈরি করা যেতে পারে। আসলে আজকালকার ফ্ল্যাটগুলিতে সাধারণত ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুমই বেশি দেখা যায়। তাই ডাইনিং টেবিলে ঘরের সাজের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সাজানো যেতে পারে হ্যান্ডলুম কটনের টেবিল রানার। এ-ক্ষেত্রে অবশ্য লাল পাড় সাদা কিংবা লাল রঙের টেবিল রানার ব্যবহার করা যেতে পারে। তার উপর রাখা যেতে পারে পোড়া মাটি কিংবা কাঁসার থালা-বাসন।
আরও পড়ুন - পুজোয় নতুন করে আলো দিয়ে সেজে উঠুক আপনার সাধের ঘরখানাও! রইল ফাটাফাটি ৫ উপায়
আর পুজোর জন্য দেওয়ালে ত্রিনয়ন স্টিকার লাগানো যাবে। যদি তাতে খরচ করতে কেউ না-চান, তা-হলে দুর্গাপুজোর উপরে পটচিত্র বা দুর্গা আঁকা মাটির সরা লাগানো যেতে পারে। এর পাশাপাশি দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পোড়া মাটির শো-পিসও ব্যবহার করা যায়। এতে সে-রকম খরচ হবে না। কারণ কাঁসার থালা-বাসন কিংবা পটচিত্র আঁকা মাটির সরা তো বোধহয় প্রত্যেক বাঙালির ঘরেই থাকে। নিদেনপক্ষে মায়ের মুখ দেওয়ালে থাকে।
ড্রয়িং রুমেও পুজো-পুজো ছোঁয়া:
পুজো মানে শুধুই প্যান্ডেল হপিং কিংবা রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া নয়। সেই সঙ্গে বন্ধুবান্ধব এবং পরিজনদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডাতেও মেতে ওঠে বহু মানুষ। তাই সোফা সেট কিংবা বসার জায়গাগুলোর সাজ এবং পর্দায় পুজোর ছোঁয়া আনা যেতে পারে। আনায়াসে পদ্ম কিংবা শিউলি ফুলের মোটিফ আঁকা কুশন কভার ব্যবহার করা যায়। আর বসার জায়গার পাশেই বড় মাটির কলসে রাখা যায় বড়-বড় কাশ ফুলের গুচ্ছ। এথনিক প্যাটার্নের প্ল্যান্টার থাকলে তাতে কিছু গাছ রেখে হলে সবুজের ছোঁয়াও আনা যেতে পারন। হলের ওয়াল ডেকোরে পুজোর কটা দিন থাকুক নানা মাপের তালপাতার হাত-পাখা। তবে হাত-পাখার ধারগুলো গামছা কাপড় অথবা লাল-সাদা কাপড় দিয়ে মুড়ে নিতে ভুললে চলবে না।
বেডরুম আর ব্যালকনিতে পুজোর রেশ:
সারা বাড়িতে পুজোর সাজ হলে শোওয়ার ঘর আর ঝুলবারান্দাই বা বাদ যাবে কেন? শোওয়ার ঘরের জানলায় ঝোলানো যেতে পারে লাল অথবা সাদা-লাল কাপড়ের কিংবা সাদা-লাল গামছা প্যাটার্নের পর্দা। আর যদি পুরনো জামদানি শাড়ি থাকে, তা-হলে তো আর খরচই করতে হবে না। কারণ সেই শাড়িকেই আপসাইকেল করে বানিয়ে নেওয়া যায় পর্দা। আর বিছানায় থাকুক সনাতনী লাল পাড় সাদা রঙের চাদর। তার উপর লাল রঙের বিভিন্ন মাপের কুশন সাজিয়ে দেওয়া যায়।
সাইড টেবিলের উপর একটি মাটির পাত্রে কিছু ঝরা শিউলি ফুল রেখে দেওয়া যায়। তাতে সুগন্ধে ম’ ম’ করবে গোটা ঘর। আবার ব্যালকনির মেঝের উপর সবুজ ঘাসের গালিচা পেতে দেওয়া যায়। আর রেলিং থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় টাটকা কিংবা কৃত্রিম গাঁদা ফুলের কিছু মালা। সেই সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে আলোর মালাও। আলোর মালা পরে দীপাবলিতেও কাজে লেগে যাবে। বাড়িতে থাকলে তো কথাই নেই!