অনেক সৌন্দর্য অনুরাগীদের মধ্যে 'নো পু' অর্থাৎ শ্যাম্পু ছাড়া চুল ধোয়ার একটা প্রবণতা আজকাল খুব বেশিভাবে দেখা দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে বার বার বেকিং সোডা র নাম উঠে আসে। কারণ বেকিং সোডা বা সোডিয়াম কার্বোনেটে বেশি পরিমানে ph থাকে , প্রায় ৯ ভাগ ,তবে এটা চুলের জন্য ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
advertisement
বেকিং সোডাতে অনেক বেশি ph থাকে প্রায় ৯ ভাগ। সে তুলনায় আমাদের মাথার ত্বক এবং বাকি ত্বকে ph এর পরিমান প্রায় ৫.৫। স্কিনফিনিটি অ্যাসথেটিক স্কিন অ্যান্ড লেজার ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা , লেখক ,কসমেটিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়শ্রী শারদের মতে কোন শ্যাম্পু বা প্রোডাক্টে যদি এর চেয়ে বেশি পরিমানে ph থাকে , তাহলে সেটা চুলের ত্বকের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।
ডাঃ জয়শ্রী বলেন “বেকিং সোডা একপ্রকারের ক্লিনসিং এজেন্ট। এটি যথেষ্ট ক্ষারীয় হওয়ায় চুল থেকে আর্দ্রতা দূর করে এবং চুলকে খুব শুষ্ক ও ঝরঝরে করে তুলতে পারে। যদিও এটি চুলের শ্যাফ্ট থেকে সমস্ত তেল, ময়লা, ঘাম এবং মৃত কোষগুলিকে সরিয়ে দিয়ে মাথার তালু পরিষ্কার রাখে , একইসঙ্গে চুল এবং মাথার ত্বককে ডিহাইড্রেটেডও করে। প্রকৃতপক্ষে, এটি সাধারণ শ্যাম্পুর চেয়ে অনেক বেশি ক্ষারযুক্ত। আর তাই মাথার ত্বক ও চুলের জন্য বেশি ক্ষতিকারক। মাথার ত্বক এবং চুল থেকে তেল সরিয়ে ফেলার ফলে চুল ভেঙে যাওয়ার এবং মাথার ত্বকে জ্বালা অনুভব হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। "
এর উপকারিতা সম্পর্কে কোনও প্রকাশিত তথ্য বা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই বলে ডাঃ জয়শ্রী এটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
যদি আপনি নিজের ঝুঁকি নিয়ে এটি ব্যবহার করেও থাকেন , তবে মাথার ত্বক এবং চুলকে রক্ষা করতে ও চুলের আদ্রতা ফিরে পেতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমানে কন্ডিশনার বা তেল লাগান।
দ্য এস্থেটিক ক্লিনিকের পরামর্শদাতা , চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, কসমেটিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ডার্মাটো-সার্জন,ডাঃ রিঙ্কি কাপুর বলেছেন স্টেইনলেস স্টিলের সিঙ্ক, স্টোভ এবং গ্রিলের জন্য বেকিং সোডা একটি দুর্দান্ত ক্লিনার , নিমেষেই সব নোংরা, দাগ তুলে ফেলতে দারুণভাবে সক্ষম। কিন্তু এতটুকু বেকিং সোডাও চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
চুলের জন্য বেকিং সোডা কখনই উপকারী নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক বেকিং সোডা ব্যবহার করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে -
শুষ্কতা :
আমাদের মধ্যে অনেকেরই চুল অয়েলি হয়, আবার অনেকের হয়না। ভিন্ন ব্যক্তির চুলে ভিন্ন পরিমানের তেল থাকে। কারো ক্ষেত্রে চুল বেশি তৈলাক্ত হওয়ার জন্য চিটচিটে ভাব লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে ভুল করেও যদি কেউ বেকিং সোডা ব্যবহার করতে চান , তাহলে এতে আপনার চুলের ক্ষতি নিশ্চিত। তাই চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অবশ্যই চুলে তেল ব্যবহার করুন।
চুল ছিঁড়ে যাওয়া :
বেকিং সোডাতে অবস্থিত ছোট ছোট ক্রিস্টলগুলো ভেঙে গিয়ে চুলের নুনের আকার ধারণ করে। চুলের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সামান্য পরিমানে হলেও তা খুব সহজেই চুলের স্ট্র্যান্ডগুলিকে ছিঁড়ে ফেলতে পারে। তাই নিজের চুলের যত্নের জন্য নিজেই সতর্ক হয়ে বেকিং সোডার ব্যবহার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
মাথার ত্বকের সংবেদনশীলতা :
আপনার চুলের ত্বক যদি শুস্ক হয়ে থাকে বা আপনার যদি একজিমার মত কোন অসুখ থেকে থাকে , তাহলে চুলে বেকিং সোডা ব্যবহারের পরিণতি খুবই ভয়ঙ্কর হতে পারে। কারণ বেকিং সোডাতে খাদের পরিমান বেশি থাকায় এটা দিয়ে চুল ধুলে তা চুলের ত্বকে জ্বালাভাব সৃষ্টি করে এবং চুলকে অনেক বেশি রুক্ষ ও শুষ্ক বানিয়ে তোলে যা পরবর্তীকালে মেরামত করা কঠিন হয়ে পরে। ডাঃ কাপুর সতর্ক করে বলেছেন যদি আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয় বা চুলের ত্বকের কোন সমস্যা থাকে, তাহলে কখনই চুল ধোয়ার জন্য বেকিং সোডা ব্যবহার করা উচিত নয়।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।