সূত্রের খবর, কলকাতা, হাওড়া, মধ্যপ্রদেশ এবং ওড়িশায় গোপাল দলপতির ৬টি সংস্থা ছিল। তার মধ্যে একটি সংস্থার যৌথভাবে ডিরেক্টর ছিলেন গোপাল এবং তাঁর স্ত্রী হৈমন্তী। হৈমন্তীর নামে থাকা একটি সংস্থা ও অপর একটি পার্টনারশিপে থাকা অফিস পরবর্তী কালে বন্ধ হয়ে যায়। গোপালের নিজের নামে থাকা কোম্পানি বন্ধ হয়ে হস্তান্তরিত হয়ে যায় অন্য হাতে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, দুনীর্তির কালো টাকা সাদা করার জন্যেই এই সমস্ত শেল কোম্পানি খুলেছিল গোপাল-হৈমন্তীরা।
advertisement
আরও পড়ুন: ইংরেজি পরীক্ষার 'প্রশ্নপত্র ফাঁস'! এ কী অভিযোগ করলেন সুকান্ত মজুমদার..
সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১৫-১৬ সালে গোপালের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্য়ায়ের। সেই সময় হৈমন্তী ছিলেন উঠতি মডেল। সেভাবে কাজ পাচ্ছিলেন না। এদিকে, তাপস মণ্ডল, কুন্তল ঘোষের মতো একাধিক প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল গোপালের। সেই সুবাদে গোপাল ভাবেন তিনি হৈমন্তীকে কাজ পাইয়ে দেবেন। সেই মতো হৈমন্তীকে নিয়ে তাপস মণ্ডলের সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছিলেন গোপাল। কুন্তলের সঙ্গেও হৈমন্তীর পরিচয় হয় তাঁর মডেলিং পেশার জন্য।
সিবিআই সূত্রে খবর, নিয়োগ দুর্নীতি চক্রে গোপাল যতই জড়িয়ে যেতে থাকেন, ততই জড়াতে থাকেন হৈমন্তী। স্বামীর কাজকর্মের সম্পর্কে নাকি তিনি ভালই ওয়াকিবহাল ছিলেন। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, গোপাল-হৈমন্তীদের শেল কোম্পানিগুলির মাধ্যমেই চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া কালো টাকা সাদা করা হত। তবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে সিবিআই। সূত্রের খবর, সিনেমাতে প্রযোজক হয়ে নাকি টাকাও ঢালতে চেয়েছিলেন এই হৈমন্তী। কিন্তু, সামান্য মডেল হয়ে, কোথা থেকে পেতেন এত টাকা, সেখানেই দানা বাঁধছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: ২৩ একর জমির মালিক গোপাল! খুলতে চেয়েছিলেন বি এড কলেজও, কোথা থেকে আসত এত টাকা?
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া যুব তৃণমূলনেতা কুন্তল দাবি করেছেন, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া সব টাকাই গিয়েছে গোপাল দলপতির কাছে। জানা গিয়েছে, গোপালের স্ত্রী হৈমন্তীর মুম্বইয়ের সংস্থার অ্যাকাউন্টয়ে ৬৮ লক্ষ টাকা গিয়েছিল সে সময়। আরেকবার হৈমন্তী কাছে গিয়েছিল ১২ লক্ষ টাকা।
অর্পিতারই মতো হৈমন্তীও একসময় ছিলেন বেহালার বাসিন্দা। বেহালার রাজা রাম মোহন রায় রোডে গোপাল-হৈমন্তী একসঙ্গে থাকতেন দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু, জানুয়ারি মাস থেকে আসছিলেন না কেউই। প্রতিবেশী অঙ্কুর দে জানান, "হৈমন্তী মাস গেলে মেইনটেনেন্স খরচ হিসাবে টাকা দিয়ে যেতেন। হৈমন্তী ও গোপাল মাঝেমধ্যে আসতেন। বেশি কারও সঙ্গে মিশতেন না।"
হৈমন্তী সঙ্গে গোপালের এক সঙ্গে থাকার কথা সবাই জানত। ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বলছেন, "হৈমন্তী বেশী মিশতেন না। একদিন নাম বলেছিলেন।" মোবাইলে ছবি দেখালে হৈমন্তীকে চিনতেও পারেন ওই বৃদ্ধা।
হৈমন্তীদের ওই ফ্ল্যাটের চিলেকোঠার বারান্দায় নাটকের একটি স্ক্রিপ্টও মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে উত্তম কুমার সংক্রান্ত একটি নাটকে নার্সের ভূমিকায় ছিলেন হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সেই স্ক্রিপ্টএর পিছনে পাতায় নার্সের নাম হিসেবে লেখা হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। আরও একটি স্ক্রিপ্ট পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই ফ্ল্যাটের চিলেকোঠায়। বিপাশা-নন্দিতা সংলাপ। সেখানে হৈমন্তীর নাম লেখা একটি খামে। হৈমন্তীর একাধিক সংলাপের স্ক্রিপ্ট রাজা রাম মোহন রায় রোডের ফ্ল্যাটে আবর্জনার স্তূপ থেকে মিলেছে। মিলেছে হৈমন্তী গাঙ্গুলীর নামে বিয়ের নিমন্ত্রণের কার্ড!
সব মিলিয়ে বলা যায়, বেহালাই কি তবে নিয়োগ দুর্নীতির 'আখড়া'? পার্থ-অর্পিতার পরে এবার গোপাল-হৈমন্তী! তদন্তে সিবিআই।
ARPITA HAZRA