TRENDING:

কলকাতায় বসে বিশ্বের আটকে থাকা মেয়েদের মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন ডক্টর এণাক্ষী সেনগুপ্ত!

Last Updated:

সামান্য ভুল হলেই জোটে মৃত্যুর হুমকি! কী করে বাঁচবে এই মেয়েরা? সারা জীবন কী পুরুষের দাসি হয়েই কাটাতে হবে? এই ভাবনা মাথায় এসেছিল কলকাতারই এক মেয়ের! জানলে গর্ব হবে!

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
কলকাতা: কলকাতায় বসে আপনি হয়ত ভাবতেও পারবেন না আফগানিস্থান, কাবুল, সিরিয়া, গাজা, ইরান বা ইরাকের মেয়েরা ঠিক কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন? সামান্য রাস্তায় বেরোতে গেলেও তাঁদের সঙ্গে একজন পুরুষ থাকতেই হবে! পড়াশুনো করতে পারবে না! ইংরেজি ভাষা তো একেবারেই নয়! এমনকি সামান্য ভুল হলেই জোটে মৃত্যুর হুমকি! কী করে বাঁচবে এই মেয়েরা? সারা জীবন কী পুরুষের দাসি হয়েই কাটাতে হবে? এই ভাবনা মাথায় এসেছিল কলকাতারই এক মেয়ের! তাঁর নাম ডক্টর এণাক্ষী সেনগুপ্ত! কী করলে কাবুলে আটকে থাকা একটা মেয়ে ফের তাঁর জীবন ফিরে পাবে! বাঁচতে পারবে নতুন করে! এই ভাবনা ঘুমোতে দিত না এণাক্ষীকে! তাঁকে ছুটে যেতে হয়েছে কাবুল থেকে ইরাক! শুধু মাত্র নারী-মুক্তির কথা ভেবে এই ভয়ঙ্কর বিভৎসতার জীবনে ঢুকে পড়তে ভয় পাননি এণাক্ষী!
advertisement

রিফিউজি ক্যাম্পে যে সব মেয়েদের উদ্ধার করে আনা হত, তাঁদের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন এণাক্ষী! এই সব মেয়েদের জন্য নতুন বাঁচার দিশা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এণাক্ষী! নানা রকম কোর্স নিয়ে পড়াশুনোর পথ খুলে দিয়েছেন তিনি! লিডারশিপ থেকে শুরু করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে ঠিক কী কী পড়াশুনো করতে হবে, সব কিছু তাঁদেরকে শিখিয়েছেন এই কলকাতারই মেয়ে এণাক্ষী! পিছিয়ে থাকা এই সব দেশের বহু মেয়ে আজ এণাক্ষীর দেখানো পথে হেঁটে সাফল্য পেয়েছেন! বেরিয়ে আসতে পেরেছেন পুরুষের অবাধ রাজের থেকে!

advertisement

কিন্তু এত কিছু থাকতে কেন এই কাজের ভাবনা? জীবনের ঝুঁকিও তো থাকে?

এণাক্ষী সহজ ভাষায় বলেন, “আসলে ছোট থেকেই মায়ের থেকে দেখেছি বাংলাদেশ ছেড়ে এদেশে আসার পর কতটা লড়তে হয়েছে তাঁকে। আমাদের মানুষ করা থেকে পড়াশুনো শেখানো, সব কিছুতেই লড়তে হয়েছে মাকে! আমার মা মীরা সেনগুপ্ত আমায় প্রথম ইনস্পায়ার করেন! তারপর আমারা স্বামী বিজয় কাপুর আমায় সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন! আজ তিনি নেই! তবে তাঁর উৎসাহ সবসময় আমার সঙ্গে রয়েছে! একজন স্বামী যে সব সময় মেয়েদের আটকে রাখতে চায় তা কিন্তু নয়! স্ত্রীর বড় হওয়াতেই তাঁর আনন্দ ছিল! আর তার পরেই নাম আসবে আমার দিদি নীলাক্ষী সেনগুপ্তর! যে খুব ছোট বয়সে মুম্বই গিয়ে লড়াই করে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন! এদের লড়াই, ভালবাসাই আমাকে কাজ করার উৎসাহ দিয়েছে!’

advertisement

ডক্টর এণাক্ষী সেনগুপ্ত

কিন্তু এই সব দেশে এডুকেশন, কেরিয়ার তাও মেয়েদের জন্য করাটা তো খুব কঠিন একটি কাজ?

এণাক্ষী বলেন, “একেবারেই খুব কঠিন। তবে অনলাইন ক্লাস এমন একটা বিষয়, যা গোটা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে! আমি এবং আমার টিম এই সব আটকে থাকা মেয়েদের উন্নতির জন্য প্রথমে কোর্স ডিজাইন করি! তারপর অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মেয়েদের ঘরে পৌঁছে যাই! এখানে এমন মেয়ে বা মায়েরা আছেন যে হয়ত এক সময় ডাক্তার ছিলেন। কিন্তু এখন বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়া বারণ! সেই মেয়েটির কাছে যখন এই কোর্স পৌঁছে যাচ্ছে, সে আবার বাঁচার উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছে। এই কোর্সের মাধ্যমে সে এই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য দেশে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার কথা ভাবছে। শুধু ভাবছে না তাঁরা করেছেও!

advertisement

এণাক্ষী জানান, ” আমার এই এডুকেশন ও কেরিয়ারের যে সব কোর্স আছে সে সবে মেয়েদের উৎসাহ খুব বেশি! তবে পুরুষদের জন্যও আছে! এমন অনেকে আছেন যারা মোবাইল নিয়ে বাথরুমে বসে ক্লাস করেন! কারণ ইংরেজিতে বা অন্য ভাষায় ক্লাস হচ্ছে। সেই কথা যদি একবার কেউ জানতে পারে তাহলে মেরে পর্যন্ত ফেলতে পারে মেয়েটিকে! তাই বাথরুমে লুকিয়ে ক্লাস করছে অনেক মেয়ে! এবং তাঁরা এই বাধা কাটিয়ে অনেকেই এখন সুস্থ জীবন যাপন করছেন! এটুকুই তো চাহিদা! আমার এনজিও-র কাজ এটুকুই!”

advertisement

আপনার এই কাজ কী এখনও চলছে? ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?

এণাক্ষী জানান, “আজকাল সব কিছু আগে থেকে প্ল্যান করতে একটু ভয় হয়! কারণ যদি না হয় ভেবে! তবে কাজ তো চলছেই। ভবিষ্যতেও চলবে। এই যে মেয়েদের অন্ধকার-ময় জীবন সেখান থেকে যদি একটা মেয়েকেও সুস্থ জীবন দেওয়া যায়, তবে সেটাই আমার এবং আমার টিমের জন্য অনেক!”

এণাক্ষীর ঝুলিতে ডিগ্রির পাহাড়। তবে শুধু এই কাজ নয়! এণাক্ষী বই লেখেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর বই রয়েছে! বই এডিট করেন! ৪০-এর উপরে তাঁর বইয়ের সংখ্যা! জীবনের শুরুতে পিআর হোক বা পড়ানো সবেতেই এণাক্ষী কিন্তু সব সময় সবার আগে ছিলেন! ভয়াবহ সময়ে ইরাকে পড়াতে চলে যেতেন তিনি! আত্মীয়স্বজনরা প্রশ্ন ছুড়লে তিনিও জবাব দিয়েছেন স্পষ্ট! তাঁর স্বামী জটিল অসুখে ভুগে মারা যান! কিন্তু এণাক্ষী তাঁর স্বামীর চিকিৎসা সব থেকে বড় জায়গায় করান! এণাক্ষী বলেন, “মেয়েদের নানা প্রশ্ন করাই যায়! কেন ইরাক যাচ্ছি? কী দরকার? তাদেরকে এটাই বলার আমার স্বামী যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন, সে সময় আমার কাছে টাকা না থাকলে কী হত? আপনারা তো কেউ দিতেন না! আজ টাকা ছিল বলেই সেরা চিকিৎসা দিতে পেরেছি। তার জন্য যদি ইরাক যেতে হয়েছে, তাহলে আমি আবারও যেতে পারি! মৃত্যু ভয় তো কোনও দিন ছিল না।”

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

সত্যিই এণাক্ষী যাদের নিয়ে কাজ করছেন। যে কাজ করছেন তাতে মৃত্যু ভয় আছে বইকি! কড়া পুরুষ শাসনের হাত থেকে মেয়েদের তুলে অন্য জগতে নিয়ে আসা! তাও শুধু মাত্র শিক্ষাকে হাতিয়াড় করে! মুখের কথা নয়! সিরিয়ায় আটকে থাকা মেয়েটাই বলতে পারবে এই মুক্তির স্বাদ কতটা! তবে ‘Borders Without Barbed Wires‘-এর কাজ এখনও শেষ হয়নি! এণাক্সী শুরুর পথে অনেকটা হেঁটে ফেললেও, এখনও অনেক পথ তাঁকে যেতে হবে! বহু মেয়ে চোখে জল নিয়ে এখনও অপেক্ষায় আছে যে! এণাক্ষীকে থামলে চলবে না! বারে বারে পৌঁছে যেতে হবে গাজা কিংবা কাবুল কিংবা সিরিয়ার ঘরের গোপনে! চুপিসারে বাইরে নিয়ে আসতে হবে বাথরুমে বসে অনলাইন ক্লাস করা মেয়েটিকে!

বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
কলকাতায় বসে বিশ্বের আটকে থাকা মেয়েদের মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন ডক্টর এণাক্ষী সেনগুপ্ত!
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল