একাধিক ঘাট, চাতাল, সিঁড়িতে ফাটল ধরে গিয়েছে। বহু জায়গায় লোহার রড বেরিয়ে গেছে। জোয়ারের জলে অনেকেই তা বুঝে উঠতে না পেরে স্নান করতে নেমে দূর্ঘটনায় পড়ছে। বহু জনের পা অবধি কেটে গিয়েছে। ভাল করে ঘাটের সিঁড়ি বুঝতে না পেরে অনেকে পড়ে গিয়েছেন। এমনকি অনেকে গুরুতর আঘাত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি হয়েছে, নিমতলা ঘাটের কাছে। যেখানে সেন্ট্রাল ওয়ারহাউজের গুদাম পর্যন্ত ভাঙনের কবলে পড়েছে। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন নিত্যদিন যারা গঙ্গা ব্যবহার করেন।
advertisement
পুর তথ্য অনুযায়ী, কুমারটুলি ঘাট থেকে নিমতলা ঘাট হয়ে জগন্নাথ ঘাট ক্রমশ পাড় ভাঙছে গঙ্গা। একাধিক ঘাটের শোচনীয় অবস্থা। ধীরে ধীরে গঙ্গার গ্রাসে চলে যাচ্ছে পাড়ের মাটি, কংক্রিটের ঘাট। এই অবস্থায় ভাঙন আটকাতে অবিলম্বে নদীর পাড় বাঁধানো জরুরি। কিন্তু সেই কাজ করবে কে? কলকাতা পুরসভা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছিল চাপানউতোর। শহরের মানুষের বিপদ আঁচ করে কলকাতা পুরসভা এগিয়ে এলেও বাধ সেধেছে জমি, জলের মালিকানা। হুগলি নদীর পাড় সংলগ্ন এই সব এলাকা কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের আওতাভুক্ত। ফলে সেখান থেকে অনুমতি না মিললে কাজে হাত দিতে পারবে না পুরসভা। কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, "আমি নিজে বন্দর চেয়ারম্যান সাথে চলতি সপ্তাহে এই বিষয়ে বৈঠক করব। আমরা তো কাজ করতে চাইছি। পুরসভাকে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ আমরা সমস্যার কথা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি তারা কোনও সু'ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।"
কলকাতায় গঙ্গার পাড় ভাঙার সমস্যা বহু বছরের। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গত ৫-৬ বছর ধরে গঙ্গা ক্রমশ এগিয়ে আসছে পাড়ের দিকে। গঙ্গার পাড় বরাবর মায়ের ঘাট, কুমারটুলি ঘাট, নিমতলা ঘাট, জগন্নাথ ঘাট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তার উপরেই ছিল একাধিক ছোট ছোট ঘাট। মোদি ঘাট, আদ্যশ্রাদ্ধ ঘাট, প্রসন্নকুমার ঠাকুর ঘাট। যা আজ আর নেই। বহুক্ষেত্রে দেখা গেছে সেই ঘাট জবর দখল হয়ে গেছে। ফলে আদৌ সেই ঘাটের অস্তিত্ব কোথায় তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। যে ঘাটগুলি এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার সিংহভাগই ভাঙাচোরা। কোনও কোনও অংশ ভেঙে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছে। ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে পাড়ের ইটের পাঁজর। খাদের কিনারায় চলে এসেছে কয়েকটি গুদামঘর। নিমতলার কাছে বহু জায়গায় গঙ্গার পাড় বালির বস্তা, পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল। যদিও সেই অংশ ভাঙতে ভাঙতে নদীতে মিলিয়ে গেছে। মোদি ঘাট, কাঠগোলা ঘাটের আর কোনও চিহ্ন নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, বহুবার বলেও কোনও লাভ হয়নি।
বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট, কাশী মিত্র ঘাট, আহিরীটোলা, নিমতলা, বাগবাজার ঘাট সহ কলকাতার একাধিক জায়গায় গঙ্গার পাড় বাঁধাই করে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে। সুদৃশ্য আলো, মনোরম গাছের বাহার, বসার জায়গা, সব মিলিয়ে কলকাতায় গঙ্গার পাড় এখন বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু কুমারটুলি ঘাট থেকে নিমতলা ঘাট হয়ে জগন্নাথ ঘাট, এই অংশে কোনও নজর পড়েনি বলেই অভিযোগ। পুরসভা পোর্ট ট্রাস্টের দোহাই দেয়। বন্দর পুরসভার কথা বলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অন্য ঘাটগুলির যদি সংস্কার হতে পারে, তাহলে কেন এখানে নয়?
বছরের পর বছর কেটে গেলেও উন্নয়ন হচ্ছে না এখানে। পাড় ভাঙনের পাশাপাশি উত্তর কলকাতার এই অঞ্চল আবর্জনার আস্তাকুঁড় হয়ে উঠেছে। নদীর পাড়ে রয়েছে একাধিক গুদাম, ওয়্যারহাউস। সেখানকার প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা সরাসরি গিয়ে পড়ছে নদীর বুকে। পোস্তা অঞ্চলে স্থানীয় কারখানার জঞ্জাল নিয়মিত ফেলা হচ্ছে গঙ্গায়। যার জেরে এই কয়েক কিলোমিটার গঙ্গাপাড়ের অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। ওয়্যারহাউস ও সংলগ্ন রেললাইনের পাশের ঝুপড়ি থেকেও গৃহস্থালির আবর্জনা সরাসরি এসে পড়ে নদীতে। নেই ডাস্টবিন, নেই ভ্যাট। ফলে একদিকে যেমন নদী দূষিত হচ্ছে, তেমনই ঘাটগুলিতেও জঞ্জাল পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কলকাতা বন্দর অবশ্য জানাচ্ছে, প্রতিনিয়ত নজর রাখা হয়। যদি কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা ব্যবস্থা নেবে। সাথে সাথে শীঘ্রই কাজ শুরু করে দেব।
ABIR GHOSHAL