কাট। ২ মে। বিশ্বের 'সর্ববৃহৎ' দলের সঙ্গে প্রায় 'ঢাল-তরোয়ার'হীন হয়ে লড়াই করে রেকর্ড জয় ছিনিয়ে আনলেন তৃণমূলের 'দিদি'। ১১ মার্চ নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় পা'য়ে আঘাত পাওয়ার পর থেকে গোটা নির্বাচন পর্ব হুইল চেয়ারেই কাটালেন মমতা। 'নিজের' পায়ে দাঁড়ালেন আজ, যখন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদের আকাশভাঙা সফর আর 'নিশ্চিত' 'দোশো পার'কে ধুলোয় মিশিয়ে ফের নবান্নে যাওয়া নিশ্চিত করলেন তিনি। শুধু নিশ্চিত করলেন না, বলা ভালো দেখিয়ে দিলেন, হ্যাঁ, 'বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।' সারা দিন বাড়িবন্দি তিনি। কালীঘাটের বাড়িতেই 'স্ট্রংরুম'। সেখান থেকেই গোটা রাজ্যের খবর আসছে তাঁর কাছে। আর স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, 'অপ্রত্যাশিত' ফল করতে চলেছে তৃণমূল। বাড়ির বাইরে তখন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের থিকথিকে ভিড়। বেরোলেন সেই বিকেলে। নিজের না হলেও রাজ্যজয় প্রবলভাবে নিশ্চিত তখন। মমতার হাত ধরে এলেন সেই আজানিয়া। ছোট্ট মঞ্চে উঠে মমতা যখন সকলকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন, পাশে সেই মিষ্টি মুখ। আর মমতার ভিকট্রি সাইন দেখানোর সময়ও তৃণমূলের কোন দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নন, আজানিয়াই মমতার দোসর, ভরসার সঙ্গী। হাতের ছোট্ট দুটো আঙুলও তখন যেন বলতে চাইছে, 'আমরা জিতে গেছি!' ভারতের আগামী রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের গতিপথ বদলে দিতে পারে বাংলার এই নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে জয়ের মঞ্চও যেন আজানিয়ার শৈশবের ছ্বটায় হয়ে উঠল ভীষণ অন্যরকম, আত্মিক, স্নেহ-ভালোবাসায় মোড়া।
advertisement
গোটা নির্বাচন পর্বে বিজেপির হাতে অন্যতম 'ইস্যু' ছিল 'তোলবাজ ভাইপো'। যাঁকে নিয়ে এই আক্রমণ, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ছিলেন 'মেঘে ঢাকা তারা'। জয়ের ট্রেন্ড বুঝেই মমতার কাছে পৌঁছে যান অভিষেক। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় মমতা-অভিষেকের সংক্ষিপ্ত আলোচনাও ধরা পড়ে। কিন্তু ওইটুকুই, বাবা নয়, মমতার আজ সর্বক্ষণের সঙ্গী ছোট্ট আজানিয়া'ই। তৃণমূলের অন্দরে অনেকে আনন্দের সুরে বলছেন, 'দিদি ধার্মিক মানুষ। প্রার্থীতালিকাও ঘোষণা করেন 'সময়' দেখে। সেই দিদির কোন লাকি চার্ম থাকবে না, তা কি হয়? আজানিয়াই সম্ভবত দিদির লাকি চার্ম হয়ে উঠেছে।' হাল্কা চালের কথা। তবে, একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যায় না। একটু বড় হওয়ার পর থেকে বাড়ির পুজোতেও মমতার সঙ্গে-সঙ্গে আজানিয়ার ঘুরে বেড়ানোর ছবি বহুবার সামনে এসেছে। কিন্তু বঙ্গ ভোটের আবহে প্রবল রাজনৈতিক 'পরিসরেও' যেভাবে আজানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন মমতা, তা মুগ্ধ করছে অনেককেই। আর একরত্তির মিষ্টি স্বভাবে সেই মুগ্ধতা বাড়ছে কয়েকগুণ।
রাজ্যে এই মুহূর্তের প্রধান রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা আজানিয়ায়। এবারের নির্বাচনের একদম শেষ পর্বে এসে ''নিউজ 18 বাংলা''-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হয়, 'টেলিভিশনের পর্দা খুললেই দেখা যাচ্ছে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এমনকী বিজেপির ছোট বড় নেতারাও আপনাকে তোলাবাজ, চোর বলে আক্রমণ শানাচ্ছে। এতে প্রভাব পড়েছে না আপনার সন্তানদের উপর? কী বোঝান ওদের?' সুবক্তা অভিষেকের জবাব ছিল, 'আজানিয়া এই বিষয়গুলির মুখে পড়ছে এবং এই বয়সেই সে একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছে কেন এমনটা হচ্ছে। আমি তাঁকে বুঝিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা এবং প্রধানমন্ত্রীর আসনের গুরুত্ব। বুঝিয়েছি এই আসনটিকে সবসময় সম্মান করতে হয়।' এমনকী ছোট্ট মেয়েকে 'বাবা' এও বলে সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে তাকেও এই ধরনের মন্তব্যের মুখে পড়তে হতে পারে এবং তার জন্য এখন থেকেই তাকে প্রস্তুত হতে হবে। ছবি বলছে 'প্রস্তুত' হচ্ছেন আজানিয়া। রাজনৈতিক জ্ঞান-বোধ এসব সম্পূর্ণরূপে তৈরি হওয়ার বয়স এখন তার নয়। কিন্তু জয়ের আনন্দ, রাজনীতির জৌলুস যেন হাতে-কলমে চাক্ষুষ করছে ছোট্ট মেয়েটা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে সেও হয়ে উঠছে 'ভিকট্রি'র অংশ। কত জয় এল, কত পরাজয়, কত ছবি তৈরি হল, কত ছবি তৈরি হওয়ার সুযোগ মাঠে মারা গেল। তবু, ২ মে, বাংলার এক ঐতিহাসিক দিনে কালীঘাটের রাজনৈতিক মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন একজন নয়, দুজন 'শো স্টপার'। তৈরি হল ভালোবাসায় মোড়া এক সোনালি ফ্রেম...