সম্প্রতি, সংসদে এক প্রশ্নের জেরে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, একশো দিনের কাজে রাজ্যকে বকেয়া ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপরেই গত ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদার। সেখানেই তারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে রাজ্যেকে একশো দিনের কাজে বকেয়া টাকা দেওয়ার আগে, ভুয়ো জব কার্ড থেকে রাজ্যের ভাঁড়ারে যাওয়া টাকার হিসাব নেওয়ার জন্য দাবি জানান।
advertisement
আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ফের বড় বিস্ফোরণ! মুখ খুললেন দিলীপ- শুভেন্দু!
শুভেন্দুর দাবি, রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনুসারেই গত ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের একশো দিনের কাজে ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্য ৪ লাখ ৯ হাজার। রাজ্য গত ১০ বছর ধরে এই ভুয়ো জব কার্ডের ভিত্তিতে কেন্দ্র থেকে টাকা নিয়েছে। যার পরিমান কয়েক হাজার কোটি। আগে, 'অবৈধ' ভাবে নেওয়া সেই টাকা ফেরৎ দিক রাজ্য। তারপর, রাজ্যের দাবি মেনে বকেয়া টাকা দিক কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: 'ভাল লাগছে', এক সিদ্ধান্তেই পাল্টে গেল অনুব্রত মণ্ডলের মুড! কী এমন ঘটল?
শুধু তাই নয়,শুভেন্দুর আরও দাবি, আধার সংযোগ খুঁজতে গিয়ে ভুয়ো জব কার্ডের হদিশ যেভাবে সামনে আসছে, তাতে শেষ পর্যন্ত এই ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্যা ৮ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে, একশো দিনের কাজের দরুন কেন্দ্র থেকে 'বেআইনি' ভাবে নেওয়া এই বিপুল অঙ্কের টাকা সুদ সহ কেন্দ্রকে ফেরৎ দিতে রাজ্যকে বাধ্য করা হোক।
আর ফেরৎ না দিলে রাজ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করুক কেন্দ্র।
যদিও, শুভেন্দুর এই দাবিকে খারিজ করে তৃণমূলের কুণাল ঘোষ বলেন, ''শুভেন্দু অধিকারী আগে কেন্দ্রকে বকেয়া টাকা দেওয়ার কথা বলুন। এটা কেন্দ্রের টাকা। কারও পৈত্রিক টাকা নয়, যে বিজেপি নেতারা সেই টাকা আটকে রাখবে। টাকা আটকে রেখে বড়বড় কথা বলবেন, এটা রাজ্যের মানুষ মেনে নেবে না। "
ভুয়ো জব কার্ড প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, জব কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগ না থাকার কারণেই তৈরি হয়েছে এই বিপত্তি। নানা কারণে সেই লিঙ্ক করা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। ভুয়ো জব কার্ড নিয়ে যা বলা হচ্ছে তার সবটা ঠিক নয়।
যদিও, বিরোধী দলনেতার দাবি, আধার কার্ডের সঙ্গে জব কার্ডের লিঙ্ক করা যাচ্ছে না দফতরের দীর্ঘদিনের দুর্নীতির কারণেই। শুভেন্দুর অভিযোগ, তৃণমূলের নেতারা ১৮ বছরের নীচে বয়স হওয়া সত্বেও বহু নামে, বেনামে জব কার্ড তৈরি করে সেই কার্ডের ভিত্তিতে টাকা তুলতেন। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামে জব কার্ড তৈরি করে একশো দিনের টাকা আত্মস্যাৎ করার ঘটনাও সামনে এসেছে। কাজের জন্য ভিন রাজ্যে চলে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক এমনকি মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের বাসিন্দা যিনি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশি, তার নামেও জব কার্ড করে একশো দিনের অর্থ লুঠ করেছে তৃণমূল। এখন, জব কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তি করতে গিয়েই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ছে। আধার সংযুক্তি না করতে পারার কারণ সেটাই।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে একশো দিনের টাকা থেকে শুরু করে আবাস যোজনা নিয়ে রাজ্যের দুর্নীতিকে সামনে আনতেই রাজ্য বিজেপির এই কৌশল। বিজেপির এই কৌশলে মানুষের রায় কোন দিকে যায় সেটাই এখন দেখার।