৩১ মার্চ, ২০১৬
ঘটনার সূত্রপাত বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ। রোজকার মতোই ভিড়ে ঠাসা মধ্য কলকাতার বড়বাজারের পোস্তা এলাকা। সেইসময় গণেশ টকিজের কাছে হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুলের একাংশ। ধ্বসংস্তূপের তলায় তখন বহু মানুষ চাপা পড়ে। পুলিশ-দমকল-বিপর্যয় মোকাবিলা দলে কাজ না হওয়ায়, তড়িঘড়ি ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর। সেনার সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। গ্যাসকাটার দিয়ে কংক্রিটের চাঙড় ও লোহার বিম কেটে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। সন্ধে গড়াতেই দুর্ঘটনাস্থলে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালীন ঠায় বসে থাকেন। শেষমেষ উড়ালপুল চাপা পড়ে ২৭ জন প্রাণ হারান। আহতের সংখ্যা ছিল ৮০-র বেশি।
advertisement
উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর কারণ খতিয়ে দেখতে রাইটস ও খড়গপুর আইআইটি-কে দায়িত্ব দেয় রাজ্য সরকার। ১০ অগাস্ট রাজ্যকে দেওয়া রাইটস ও খড়গপুর আইআইটি-র রিপোর্টে বেরিয়ে আসে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
- উড়ালপুলের নকশায় ত্রুটি রয়েছে
- তার কাঠামো তৈরিতে গাফিলতি রয়েছে
- উড়ালপুলের ঝালাইয়ে গোলমাল রয়েছে
- ব্যবহার করা হয় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী
- তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করা হয়
এরপরই প্রশ্ন ওঠে পোস্তার এই অর্ধভগ্ন উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী? তার কোনও উল্লেখ ছিল না রিপোর্টে। রাজ্য তাই দুই সংস্থার কাছে রিপোর্টের আরও ব্যাখ্যা চায়। সাম্প্রতিক রিপোর্টে দুই সংস্থাই গোটা উড়ালপুলটিকে ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। ভেঙে ফেলার পিছনে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে তা হল, উড়ালপুলের যে অংশ ভেঙে গিয়েছে, তার সঙ্গে বাকি অংশও যান চলাচলের উপযুক্ত নয়। ফ্লাইওভার ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হোক। কিন্তু, আদৌ তা কি সম্ভব? ২০০৮ সালে, বাম আমলে কেন্দ্রীয় সরকারের জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের অধীনে ওই উড়ালপুলের কাজ শুরু হয়। এখন তা ভেঙে ফেলতে হলে শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে রাজ্যকে।
একনজরে পোস্তা উড়ালপুল
- ২০০৯ সালে উড়ালপুল নির্মাণ করতে শুরু করে আইভিআরসিএল
- দৈর্ঘ্যে তা মোট ২.২ কিলোমিটার
- মোট ১৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প
- তার ৬০% কাজ হয়ে যায়
- বাকি ৪০% কাজ শেষের আগেই তা ভেঙে পড়ে
রাজ্যের আশঙ্কা, উড়ালপুল ভেঙে ফেললে আশপাশের বাড়িগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেকারণেই বিষয়টি আরও একবার খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে খড়গপুর আইআইটি ও রাইটসকে। সেই চূড়ান্ত রিপোর্টেই নির্ভর করছে পোস্তা উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ ৷