ইলেকশন কমিশন ঘেরাও থেকে সংবিধান সংশোধনী বিল পেশের দিন অবধি পারফরম্যান্স ভাল বলেই মনে করছে বাংলার শাসক দল। রাজনৈতিক সূত্রে খবর, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে দলনেতার দায়িত্ব দিয়ে এনে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে তৃণমূল। এর আগে বঞ্চনা ইস্যুতে জাতীয় স্তরে বারবার লড়াই করেছেন অভিষেক। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে সামনে এনে তাই জাতীয় স্তরে আক্রমণ বাড়াছে জোড়াফুল শিবির।
advertisement
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রতিদিন চলছে সংসদের কাজের পরিকল্পনা। দলীয় সাংসদদের এর আগেও মমতা বন্দোপাধ্যায় যে তাদের পারফরম্যান্সে নজর রাখছেন তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নিজেদের এলাকার ইস্যু ও সর্বোপরি মানুষের ওপর প্রভাব পড়ছে এমন ইস্যু বাছাই করে আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। যদিও কো-অর্ডিনেশনের অভাবে তা হচ্ছে না বা বিলম্ব হচ্ছে বলে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন চলছিল। এবার অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে সামনে এনে জাতীয় রাজনীতিতে ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রতিদিন পরিকল্পনা করেই বাংলা সম্পর্কিত ইস্যু নিয়ে এগোচ্ছে তারা। দলীয় সূত্রে খবর, বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে সাংসদের পারফরম্যান্স আরও জোরালো করতে চায় শাসক দল।
লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা গোটা অধিবেশনেই এসআইআর ও বাংলা ভাষা ইস্যুতে লাগাতার বিক্ষোভ দেখিয়ে গিয়েছেন। অধিবেশনের দিনগুলিতে সকালে মকরদ্বারের সামনে তৃণমূল সাংসদদের প্ল্যাকার্ড হাতে টানা স্লোগান, কখনও বাংলায় গান বা আবৃত্তি নজর কেড়েছিল সব রাজনৈতিক মহলের।বিহারে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার নামে নির্বাচন কমিশনের ভোটচুরির চক্রান্তে বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব ছিল বাংলার শাসকদল। অন্য বিরোধীরাও এই ইস্যুতে তৃণমূলের প্রতিটি পদক্ষেপ সমর্থন করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শমতো বিজেপি ও কমিশনের যৌথ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে এই আন্দোলন সংসদের বাইরেও নিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা। নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচির প্রধান উদ্যোক্তা ছিল তৃণমূলই।
বাংলা-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন হাতে সংসদ থেকে মিছিল শুরু করেন বিরোধীরা। দুই কক্ষের কয়েকশো বিরোধী সাংসদের সেই বিক্ষোভ মিছিলেও নজর কেড়েছিল তৃণমূল। তৃণমূলের অভিযোগ, তাঁদের বাধা দিতেই নজিরবিহীনভাবে মিছিলে হামলা চালায় অমিত শাহর পুলিশ। মহিলা সাংসদদের চরম হেনস্থা করে থানায় বসিয়ে রাখা হয়। নির্বাচন কমিশনের সামনে সেদিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এড়িয়ে পৌঁছে যান সাংসদ দোলা সেন, মমতাবালা ঠাকুর ও প্রতিমা মণ্ডল।
বাদল অধিবেশনে বিরোধীদের উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঘোষণা ও মনোনয়ন পর্বে তৃণমূল সাংসদরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষত বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটে না থাকা আম আদমি পার্টির সমর্থন নিশ্চিত করতে তৃণমূলের ভূমিকা ইঙ্গিতবাহী। উপরাষ্ট্রপতি পদে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সুদর্শন রেড্ডির নাম ঘোষণার দিন সকালে আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়ি গিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।
এরপরই বিরোধী প্রার্থীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত জানায় আপ।চলতি অধিবেশনের একেবারে শেষলগ্নে গুরুত্বপূর্ণ বিল এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলের নামে কার্যত সুপার ইর্মাজেন্সি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে মোদি সরকার, অভিযোগ তৃণমূলের। বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও মন্ত্রী ৩০দিনের বেশি জেলে থাকলে পদ হারাতে হবে। এটিকে কালো দিনে কালো বিল বলে কড়া আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এসআইআর থেকে নজর ঘোরাতেই কাপুরুষের মতো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিল পেশ করেছেন। তৃণমূলের অভিযোগ লোকসভায় বিল পেশের সময় তৃণমূলের মহিলা সদস্যদের উপর হামলা করেন সংসদীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ও বিজেপি সাংসদ রভনিত বিট্টু। তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খানকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। খোদ সংসদীয় মন্ত্রীর আক্রমণের বিরুদ্ধে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লিখেছেন দলের ডেপুটি লিডার শতাব্দী রায়, মিতালি বাগ ও মহুয়া মৈত্র।
বৃহস্পতিবার চলতি অধিবেশনের শেষদিনেও সংবিধান সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে রাজ্যসভায় তুমুল বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদরা। রাজ্যসভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘তড়িপার’ প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে স্লোগান ও বিক্ষোভে প্রতিবাদ জানান দলের উচ্চকক্ষের সদস্যরা। প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে ওয়েলে নেমে ও সভাকক্ষে বিরোধী-স্বরকে তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সদস্যরাই।চলতি অধিবেশনের মূল্যায়ন করে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সরাসরি আক্রমণ করেছেন মোদি সরকারকে। তাঁর যুক্তি, সংসদ সঠিকভাবে চলতে না পারার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব কেন্দ্রের।
মোদি সরকারই এখন ক্ষমতায়, তারাই সংসদ চালানোর দায়িত্বে, ফলে তাদেরই জনগণকে জবাবদিহি করতে হবে। সংসদ অচল করে নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে এই সরকার। বাংলার শাসক দলের বক্তব্য, আক্রমণাত্মক মেজাজে সরাসরি সরকারকে নিজেদের ‘প্রতিবাদী বার্তা’ পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। এবারের অধিবেশনে তৃণমূলই যে বিরোধী শিবিরের ‘প্রধান মুখ’ তা প্রতি পদক্ষেপে বুঝিয়ে দিয়েছেন দলের দুই কক্ষের সদস্যরা।