বর্তমানে এইচআইভি আক্রান্তদের প্রতিদিন অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART) নিতে হয়। ওষুধ বন্ধ হলেই শরীরে ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে শুরু করে এবং নানা জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নতুন এক সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে তৈরি এই থেরাপি বছরে একবার প্রয়োগ করলেই রোগীদের আর প্রতিদিন ওষুধ নিতে হয় না। প্রাথমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন—থেরাপি নেওয়ার পর অংশগ্রহণকারীরা দৈনিক ওষুধ বন্ধ করেন, এবং তবুও ভাইরাস দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রণে থাকে।
advertisement
অসাধারণ ফলাফল মিলল ট্রায়ালে
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ফ্রান্সিসকোর গবেষকেরা এই সমীক্ষা পরিচালনা করেন। ট্রায়ালটি ছোট হলেও ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। ১০ জন এইচআইভি আক্রান্তের উপর পরীক্ষা করা হয়। এই সময় তাঁদের নিয়মিত ART বন্ধ রাখা হয়। গবেষকেরা একটি যৌথ থেরাপি প্রয়োগ করেন—যার মধ্যে ছিল ভ্যাকসিন, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয়কারী ওষুধ এবং ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি। থেরাপি প্রয়োগের পর কয়েক মাস ধরে নিয়মিত পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, ১০ জনের মধ্যে ৭ জনের দেহে ভাইরাসের স্তর এতটাই কম যে তা কার্যত ক্ষতিকর নয়। একজন রোগীর ক্ষেত্রে ভাইরাস প্রায় ১৮ মাস ধরে দমন অবস্থায় ছিল—ফলাফল ছিল বিস্ময়কর।
পাকাপাকি বিদায় নেবে HIV? এক ডোজেই কাবু ভাইরাস! ছোট্ট গবেষণায় মিলল বিরাট সমাধান!
টি-সেলের লুকিয়ে থাকা শক্তি
বিজ্ঞানীদের মতে, এই যৌথ থেরাপি শরীরের টি-সেলকে এমনভাবে সক্রিয় করে যে ভাইরাস পুনরুত্থান করার সুযোগ পায় না। টি-সেল হল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ কোষ, যা দেহে প্রবেশকারী ভাইরাস বা জীবাণুকে নষ্ট করতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। এই ফলাফলকে তাঁরা “বিরল”, “উল্লেখযোগ্য” এবং “অত্যন্ত আশাপ্রদ” বলে অভিহিত করেছেন। গবেষকদের দাবি, এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে একটি ফাংশনাল কিউর-এর পথ দেখাতে পারে—অর্থাৎ রোগীরা নিয়মিত ওষুধ ছাড়াই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন। বর্তমান ART শুধু ভাইরাস দমন করে, নির্মূল করতে পারে না। নতুন থেরাপি ভবিষ্যতে ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূলেরও আশা জাগাচ্ছে।
এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৪ কোটি মানুষেরও বেশি মানুষ এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছেন। ART তাঁদের জীবনে বিপ্লব এনেছে এবং মৃত্যুহার বহু কমিয়েছে। কিন্তু সারা জীবন প্রতিদিন ওষুধ নিতে হয়—ওষুধ না নিলে গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই বছরে একবারের থেরাপি সফল হলে তা রোগীদের জীবনমান বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে, দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাবে, চিকিৎসার খরচ কমাবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর চাপ কমাবে।
