নদী ভাঙন রোধ করে রাজ্যকে এই বিপদ থেকে বাঁচাতে কেন্দ্রের সহযোগিতা চায় রাজ্য৷ সদ্য সমাপ্ত বিধানসভার অধিবেশনে গঙ্গা সহ রাজ্যের একাধিক নদীর ভাঙন রোধে আরও কেন্দ্রীয় সহযোগিতা দরকার বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের স্বার্থে এই বিষয়ে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলকে দিল্লিতে পাঠিয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: সাকেতের গ্রেফতার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, অভিযোগ তুলে সরব হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস
advertisement
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়েই বিধানসভায় রাজ্যের নদী ভাঙন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রস্তাব আনে সরকার। সেই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাজ্য বিধানসভা থেকে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল দিল্লি গিয়ে রাজ্যের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সহায়তা পেতে দাবি জানাবে। সভায় বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতিতে বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা নীতিগত ভাবে সরকারের আনা এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন।
কিন্তু, এর পরেই বিধানসভার বাইরে জলঘোলা হতে শুরু করে। বিজেপি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ বিষয়ে বিরোধী দলনেতাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। বিজেপির এই 'বেসুরো' মনোভাব টের পেয়েই তৎপর হন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ পরের দিনেই অধিবেশন চলাকালীন তিনি নিজে বিজেপির মুখ্য সচেতকের আসনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। মনোজই শোভনদেবকে জট খুলতে সরসরি বিরোধী দলনেতার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এর পরেই, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৩ ডিসেম্বর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ফোন করেন শোভনদেব। মঙ্গলবার বিধানসভায় আম্বেদকরের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর পর, বিরোধী দলনেতাকে টেলিফোন করে কথা বলার বিষয়টি জানান শোভনদেব।
শোভনদেব জানান, বিরোধী দলনেতা তাঁর কাছে সরকারি প্রস্তাবের খসড়া চেয়েছেন। সেই লিখিত প্রস্তাব হাতে পেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি তাঁর মতামত জানিয়ে দেবেন।
শোভনদেবের মতে, প্রতিনিধি দলে বিজেপিকে পাশে পাওয়ার বিষয়ে তাঁরা আশাবাদী। বিরোধী দলনেতা যে লিখিত প্রস্তাব দেখতে চেয়েছেন, সেটাও খুবই সঙ্গত। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ফিরলেই সর্বদলীয় প্রস্তাবের বয়ান নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত বিরোধী দলনেতাকে তা পাঠানো হবে। বিজেপি এবং অন্যান্য সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকার সর্বদলীয় প্রস্তাবের বয়ান চূড়ান্ত করতে চায় বলেও জানিয়েছেন শোভনদেব।
আরও পড়ুন: দেখে যান গঙ্গাসাগর মেলা, পুষ্করের ব্রহ্মা মন্দিরের পুজারীদের আমন্ত্রণ মমতার
পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব আরও বলেন, তিনি চান রাজ্যের স্বার্থে এই প্রস্তাব প্রকৃত অর্থেই সর্বদলীয় প্রস্তাব হোক। বিধানসভায় একজন সদস্যের দল হলেও, আই এস এফ- এর বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি ও পাহাড়ের বিধায়কদের এই প্রতিনিধি দলে সামিল করতে চান শোভনদেব।
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে শুরু করে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ আটকে দিয়ে রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে কেন্দ্র। এতে রাজ্য বিজেপি-র ভূমিকাই প্রধান। রাজনৈতিক কারণে রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব শাসক দল। এবার, রাজ্যের স্বার্থে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে বিজেপিকে সামিল করে, রাজ্য বিজেপিকে পাল্টা প্যাঁচে ফেলতে চায় তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে সফল হতে শাসক দল কতটা মরিয়া তা বিরোধী দলনেতাকে পরিষদীয় মন্ত্রীর ফোন করা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়।