সুকান্ত লেখেন, 'গত ১১ বছর ৪ মাসে একটা বড় শিল্প নেই এই রাজ্যে। এখানকার ছেলেমেয়েরা রোজগারের জন্য গুজরাত,ব্যাঙ্গালুরু,কেরল,গোয়া, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীরে চলে যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে। নিয়োগ দুর্নীতির কারণে শিক্ষক বেকার চাকরিপ্রার্থীরা ৫৩০ দিনের ওপর অনশন আন্দোলন করছেন, লড়াই করতে করতে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। স্যাট ও হাইকোর্টের নির্দেশের পরও সরকারি কর্মচারীদের ডিএ নেই। টাকার অভাবে নিয়োগ বন্ধ, শিক্ষকের অভাবে স্কুল বন্ধ হচ্ছে। ৫ লাখ সরকার পদ অবলুপ্ত, চুক্তিভিত্তিক কর্মী দিয়ে সরকারি অফিসগুলো কোনওমতে চলছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা পেনশনের জন্য আন্দোলন করছেন, কেউ আত্মঘাতী হতে বাধ্য হচ্ছেন।'
advertisement
আরও পড়ুন: মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারণ রাজ্যের! আগামিকালই দায়িত্বে নতুন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল
দীর্ঘ পোস্টে সুকান্ত মজুমদার লেখেন, 'সরকারের মন্ত্রী, শাসক দলের নেতারা একটার পর একটা দুর্নীতি করেছেন ১১ বছর ধরে, এখনও করছেন। পঞ্চায়েত স্তরের নেতা থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি তৈরি করেছেন। আর এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে বিরোধী কন্ঠকে পার্টি ক্যাডার দিয়ে বাহুবলে, কখনও পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় কাজে লাগিয়ে মিথ্যে মামলা দিয়ে দমন করা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষিত ভদ্র মানুষ যারা রাজনীতির সাতে পাঁচে থাকেন না তারা ভদ্রতার সৌজন্যে মুখ বন্ধ করে নিয়েছেন। অর্থাৎ যা হচ্ছে সেটাই ভাল। সমাজের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকদের একশ্রেণী শাসকের বশ্যতা স্বীকার করে হীরক রাজার দরবারের মতো হ্যাঁ তে হ্যাঁ না তে না বলে মাথা নাড়িয়ে চলেছেন। প্রতিবাদ করলে পাছে না মাসিক ভাতাটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। বাকি যাঁদের মেরুদণ্ড অবশিষ্ট আছে প্রতিবাদের ইচ্ছে আছে, তারা কাজ হারাবার ভয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। কারণ তাঁরা নিরুপায় দিনান্তে সকলের সংসার আছে পেট আছে।'
আরও পড়ুন: বাতিল ১৪৫ ট্রেন, ভারতীয় রেলের তালিকায় চোখ রাখুন স্টেশনে যাওয়ার আগেই!
একসময় পশ্চিমবঙ্গ ভারতকে পথ দেখিয়ে এসেছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে আত্মবলিদান দিয়েছে বাঙালি জাতি। সাহিত্য, সঙ্গীত,নাটক,সিনেমা,থ্রিয়েটার,বাদ্যকার,খেলাধুলা, বিজ্ঞান চর্চা, দর্শন চর্চা একটার পর একটা জগত বিখ্যাত উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্ম দিয়েছে এই বাংলার পূর্নভূমি। আজ আমাদের সংস্কৃতির অবশিষ্ট বলে যা আছে 'খেলা হবে'। গরু চোর নেতা, চাকরি চোর মন্ত্রী, ৫০০ টাকার ভোট ব্যাঙ্ক, ২৮ টাকার মহুয়া আর বিলিতি মদের শিল্প। সন্ধ্যা হলে পাড়ায় পাড়ায় আসর, কারণ এটাই রাজ্যের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। প্রত্যেকদিন বোমের শব্দ, বন্দুকের কারখানা, মহিলাদের সম্মানহানি, খুন, রক্ত অভ্যেসে পরিণত হচ্ছে। আর ভোট এলেই ক্ষমতা দখলের জন্য মানুষে মানুষে বিভেদ মারামারি ঝামেলা রক্ত-খুন-সন্ত্রাস। একবারও কেউ ভাবছে না, ভবিষ্যত প্রজন্ম বর্তমানের থেকে কী শিখবে?
এই তালিকায় নতুন সংযোজন ক্লাব খয়রাতি। খেলাধুলোর জন্য বছর বছর কোটি কোটি ক্লাবগুলোতে দেওয়ার পর জাতীয় স্তরে আন্তর্জাতিক স্তরে বাঙালির ছাপ দিন দিন শূন্যের দিকে যাচ্ছে। যারা উঠে আসছেন তারা নিজের যোগ্যতায়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃতিত্ব বলতে বিগ জিরো।
আরও পড়ুন: ঝাঁ চকচকে রাস্তা থেকে বিশালাকার তোরণ! 'উন্নয়নের' জোয়ার অনুব্রতর গ্রামে
এখন পুজোর জন্য ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা সঙ্গে ৬০% বিদ্যুতের বিল মুকুব। ৪৩০০০ হাজার ক্লাবকে ৬০০০০ করে অনুদান মোট ২৫৮ কোটি টাকা খরচ সঙ্গে বিদ্যুতের বিল মুকুব মিলিয়ে মোট প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ কোটির খরচ। অন্যদিকে বিদ্যুত দফতরের কোটি কোটি টাকা পূর্বের বকেয়া, স্বাস্থ্যে বকেয়া, শিক্ষায় বকেয়া, পরিকাঠামোগত দিকে বকেয়া, বেতনে বকেয়া, ডিএ তে বকেয়া, পেনশনে বকেয়া। ক্লাবে অনুদান সরকার দিক এতে আপত্তি নেই। সরকার সামর্থ হলে দিক ক্ষতি নেই । কিন্তু একটা সরকারের মৌলিক যে দায়িত্বগুলো রয়েছে সেগুলো সামলে নিয়ে যদি খয়রাতি করত তাতে আপত্তির কিছু থাকত না, কিন্তু বাস্তবে যা দেখা যাবে তা হল পুজো মন্ডপে মন্ডপে মা দুর্গার আগে মমতা বন্দনা, এটা আপত্তিকর।'
রাজ্য সরকারকে ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে সুকান্ত বলেন, 'টাকা তো সরকারের নিজের নয় বা তৃণমূল দলের নয়। এটা জনগণের ট্যাক্সের টাকা। আর সেই টাকার অপব্যবহার সত্যিই চিন্তার বিষয়। সমগ্র রাজ্যটাই বর্তমানে ভয়ঙ্কর ধ্বংসাত্মক খেলার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যার সাময়িক প্রভাব কম হলেও ভবিষ্যতের প্রভাব অত্যন্ত খারাপ। সময় এসেছে বিজেপি,তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস ভেদাভেদকে দূরে সরিয়ে রেখে বাংলার স্বার্থে ১০ কোটি বাঙালির স্বার্থে সকল শ্রেণীর সকল স্তরের মানুষকে একত্রিত হয়ে ভয়ের গ্যাস চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভুল নীতি,খামখেয়ালিপনা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং সরকারকে আয়না দেখানো। আজ না করতে পারলে ভবিষ্যতের কাছে আমাদের জবাব দেওয়ার মত কোনও জায়গা থাকবে না'।