আপাতভাবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন, এটা স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক ঘটনাই। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে রাজনৈতিক রঙ লেগে গিয়েছে গতকাল থেকেই। তার কারণ মুকুল পত্নী গত ১১ মে থেকে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও এত দিন কোনও বিজেপি নেতা হাসপাতালে যাননি। গতকাল মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হাসপাতাল ছাড়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালে রাখেন দিলীপ ঘোষ। অর্থাৎ বিজেপির ঘুম ভাঙিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটা বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না।
advertisement
সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন মুকুল রায়। করোনামুক্ত হলেও এখনও তিনি পুরোপুরি সক্রিয় নন। অন্য দিকে মুকুল জায়া কৃষ্ণা দেবীও করোনামুক্ত কিন্তু নানা শারীরিক জটিলতার কারণে তিনি একমো সাপোর্টে রয়েছেন। তাঁর খোঁজ নিতেই বুধবার সন্ধ্যায় ইএম বাইপাসের ধারে হাসপাতালে গিয়ে হাজির হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময় হাসপাতালে ছিলেন শুভ্রাংশু রায়। অভিষেক-শুভ্রাংশু সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন। স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই অভিষেক শুভ্রাংশুকে আশ্বস্ত করে বলেন, পাশে আছি।
এই বার্তা নিয়েই জল্পনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। জল্পনার অবশ্য আরও একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে দিন কয়েক আগেই বেসুরো বেজেছিলেন শুভ্রাংশু রায়। ফেসবুকে তিনি লেখেন জনগণের রায়ে জয়ী দলের সমালোচনা না করে আত্মসমালোচনা করা জরুরি। অর্থাৎ প্রকাশ্যে বিজেপির বিরোধিতাই করেছিলেন শুভ্রাংশু।
তৃণমূলের সঙ্গে মুকুল রায়ের অহিনকুল সম্পর্ক সুবিদিত। কিন্তু ভোটের প্রচার এর সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে মুখ খুলে মুকুল রায়ের প্রশংসা করেছিলেন। আর ভোট মিটতে শুভ্রাংশু এই ঘুরিয়ে নিজের দলের নিন্দে করা, অনেকেই একই বিন্দুতে রেখে এই ঘটনাকে পড়তে চাইছেন।
এখানে রাজনৈতিক সমীকরণ থাক বা না থাক, নজর কাড়ছে ঘটনা পরম্পরা। বিজেপি যে এ বিষয়ে প্রথমটায় গা করেনি তা বোঝাচ্ছে মুকুল জায়ার হাসপাতালে ভর্তির তারিখ। আর অভিষেকের তৎপরতায় যে দিলীপ ঘোষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, গোটা দলটাই বিষয়টায় সৌজন্য ও শিষ্টাচার বজায় রাখতে নেমে পড়েছে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি টিভি ইন্টারভিউতে বারংবার তাঁর নাম নিয়ে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এবার গোটা বিজেপিই কার্যত তাঁকে অনুসরকণ করল। কী বলবেন অভিষেক?
