এদিন কলকাতা পুরসভার মূল অনুষ্ঠান ছিল লনে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নেতাজির একটি অমূল্য ছবি প্রকাশ করেন। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে মেয়রের চেয়ারে বসে কাজ করছেন সুভাষচন্দ্র বসু। কলকাতা পুরসভায় মেয়রের ঘরে যাওয়ার সিঁড়িতে লাগানো হয়েছে এই ছবিটি। এরপর পতাকা উত্তোলন করে মূলমঞ্চে ভাষণ দেন ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা পুরসভার ওতপ্রোত ভাবে জড়িত নেতাজির স্মৃতি। মেয়রের বক্তৃতায় সেই কথাই ফিরে আসে বারবার।
advertisement
১৯২৪ সাল থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত কলকাতা পুরসভায় ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা পুরসভায় চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৩০ সালের ২২ আগস্ট তিনি কলকাতা পুরসভার মেয়র হন। এরপর বিধানচন্দ্র রায় পুরসভার মেয়র হলে তিনি অব্যাহতি দেন। জানা যায়, পুরকর্মীদের খাবারের সংস্থান করতে কলকাতা পুরসভায় থাকাকালীন পুরসভার ক্যান্টিন চালু করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি নাকি নিজেও খেতে ভালবাসতেন।
কলকাতা পুরসভায় সুভাষচন্দ্র বসুর ক্যান্টিন চালু প্রসঙ্গ কিন্তু নেহাতই কাকতালীয় নয়। জানা যায়, ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর খাদ্য তালিকায় মিষ্টি থাকতই। খিচুড়ি ছিল তাঁর অন্যতম প্রিয় খাবার। মধ্যাহ্নভোজে আম বাঙালির মতো ভাত, ডাল, তরকারি বেশি পছন্দ করতেন নেতাজি। শেষের দিকে লিভারের সমস্যার কারণে বেশির ভাগ সময় লেবু,লবন, চিনি, জলই খেতেন।
কিন্তু এখন কেমন আছে নেতাজির তৈরি এই ক্যান্টিন?
বর্তমানে ক্যান্টিন এবং পুরসভার গেস্ট হাউস মিলিয়ে ২৭ জন কর্মী কাজ করেন। এদের অধিকাংশই চুক্তিভিত্তিক কর্মী। এঁদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ১৯৬৪ সাল থেকে কাজ করছেন সুধীর পাল কিংবা ১৯৭১ সাল থেকে কাজ করছেন বীরেন জানা। ক্যান্টিনের ফুল মালা দেওয়া নেতাজির ছবিতে প্রণাম করে বীরেন বাবু বলেন, "শুনেছি ১৯৩০ সালে মেয়র হওয়ার পর এই ক্যান্টিন চালু করেছিলেন তিনি। আজও সেই ক্যান্টিনের দৌলতেই আমরা দুমুঠো অন্ন জোগাচ্ছি।"
দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যান্টিনে কর্মরত কমল পাল। তিনিও ক্যান্টিনের হাল ফেরাতে এর আধুনিক সংস্কার করার দাবি জানান। পাশাপাশি, সব কর্মীরাই পুরসভার ক্যান্টিনের উন্নতি হোক এটাই চান। যাতে কর্মী ও তার পরিবারের সকলের রুটি রুজি অটুট থাকে।
শোনা যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সব থেকে প্রিয় পানীয় ছিল চা। তিনি নাকি দিনে ২০-২৫ বার চা খেতেন। তিনি সবসময় সুপারি চিবোতেন। অনেক বারণ করা সত্ত্বেও শুনতেন না। এমনকি ব্যাডমিন্টন খেলার সময়ও তিনি সুপুরি খেতেন। পরে অবশ্য সুপারি সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে হরিতকি খেতেন বলে শোনা যায়।
প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময়ে কফি হাউস থেকে সূর্য সেন স্ট্রিটের শরবতের দোকান সব জায়গাতেই যাতায়াত ছিল ছাত্র সুভাষের। কফির সঙ্গে প্রিয় ছিল কাটলেট। সূর্যসেন স্ট্রিটের ফেভারিট কেবিনও প্রিয় গন্তব্য ছিল নেতাজির। বসতেন চার নম্বর টেবিলে। এই টেবিলে বসেই তিনি শুনতেন নজরুলের গান।
শোনা যায়, কলেজস্ট্রিটের অন্যতম বাঙালি খাবারের দোকান স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলেও যেতেন নেতাজি। এখানে নিজের হাতে শতরঞ্চি পেতে বন্ধুদের নিয়ে দুবেলা ভরপেট মাছ ভাত খাইয়েছেন নেতাজি বহুবার। এছাড়াও ভীমচন্দ্র নাগের সন্দেশ খুব প্রিয় ছিল বলে শোনা যায়।