রতন দলুই মায়ের কথা বলতে বলতে মনমরা হয়ে যান। মা আজ আর নেই। তবে মায়ের অবিরাম স্বার্থত্যাগেই আজ তিনি এই জায়গায়। যৌনকর্মী ছিলেন তাঁর মা। সেই পরিচয় তিনি কখনও গোপন করেননি। বছর তিরিশের রতন সোশ্যাল ওয়ার্ক-এ মাস্টার ডিগ্রী করেছেন। এখন কর্মস্থল দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা সোনাগাছির যৌনপল্লীতে। মা যৌনকর্মী ছিলেন। সেটা বলতে তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয় না কখনও। তিনি বলেন, 'যৌন কর্মীদের ছেলে মেয়েরা বাজারে পচা-গলা মাছ কিংবা মাংসের মতো নয়। তারা প্রত্যেকে এই সমাজের মানুষ। তারাও সমাজের প্রতিটি কর্মে অংশ নিতে জানে। তবুও পেছনে অনেকেই পতিতার সন্তান বলে বিদ্রুপ করে। আমার তাতে কিছু এসে যায় না।'
advertisement
এখন পতিতাদের নিয়েই রিসার্চ-ওয়ার্ক করছে চলেছেন রতন। ছোটবেলায় বীরভূম জেলা থেকে বৌবাজারের যৌন পল্লীতে কাজ করতে এসেছিলেন তাঁর মা। সেখানে খুব ভাল রোজগার ছিল না। তাই পরে সেখান থেকে সোনাগাছিতে চলে আসেন তিনি। রতনের কথায়, তাঁর মা, তিন ভাই, তিন বোনকে শিক্ষিত করার জন্যই তাঁদের মা এসেছিলেন যৌন পল্লীতে। সেই রোজগারের টাকাতেই রতনের এক মামা আজ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে কর্মরত। তিনি কর্মসূত্রে বর্ধমানে থাকেন।
মায়ের আদেশেই রতন এখন যৌন কর্মীদের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে 'আমরা পদাতিক নামের একটি সংগঠন চালাচ্ছেন। মামা সামাজিক সম্মান হারানোর ভয়ে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন না তাঁর সঙ্গে। রতনের গলায় সুর আছে। মহম্মদ রফির ভক্ত তিনি। গায়কী ভঙ্গি ও গানের গলাও মধুর। সঙ্গে প্রত্যেকটি গান শিক্ত আবেগে। রতন যখন অনেক ছোট তখনই তাঁকে নিয়ে কোনও একজনের মাধ্যমে তাঁর মায়ের ঠাঁই হয়েছিল সোনাগাছিতে। মা অর্চনা দোলুই এখন আর বেঁচে নেই। রতনের জন্ম এই পল্লীতেই। তাঁর কথায়, দুর্বার-এর আন্দোলন পতিতাতদের যৌন কর্মী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দুর্বার তাঁর ও যৌনকর্মীদের জীবনের বাঁচার দিক দেখিয়েছে। বড় মঞ্চে গান গাওয়াই এখন রতনের আরও একটি স্বপ্ন। সেইসঙ্গে 'আমরা পদাতিক ' সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যও রয়েছে।