অন্যান্য জায়গার সঙ্গে মৌসুনির পর্যটনের বিস্তর পার্থক্য। এখানে বেড়াতে আসেন বহু মানুষ, তারপরেও কংক্রিটের কোনও কাঠামো নেই। প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনই বেড়াতে আসার মূল মন্ত্র। বাইরে থেকে বেশ কয়েকটি পর্যটন সংস্থা সাহায্য করলেও এলাকার মানুষই নিজেদের মতো করে সাজিয়েছেন নদীর পাড়। সেখানেই তৈরি হয়েছে নানা মাপের টেন্ট এবং মাটির বাড়ি বা MUD House।
advertisement
নামখানার বিডিও শান্তনু সিংহ ঠাকুর মৌসুনি দ্বীপের পর্যটন প্রসঙ্গে বলেন, "মৌসুনির যে অংশে পর্যটনটা মূলত গড়ে উঠেছে, সেটা বালিয়াড়া গ্রাম। কলকাতা থেকে সড়কপথে বালিয়াড়া নিকটবর্তী বাগডাঙ্গা ভালভাবে যুক্ত, তবে পেরোতে হবে চিনাই নদী। সেখান থেকে কয়েক মিনিট ফেরি পরোলেই বালিয়াড়া। ফলে রেল বা সড়কপথে যে কারও পক্ষে সহজেই মৌসুনি পৌঁছনো সম্ভব।"
মৌসুনির বিশেষত্ব হিসেবে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক জানান, "এখানে যা পাওয়া যায়, সেটা দিয়েই পর্যটন ব্যবসা চলে। যে মাছ জেলে ধরেন, সেটাই ক্যাম্পগুলিতে রান্না করে খাওয়ান জেলের পরিবারের মহিলারা। যে বার-বি-কিউ চিকেন সকলে ক্যাম্প ফায়ারে তৈরি করেন, সেই মুরগির প্রতিপালন হয় গ্রামেই। ফলে গোটা পর্যটনটাই হয় গ্রামের মানুষের অর্থনীতি এবং গ্রামের মানুষদের সহায়তায়। সেখানে বাইরের কারও কোনও সহায়তা নেই।"
আরও পড়ুন: পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন 'সুন্দরী' সাতকোশিয়া, রইল বেড়ানোর সমস্ত খুঁটিনাটি...
আরও পড়ুন: ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম 'দাওয়াইপানি', চায়ের কাপ হাতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার ব্যালকনি
কীভাবে পৌঁছবেন মৌসুনি দ্বীপ?
শিয়ালদহ দক্ষিণশাখার ট্রেন নামখানা লোকালে চেপে নামতে হবে নামখানা স্টেশনে। ভাড়া ৩০ টাকা। সেখান থেকে মোটর ভ্যানে চেপে (১০ টাকা জন প্রতি) পৌঁছতে হবে ফেরিঘাট। সেখান থেকে পার হতে হবে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া। ৫ টাকা ফেরি ভাড়া, সময় লাগবে ৫-১০ মিনিট। তবে বোট ভর্তি হওয়া পর্যন্ত সময় নষ্ট করতে না চাইলে আপনাকে রিজার্ভ করে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে দিতে হবে ৪০ টাকা।
এ ছাড়াও নামখানা স্টেশন থেকে যাওয়া যায় টোটোতে। যাওয়া যায় টাটা ম্যাজিকে। সময় লাগে ১৫ মিনিট। ১৫ টাকা ভাড়া। রিজার্ভ করে গেলে কমবেশি ৩৫০ টাকা। ম্যাজিকে গেলে নামতে হবে বাগডাঙ্গা ফেরিঘাট, বাইরে গেলে হুজ্জাইত ফেরিঘাটে এবং নিজের গাড়িতে গেলে যাওয়া যাবে দুর্গাপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত। এখানে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা পর্যটকদের। তিনটি ঘাট থেকেই ফেরি করে পৌঁছতে হবে মৌসুনি দ্বীপে। বাগডাঙ্গা থেকে অটো এবং টোটো পাওয়া যাবে। ২৫ টাকা ভাড়া (সময় এবং সিজিনের সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া পরিবর্তনশীল)।
কোথায় থাকবেন?
মৌসুনি দ্বীপে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার ক্যাম্প (Camp) এবং মাড হাউজ (Mud House)। ইজিফিসো ব্যাকপ্যাকার্স ক্যাম্প (Backpackers' Camp), আলাফিয়া ক্যাম্প (Alafiia Camp), মৌসুনি ঝিনুক ক্যাম্প (Mousuni Jhinuk Camp) এবং বালুচরি বিচ ক্যাম্প, স্যান্ড ক্যাসেল, নেচার স্টাডি ক্যাম্প। ক্যাম্পগুলির ব্যবস্থাপনা কমবেশি একই। প্রতিটি ক্যেম্পেই রয়েছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। মেনুও কম-বেশি একই। সন্ধ্যায় বনফায়ারের ব্যবস্থা আছে। তবে তার খরচ অতিরিক্ত।
*ইজিফিসো ব্যাকপ্যাকার্স ক্যাম্প: এদের রয়েছে চার ধরনের টেন্ট। অ্যাডভেঞ্চার টেন্ট (খাওয়াদাওয়া-সহ ১২০০ টাকা প্রতিদিন মাথাপিছু), ফ্যামিলি টেন্ট (১৩০০টাকা মাথাপিছু), পারগোলা টেন্ট (১৪০০ টাকা মাথাপিছু এবং তেন্ট কলোনি (৬ জনের জন্য ৬,৫০০ টাকা) এবং ব্যাম্বু কটেজ (১৫০০ টাকা মাথাপিছু)।
*আলাফিয়া ক্যাম্প: এদের রয়েছে ৫টি কটেজ , ৩ জন করে থাকা যাবে (১৪০০ টাকা মাথপিছু)। ৬টি ফ্যামিলি টেন্ট, ৩ জন করে (১২০০ টাকা মাথাপিছু), ২ জন করে থাকার জন্য ৬টি ডোম টেন্ট (১০০০ টাকা মাথাপিছু)।
*মৌসুনি ঝিনুক ক্যাম্প: মৌসুনি ঝিনুক ক্যাম্পে খরচ মাথাপিছু ১২০০-১৪০০ টাকা।
*বালুচরি বিচ ক্যাম্প: এই সংস্থার রয়েছে টেন্ট এবং নন এসি কটেজ। খরচ ১২০০-১৪০০ টাকা মাথাপিছু প্রতিদিন।
*নেচার স্টাডি ক্যাম্প এবং স্যান্ড ক্যাসেলের রয়েছে ডোম টেন্ট, ফ্যামিলি টেন্ট, কটেজ এবং মাড হাউজ। স্যান্ড ক্যাসেলের এসি মাড হাউজও রয়েছে। এই দুটি ক্যাম্পের খরচ ১২০০-১৬০০ টাকা।
কী কী দেখবেন:
প্রকৃতিকে কাছ থেকে অনুভব করার অপার শান্তি মিলবে এই মৌসুনি দ্বীপে। প্রতিটি ক্যাম্প একেবারে দ্বীপের বালির ওপরে। ফলে গোটা ট্রিপটাই অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ। যেদিন পৌঁছবেন স্নান সেরে নিতে পারেন মুড়ি গঙ্গায়। বিকেলের দিকে নৌকা নিয়ে পৌঁছে যান জম্মু দ্বীপে। সময় নেবে ৩০-৩৫ মিনিট, ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। নৌকায় বসে উপভোগ করতে পারেন বিকেলের সূর্যাস্ত।
শুভাগতা দে