কিন্তু কেন তিনি দল ছাড়লেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে লোকসভা ভোটের আগে শাসক দলের অস্বস্তি কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছেন তাপস রায়৷ বরানগরের প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, ‘চারদিকেই শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি৷ বিশেষত সন্দেশখালির ঘটনা আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল৷ মনে হয়েছিল এই দল আমার জন্য নয়৷ ‘
আরও পড়ুন: তৃণমূল ছাড়লেন তাপস রায়! দলের বিরুদ্ধে উগরে দিলেন ক্ষোভ, এ বারে অন্য দলে যোগ?
advertisement
শুধু তাই নয়, গত ১২ জানুয়ারি তাঁর বাড়িতে ইডি অভিযান নিয়েও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছন তাপস রায়৷ বিধানসভায় বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দলেরই কয়েকজন আমার বাড়িতে ইডি-কে পাঠিয়েছিল৷ সেদিন অন্যান্য দলের সব নেতারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন৷ অথচ আজ ৫২ দিন ধরে আমার দল আমার পাশে দাঁড়ায়নি৷ একটা কথাও কেউ বলেননি৷ এমন কি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এই ৫২ দিনে আমাকে একটা ফোন করেননি, বা আমাকে ডাকেননি৷ আমার স্ত্রী, মেয়েকে সান্ত্বনা পর্যন্ত দেননি৷ তাঁরা ওই ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল৷’
তৃণমূল সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, তাপস রায়ের বাড়়িতে ইডি হানার পর তাঁর ফোন ইডি বাজেয়াপ্ত করেছিল৷ দিন দুয়েক পরে ফোন দুটি চালু হলে দলের পক্ষ থেকে তাপস রায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়৷ কিন্তু তখনই তাপসের কথায় দলীয় নেতৃত্ব বুঝে গিয়েছিল যে কোনও রকম চাপে পড়েই তিনি তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন৷
তাপস অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, ‘আমার আরও একটি মোবাইল ছিল, ল্যান্ডলাইন রয়েছে৷ আমি বিধানসভাতেও এর মধ্যে এসেছি, বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সরকার, দলের কাজ করেছি৷ ইডি হানার পর আজকে ৫২ দিন, তার মধ্যে কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেননি৷ ফলে যাঁরা এ সব বলছেন, মনে হয় ঠিক বলছেন না৷’
প্রাক্তন দলনেত্রীর বিরুদ্ধে অভিমানের সুরে তাপস আরও বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় শাহজাহানের কথা বললেন৷ অথচ আমার বাড়িতে ইডি হানার কথাটাও তিনি তুলতে পারতেন৷’
দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দলত্যাগী নেতা বলেন, ‘কিছু মানুষের কৃতকর্মের জন্য মানুষ আমাদের সবাইকেই দুর্নীতিগ্রস্ত ভাবছে৷ অথচ দলে তো ভাল মানুষও আছেন৷’
ইতিমধ্যেই কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে বিজেপি-র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাপস রায়ের নাম শোনা যাচ্ছে৷ তবে তিনি অন্য দলে যোগ দেবেন কি না, ‘সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ জবাব দিয়ে তাপস রায় বলেন, এ বিষয়ে এখন আমি একটি কথাও বলব না৷ আমি এখন মুক্ত পাখি৷’
১৩ বছর ধরে বরানগরের বিধায়ক ছিলেন তাপস রায়৷ তৃণমূলের অন্যতম পুরনো এবং আস্থাভাজন নেতা ছিলেন তাপস৷ বিধানসভায় মুখ্য সচেতকের মতো দায়িত্বও সামলেছেন৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁর মতো একজন নেতার দলত্যাগ নিঃসন্দেহে তৃণমূলের কাছে বড় ধাক্কা৷