পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডের তদন্তে তেড়েফুঁড়ে আসরে নেমেছে সিবিআই। মোটা টাকার বিনিময়ে ভুয়ো নথির মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। সেই সূত্র ধরেই শিলিগুড়ি, গ্যাংটক-সহ একাধিক জায়গায় একযোগে তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই-এর টিম। গ্রেফতার করা হয় গ্যাংটকের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট গৌতমকুমার সাহাকে। তারপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই উঠে আসে পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডের একাধিক এজেন্টের নাম। এরই মধ্যে ছিল শিলিগুড়ি সংলগ্ন নকশালবাড়ির বরুণ সিং রাঠোরের নামও। গত শনিবার সকাল থেকে ওই বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের টিম। চলে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ৷
advertisement
জানা গিয়েছে, মূলত নেপাল-সহ অন্য দেশের নাগরিকদের ভুয়ো নথি বানিয়ে তা দিয়ে বানানো হত ভারতের পাসপোর্ট৷ আর সেই ভুয়ো নথি আধিকারিকদের একাংশের হাতে পৌঁছে দিত এই বরুণরা-ই৷ চলত বিশাল টাকার লেনদেন৷
সূত্রের খবর, গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে জাল নথি ব্যবহার করে মোট ৪৬টি পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্র থেকে৷ গ্যাংটকে কলকাতার আঞ্চলিক অফিসের যাঁরা এই চক্রে যুক্ত, তাঁদের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে৷ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত বরুণ রাঠৌর ও সচিন রাই-ই তাঁদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল সমস্ত ভুয়ো নথি৷ ২৭ সেপ্টেম্বর গ্যাংটকের পাসপোর্ট অফিসের আধিকারিক সচিন কুমারকে ৪টি পাসপোর্ট করার অনুরোধ করেন এজেন্ট সচিন রাই। ওই দিন ১৪টি পাসপোর্টের জন্য আবেদন আসে এজেন্ট বরুণের কাছ থেকে।
৩ অক্টোবর আরও ৯টি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয় সচিন কুমারের কাছে৷ ৩ অক্টোবর কলকাতা আঞ্চলিক দফতরের একজন সিনিয়ন অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার সচিন কুমারকে জানান, ১৪টি পাসপোর্ট প্রস্তুত। এবার টাকা পাঠাতে বলা হয় সচিন কুমারকে।
কলকাতার আঞ্চলিক অফিসের এক সিনিয়ন অ্যাসিস্ট্যান্টের গাড়ির চালক বাবলু দাসের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলা হয়। সচিন কুমার এরপর বাবলু দাসের অ্যাকাউন্ট নম্বর সচিন রাই ও বরুণকে দিয়ে টাকা পাঠাতে বলেন৷ ৬ অক্টোবর বরুণ ৭৫ হাজার ও সচিন রাই ২৫ হাজার টাকা ওই চালকের অ্যাকাউন্ট পাঠিয়ে দেন৷ ৮ অক্টোবর শিলিগুড়িতে আরও ১ লক্ষ টাকা নগদ হস্তান্তর হয়
৯ অক্টোবর কলকাতার সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট (যিনি সচিন কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করেছিলেন) গাড়ির চালককে নির্দেশ দেন ওই ১ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে এনে তাঁকে দিতে৷ ১০ অক্টোবর সচিন কুমারকে জানানো হয় ৩৩টি পাসপোর্টের ক্লিয়ারেন্স হয়ে গেছে। গৌতম কুমার সাহা আরও ১৩টি করেছেন। বাকি টাকা চাওয়া হয় সচিন কুমারের কাছে।
সিবিআই সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, এই বরুণ সিং রাঠোর আগে স্থানীয় একটি সরকারি অফিসে কাজ করতেন। সেখানেও অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপরই ওই ব্যক্তি নকল পাসপোর্ট তৈরির কারবারে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। শনিবার তল্লাশিতে বরুণের বাড়ি ও তার পাশের ফাঁকা জমি থেকে উদ্ধার হয় অসংখ্য স্ট্যাম্প, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড।