রতন দোলুই। মনের যন্ত্রণা ভাষা পেয়েছে গানে। সুরে। ছোট থেকে বেড়ে ওঠা সোনাগাছির যৌনপল্লিতে। মা ছিলেন যৌন কর্মী। বুঝতে শেখার পর লড়াই ছিল আরও কঠিন। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সোশাল ওয়ার্কে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রিধারী। উচ্চশিক্ষিত। মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে আজও সোনাগাছিতে রতন। যৌনকর্মীদের, তাঁদের সন্তানদের জন্য লড়াই জারি। কর্মস্থল দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি।
advertisement
প্রায় পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছেন মা। সোনাগাছি ছেড়েছে আরেক ভাই। পতিতার সন্তান বলে বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে অনেক। তবু মা যৌন কর্মী বলতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠা নেই। কোনও লজ্জা নেই। কোনও গ্লানিও নেই। সর্গবে তিনি বলেন, ''আমি যৌনকর্মীর ছেলে। এই পরিচয়ে আমি গর্বিত।'' মায়ের পরিচয় দিতে গিয়ে একবারও কুন্ঠাবোধ করেন না তিনি। বরং অন্যদের মুখের উপর জবাব হয়ে দাঁড়ায় তাঁর এই সদর্পে পরিচয় ঘোষণা। মনের কোনে অদম্য জেদ। কারণ মা যে শিখিয়েছেন মানুষের উপকারই বড় ধর্ম।
রতনের মা থাকতেন বীরভূমে। তিন ভাই বোনকে নিয়ে অভাবের সংসার। তাই বীরভূম থেকে সোজা বউবাজার। যৌনকর্মীর পেশা বেছে নিয়ে ৩ ভাইবোনকে শিক্ষিত করেছেন। রতন দলুই মায়ের কথা বলতে বলতে মনমরা হয়ে যান। মা আজ আর নেই। তবে মায়ের অবিরাম স্বার্থত্যাগেই আজ তিনি এই জায়গায়। যৌনকর্মী ছিলেন তাঁর মা। সেই পরিচয় তিনি কখনও গোপন করেননি। বছর তিরিশের রতন সোশ্যাল ওয়ার্ক-এ মাস্টার ডিগ্রী করেছেন। এখন কর্মস্থল দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা সোনাগাছির যৌনপল্লীতে। মা যৌনকর্মী ছিলেন। সেটা বলতে তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয় না কখনও। তিনি বলেন, 'যৌন কর্মীদের ছেলে মেয়েরা বাজারে পচা-গলা মাছ কিংবা মাংসের মতো নয়। তারা প্রত্যেকে এই সমাজের মানুষ। তারাও সমাজের প্রতিটি কর্মে অংশ নিতে জানে। তবুও পেছনে অনেকেই পতিতার সন্তান বলে বিদ্রুপ করে। আমার তাতে কিছু এসে যায় না।'
এখন পতিতাদের নিয়েই রিসার্চ-ওয়ার্ক করছে চলেছেন রতন। ছোটবেলায় বীরভূম জেলা থেকে বৌবাজারের যৌন পল্লীতে কাজ করতে এসেছিলেন তাঁর মা। সেখানে খুব ভাল রোজগার ছিল না। তাই পরে সেখান থেকে সোনাগাছিতে চলে আসেন তিনি। রতনের কথায়, তাঁর মা, তিন ভাই, তিন বোনকে শিক্ষিত করার জন্যই তাঁদের মা এসেছিলেন যৌন পল্লীতে। সেই রোজগারের টাকাতেই রতনের এক মামা আজ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে কর্মরত। তিনি কর্মসূত্রে বর্ধমানে থাকেন।
প্রাণপাত করে ছেলে রতনকেও শিক্ষিত করেছেন মা। সেই ছেলে এখন পতিতাদের নিয়ে রিসার্চ করেছেন। সঙ্গী গান। তাতে অবশ্য পেট চলেনা। তবে মুগ্ধ শ্রোতা সোনাগাছি।