#কলকাতা: একটানা ১০ ঘন্টা রেলের ওভারের বিদ্যুতের খুঁটির উপরে যুবক। রীতিমত নাস্তানাবুদ রেল পুলিশ ও জিআরপি। কপালে চিন্তার ভাঁজ রেল কর্তাদের। শেষ পর্যন্ত দমকল এসে উদ্ধার করল যুবককে। ১০ ঘণ্টা পর নিচে নেমে এসে শুধু নামটাই বললেন ওই যুবক"লাল বাবু"। বাড়ি কোথায় ? থানা কোথায় ? কোথা থেকে এসেছো? কিভাবে এখানে এলে? সব কথার একটাই উত্তর 'মধু বেরিয়া'। আর কোনো জবাব পাননি রেল পুলিশ কর্তারা।
advertisement
রাত তিনটে নাগাদ যখন নেমে আসেন লাল বাবু তখন প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে রেল পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। রেলের ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়। ভোর রাতেই বেশকিছু দূরপাল্লার ট্রেন শিয়ালদা ঢোকে। আবার লোকাল ট্রেন চলাচলের দিনের শুরু হয় ওই সময়ে। তার আগেই যুবককে নামিয়ে নিয়ে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস রেল কর্তাদের।
ঘটনার সূত্রপাত সন্ধের ঠিক আগে। দমদম ও বিধান নগর রোড স্টেশন এর মাঝে পাতিপুকুর এলাকা। সেখানে 8 নম্বর রেল লাইনের উপরে ওভারহেড পোস্টের উপর উঠে পড়েন এক যুবক। স্থানীয় দু-একজন দেখলেও আমল দেননি । ভেবেছেন একটু উঠে হয়তো নেমে যাবে। রাত আটটা নাগাদ ধীরে ধীরে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই এলাকায় জড়ো হন। সকলের মুখেই ছড়িয়ে পড়ে ওভারের বিদ্যুতের তারের খুঁটির ওপরে উঠে পড়েছে এক যুবক। মোবাইলে ছবি তুলতে ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা। খবর যায় রেল পুলিশ ও জিআরপি থানায়। তড়িঘড়ি তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। 8 নম্বর রেল লাইনের কাছে আপ রাইট বার এর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অন্য লাইন দিয়ে তখন রেল পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা হয়।
রেল পুলিশ এবং জিআরপি কর্তাদের অনেক অনুরোধ-উপরোধ কানে তোলেন না ওই যুবক। ছুটে আসেন স্টেশন ম্যানেজার অনিরুদ্ধ গাঙ্গুলী ও। টর্চের আলো ফেলে নানানভাবে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হয় যুবককে। কিন্তু ওই যুবক নাছোড়বান্দা একই জায়গায় বসে থাকে। রাত বারোটার পর দমকলকে খবর দেওয়া হয়। দমকল কর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। সেই সময় সমস্ত ওভারের তারেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। দমকলের পরামর্শ মেনে আনা হয় ওভারের তাদের কাজের জন্য ইনস্পেকশন কার। রেলের এই গাড়ির ওপরে রাখা হয় দমকলের লেডার। ওই লেডার উঠে পড়েন দমকলকর্মীরা। সঙ্গে বড় বড় দড়ি নিয়ে যান৷
ওই যুবককে ঘিরে ধরে দমকলকর্মীরা দড়ি দিয়ে "চেয়ার নট"তৈরি করেন। চেয়ার নোটের সাহায্যে যুবককে ইন্সপেকশন কারের ছাদে নামানো হয়। তারপর একই পদ্ধতিতে রেললাইনের ওপর নামানো হয়। প্রায় ১০ ঘন্টা বিদ্যুতের খুঁটির ওপর থাকার পর নিচে নেমে এসে কিছুটা হতভম্ব ওই যুবক। প্রাথমিকভাবে দেখে তাকে মানসিক রোগী বলেই মনে করছেন রেলের কর্তারা। নানানভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেও লাল বাবু ছাড়া আর কোনো তথ্যই বের করতে পারেনি রেল পুলিশ ও জিআরপি। তবে শেষ পর্যন্ত লালবাবু কে নামিয়ে আনায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন রেল কর্তারা। কারণ রেল পরিষেবা সেভাবে বড় ধাক্কা দিতে পারেনি লালবাবু।
