করোনার জেরে ২০২০ সালের গরমের ছুটির সময় থেকেই বেড়াতে যাওয়া প্রায় বন্ধ। পুজোর (Durga Puja 2021) আগে লকডাউন উঠলেও পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অনেকেই কোথাও যাওয়ার সাহস পাননি। কিন্তু এ বারে টিকাকরণের (Covid 19 Vaccine) ফলে অনেকেই বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। তবে এ কথা অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজন করোনা এখনও বিদায় নেয়নি। তার থেকেও বড় বিষয় টিকা দেওয়া হলেই করোনা আর আপনাকে ছুঁতে পারবে না, এমনটাই নিশ্চিত করেননি বিশেষজ্ঞরা। ফলে দুর্গাপুজোয় বেড়াতে গেলেও আপনাকে সব ধরণের সাবধানতা অবলম্বন অবশ্যই করতে হবে। তাই খুব দূরে না গিয়ে চেষ্টা করুন বাড়ির সকলকে নিয়ে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসতে।
advertisement
আরও পড়ুন: পুজোয় একেবারে অন্যরকম বেড়ানোর প্ল্যান চান? ডেস্টিনেশন হোক 'মৌসুনি দ্বীপ'
হাতে আর সময় নেই, তাই পুজোর (Durga Puja 2021) সময়ে কোথায় যাবেন? কীভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন? কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে একদিনে পৌঁছে যাওয়ার মতো তিনটে জায়গার সন্ধান রইল আপনাদের জন্য...
#দিঘা (Digha)
বহুদিন থেকে প্রচলিত বাঙালির পছন্দের প্রথম তিন হলিডে বা হানিমুন ডেস্টিনেশন দিঘা (দি), পুরী (পু) এবং দার্জিলিং (দা)। মজা করে অনেকেই বলেন দি.পু.দা। তাই আজকের প্রথম ডেস্টিনেশন হিসেবে রইল দিঘার (Digha) কথা। দিঘা যাননি এমন বাঙালি কম থাকলেও, রয়েছেন। তাই আজ প্রথমেই রইল আট থেকে আশির অন্যতম পছন্দের জায়গা দিঘা বেড়াতে যাওয়ার প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য।
*কলকাতা থেকে দিঘার দূরত্ব ১৮১.৫ কিলমিটার।
কীভাবে যাবেন: বাসে, ট্রেনে বা নিজের গাড়িতে কলকাতা থেকে দিঘা (Digha) পৌঁছতে পারেন মাত্র ৪/৫ ঘণ্টার মধ্যেই। বাস ছাড়ে ধর্মতলা থেকে। এসি, নন এসি সব ধরনের বাস পাওয়া যায়। এসি বাস হলে ভাড়া ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ২৫০ টাকা। সরকারি ভলভো অর্থাৎ বাংলাশ্রীর ভাড়া ৩৫০ টাকা। এ ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা থেকেই দিঘা যাওয়ার বাস রয়েছে।
আরও পড়ুন: পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন 'সুন্দরী' সাতকোশিয়া, রইল বেড়ানোর সমস্ত খুঁটিনাটি...
কী দেখবেন: অবশ্যই দিঘার (Digha) মূল আকর্ষণ ৭ কিলোমিটার লম্বা সমুদ্র সৈকত। গন্তব্যে পৌঁছে সমুদ্রে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করুন। সমুদ্রে নেমে ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিন। দিঘায় একটি সায়েন্স মিউজিয়াম আছে, ওটা দেখে আসতে পারেন। একেবারে কাছেই শান্ত-নিরিবিলি উদয়পুর বিচ ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন: দিঘায় (Digha) প্রচুর সস্তা থেকে মাঝারি এবং বিলাসবহুল হোটেল, গেস্টহাউজ এবং রিসোর্ট আছে। এ ছাড়াও সরকারি সৈকতাবাস রয়েছে। অনলাইনে এবং অফলাইনে বুক করতে পারবেন।
#শান্তিনিকেতন ( Santiniketan)
শান্তিনিকেতনও কাছেপিঠে বেড়াতে যাওয়ার অন্যতম জনপ্রিয় একটি জায়গা। এ ছাড়াও যাঁরা সংস্কৃতিপ্রেমি তাঁদের কাছে শান্তিনিকেতন (Santiniketan) অন্যতম পছন্দের জায়গা। শহুরে কোলাহল থেকে একেবারে দূরে বাউলের গান শুনে যদি দুটো-দিন নিশ্চিন্তে কাটাতে চান, তাহলে এ বারের দুর্গাপুজোয় আপনার গন্তব্য হতেই পারে শান্তিনিকেতন।
*কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনের (Santiniketan) দূরত্ব ১৬৪.৭ কিলমিটার।
কীভাবে যাবেন: বাসে, ট্রেনে বা গাড়িতে কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন পৌঁছতে পারবেন ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে। হাওড়া থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন রয়েছে। এ ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা থেকেই শান্তিনিকেতন যাওয়ার বাস রয়েছে।
আরও পড়ুন: ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম 'দাওয়াইপানি', চায়ের কাপ হাতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার ব্যালকনি
কী দেখবেন: শান্তিনিকেতন (Santiniketan) ঘোরা মানেই সংস্কৃতিকে আরও ছুঁয়ে থাকা। গাড়ি না নিয়ে যদি ট্রেনে যান। সেক্ষেত্রে শহরে প্রচুর টোটো চলে। সেই টোটো বুক করে নিন। ঘুরে দেখুন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িগুলি, সোনাঝুরি, খোয়াই। সপ্তাহান্তে গেলে পাবেন শনিবারের হাট। সেখানে গ্রামের মানুষের হাতে তৈরি জিনিষের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। বাউল গান শুনুন, কোমর দুলিয়ে নিন আদিবাসী নৃত্যের সঙ্গে।
কোথায় থাকবেন: শান্তিনিকেতনে প্রচুর সস্তা থেকে মাঝারি এবং বিলাসবহুল হোটেল, গেস্টহাউজ এবং রিসোর্ট আছে। এ ছাড়াও সরকারি থাকার জায়গাও রয়েছে। অনলাইনে এবং অফলাইনে বুক করতে পারবেন সেগুলি।
#বকখালি (Bakkhali)
কলকাতা থেকে একেবারে কাছেই, মাত্র কয়েকঘণ্টাতেই আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন বকখালি (Bakkhali)। বছর দশেক আগেও বকখালি একেবারে পর্যটন শূন্য থাকত বছরের বেশিরভাগ সময়ে। কিন্তু সেই বকখালি অনেকতাই বদলে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে পর্যটন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সেই উন্নয়নের শামিল হয়েছে বকখালিও। ফলে এখন সারাবছর মানুষ বকখালিতে বেড়াতে যান। তবে কখনওই দিঘা বা পুরীর মতো ভিড় বকখালিতে হয় না।
*কলকাতা থেকে বকখালির দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার।
*কীভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে লোকাল ট্রেন, বাসে বা গাড়িতে বকখালি (Bakkhali) পৌঁছতে পারেন যে কেউ। শিয়ালদহের দক্ষিণ শাখা থেকে এক ঘণ্টা অন্তর অন্তর নামখানা লোকাল ছাড়ে। তাতেই পৌঁছে যান নামখানা। সেখান থেকে ই-রিকশা করে জেটিঘাটে পৌছতে হবে। তারপর লঞ্চে নদী পার হয়ে, ভ্যান রিকশা করে বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রাইভেট কার অথবা বাসে করে বকখালি।
কী দেখবেন: বকখালির (Bakkhali) অন্যতম আকর্ষণ বকখালি থেকে ফ্রেজারগঞ্জ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার লম্বা বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত। এখানকার সমুদ্রে ঢেউ কম, ফলে নিশ্চিন্তে স্নান করা যায়। বকখলির কাছেই অনেকগুলো ঘোরার জায়গা আছে। ই-রিকশা করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঘোরা যায় হেনরিজ আইল্যান্ড, বেনফিস, জম্বু দ্বীপ। বেনফিস থেকে লঞ্চ ভাড়া করে (১০০০-১৬০০ টাকা ভাড়া সিজন অনুযায়ী) জম্বু দ্বীপে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। বিকেলের দিকে ঘুরে নিতে পারেন কুমীর প্রজেক্ট।
কোথায় থাকবেন: বকখালি (Bakkhali) বাসস্ট্যান্ডের কাছে অনেক বাজেট হোটেল পাওয়া যাবে। তাছাড়া, সমুদ্র সৈকতের কাছেও কিছু হোটেল আছে, কিন্তু সেগুলোর ভাড়া একটু বেশী। এ ছাড়া সরকারি একটি রিসোর্টও রয়েছে একেবারে সমুদ্রের কাছে। দু'দিন আপনি কাটিয়ে দিতে পারবেন বকখালিতে।
শুভাগতা দে