উত্তর কলকাতা থেকে প্রায় তিন দশক ধরে কাউন্সিলর নির্বাচিত অতীন দীর্ঘদিন ধরেই মেয়র পদপ্রার্থী ছিলেন৷ যদিও তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি৷ জোটেনি অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও৷ সেই ক্ষোভের কথাই এবার শোনা গেল অতীন ঘোষের গলায়৷ শুক্রবার তিনি বলেন, 'এত বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনও দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলিনি৷ অনেক বঞ্চনার স্বীকার হতে হয়েছে, রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা করা হয়েছে৷ আমাদের মতো কর্মীরা আশা করে দলের শৃঙ্খলা যাঁরা প্রকাশ্যে ভঙ্গ করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ তা না হওয়ায় ক্ষোভগুলো প্রকাশ্যে আসছে, বেড়ে যাচ্ছে৷'
advertisement
দলে নতুনদের দাপটে যে পুরোনরা কোণঠাসা, তাও স্পষ্ট অতীনের কথায়৷ তিনি বলেন, 'দলের দরজা হাট করে দেওয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন সময়ে যাঁরা দলকে, নেত্রীকে চূড়ান্ত আক্রমণ করেছেন, তাঁরাও দলে এসে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ এগুলো যন্ত্রণা দেয়৷ ফলে আমাদের মতো যাঁরা দলটা শুরু থেকে করছেন তাঁদের অনেকেই দলের কাজকর্মে হতাশ৷' মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে দলের যাঁরা থাকেন, তাঁেদর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই তৃণমূল নেতা৷ তিনি বলেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি কিছু মানুষের উপরে নির্ভর করেন৷ তাঁরা যদি নিজেদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতেন তাহলে দলের আজকে এই অবস্থা হত না৷'
বঞ্চিত হয়েছেন, অভিযোগ অতীনেরও
তৃণমূলের বহু নেতাই পরোক্ষে প্রশান্ত কিশোরের দলের কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে বা আড়ালে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ রাখঢাক না করে অতীন ঘোষ এ দিন বলেন, 'কোনও দিন প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট টিমের অধীনে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা নেই৷ আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষক, পথপ্রদর্শক ছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা৷'
একই সঙ্গে অতীন ঘোষ স্বীকার করে নিয়েছেন, শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়লে তৃণমূলের ক্ষতি হবেই৷ তাঁর কথায়, 'জনভিত্তি আছে, দলে এরকম নেতার সংখ্যা কম৷ শুভেন্দু অধিকারী তাঁদের মধ্যে অন্যতম৷ ফলে তাঁর মতো নেতা দল ছেড়ে চলে গেলে তো দলের ক্ষতি হবেই৷' একই সঙ্গে বিধায়ক মিহির গোস্বামীর দল ছাড়া নিয়েও প্রশ্ন তুলে অতীন ঘোষ বলেছেন, 'মিহিরের মতো ভাল, সৎ ছেলে কেন দল ছেড়ে চলে গেল এবং দল কেন তাঁকে ধরে রাখতে পারল না এটাও আমার কাছে খুব বিস্ময়ের বিষয়৷'
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হওয়া, বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের ক্ষোভপ্রকাশ, বিধায়ক মিহির গোস্বামীর বিজেপি-তে যোগদানের পর এবার উত্তর কলকাতার নেতা অতীন ঘোষের গলাতেও ক্ষোভের সুর৷ ফলে দলের অন্দরে পুরোন নেতাদের ক্ষোভ সামাল দেওয়াটাই এখন তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷